সিএনএনের বিশ্লেষণ

ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাত: কারও প্রকৃত বিজয় নেই, শুধু দাবির প্রতিযোগিতা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১২ ১৫:৪৩:৩৮
ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাত: কারও প্রকৃত বিজয় নেই, শুধু দাবির প্রতিযোগিতা

সত্য নিউজ: একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএনের এক প্রতিবেদনে সিএনএনের প্রধান বৈশ্বিক বিষয়াবলি প্রতিবেদক ম্যাথিউ চ্যান্স বলেন, “বিজয়ের হাজারো পিতা থাকে, কিন্তু পরাজয় হয় এতিম।” এই বহুল পরিচিত প্রবাদের বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া স্বল্পমেয়াদি কিন্তু তীব্র সংঘাতে।

সংঘাতের সমাপ্তিতে উভয় পক্ষই নিজেদের বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। ভারতের জাতীয় টেলিভিশনগুলোতে যখন “পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করেছে” এই শিরোনামে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছিল, তখন পাকিস্তানের রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে বিজয় উদযাপন চলছিল।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, “কাশ্মীরে পর্যটকদের হত্যার জবাবে ভারতের সামরিক পদক্ষেপ সন্ত্রাসীদের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা।” অপরদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দাবি করেন, “কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের সাহসী সেনারা ভারতের কামানগুলোকে নিস্তব্ধ করে দিয়েছে, যা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”

তবে বাস্তবতা হলো—এই সংঘাতে উভয় পক্ষই বড় রকমের সামরিক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে তিনটি অত্যাধুনিক ফ্রেঞ্চ নির্মিত রাফাল জেট। এটি যদি সত্য হয়, তবে তা ভারতীয় বিমানবাহিনীর জন্য একটি বড় ধরনের অপমান।

সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের সীমান্তবর্তী দুই রাজ্যে ওই সময় দুটি যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ে, এবং একটি ফ্রেঞ্চ গোয়েন্দা সূত্র সিএনএন-কে নিশ্চিত করে যে অন্তত একটি রাফাল পাকিস্তান ভূপাতিত করেছে। তবে ভারত এখনো পর্যন্ত একটি বিমান হারানোর কথাও স্বীকার করেনি।

অন্যদিকে ভারতীয় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করেছেন, যাতে পাকিস্তানের একাধিক সামরিক ঘাঁটি ও রাডার স্টেশনে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখা গেছে, যা ভারতীয় বিমান হামলার ফল বলে দাবি করা হয়েছে।

রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা যার যার মতো করে ঘটনা ব্যাখ্যা করছেন, কিন্তু কোনো পক্ষই প্রকৃত বিজয় দাবি করার মতো অবস্থানে নেই। এমনকি যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব নিয়েও চলছে পাল্টাপাল্টি দাবি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে আচমকা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, তিনি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করেছেন।

পাকিস্তান প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার প্রশংসা করলেও ভারত বিষয়টি ছোট করে দেখাতে চায়। নয়াদিল্লি দাবি করছে, এই যুদ্ধবিরতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ভারতের জাতীয় গৌরব ও কাশ্মীর নীতির বিষয়টি উল্লেখযোগ্য, কারণ ভারত বরাবরই কাশ্মীর ইস্যুতে বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

তবে ট্রাম্প এরইমধ্যে কাশ্মীর ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন—যা পাকিস্তান স্বাগত জানালেও ভারত উপেক্ষা করেছে। এতে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে অর্জিত এই যুদ্ধবিরতি মূলত একটি ‘তাৎক্ষণিক সমাধান’ বা ‘বন্ধুত্বপূর্ণ প্রলেপ’, যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কাশ্মীর সংকটের গভীর সমস্যাগুলো সমাধানে সক্ষম নয়।

এই সংঘাতের পরে উভয় দেশের বিজয়ের দাবি যতটা উচ্চকণ্ঠ, বাস্তবতায় তা ততটাই ফাঁপা। এবং কাশ্মীর ইস্যু যে ভবিষ্যতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে, তা নিঃসন্দেহে অনুমেয়।

সুত্রঃ সিএনএন থেকে অনুদিত ও পরিমার্জিত

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

লেনদেনের শীর্ষ দশে যেসব শেয়ার

লেনদেনের শীর্ষ দশে যেসব শেয়ার

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (২১ জুলাই) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ছিল কিছুটা চাঙা। এই দিনে লেনদেনের... বিস্তারিত