নেতানিয়াহুর শারীরিক অবনতি: রাজনীতি, বিচার ও নেতৃত্বে নতুন চাপ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২১ ১০:০৯:২১
নেতানিয়াহুর শারীরিক অবনতি: রাজনীতি, বিচার ও নেতৃত্বে নতুন চাপ

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ও দীর্ঘ সময়ের আলোচিত রাজনীতিক বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছেন। এবার তার অসুস্থতার পেছনে রয়েছে খাবারে বিষক্রিয়ার প্রভাব। গত রোববার (২০ জুলাই) তার দপ্তর জানায়, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি অন্তত তিন দিন বাসায় থেকেই সরকারি কাজ পরিচালনা করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসায় নিয়োজিত হাদাসা আইন কেরেম হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ মেডিসিন বিভাগের পরিচালক ডা. আলোন হার্শকো জানান, নষ্ট খাবার খাওয়ার ফলে নেতানিয়াহুর অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি হয়েছে এবং তিনি পানিশূন্যতায় ভুগছেন। তাকে স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে আশ্বস্ত করেছেন চিকিৎসকরা।

রোববার সকালেই নেতানিয়াহুর অনুপস্থিতিতে নিয়মিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে তার না থাকার বিষয়টি প্রথম নজরে আসে। এরপরই তার অসুস্থতার খবর সামনে আসে। প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শনিবার রাতে তিনি হঠাৎ করে অসুস্থতা অনুভব করেন এবং সে সময়ই ডাক্তার তাকে বাসায় গিয়ে পরীক্ষা করেন।

এই অবস্থার কারণে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলার শুনানি সোমবার ও মঙ্গলবারের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। আদালতের গ্রীষ্মকালীন ছুটির কারণে আগামী ৫ সেপ্টেম্বরের আগে নতুন করে কোনো শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

৭৫ বছর বয়সী নেতানিয়াহু গত কয়েক বছরে একাধিক শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হয়েছেন। ২০২৩ সালে তার হৃদপিণ্ডে সমস্যা ধরা পড়লে পেসমেকার স্থাপন করা হয়। একই বছর তিনি পানিশূন্যতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন, যা হৃদস্পন্দনজনিত সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। চলতি বছরের মার্চ মাসে তার হার্নিয়া অস্ত্রোপচার এবং ডিসেম্বরে প্রস্টেট অপসারণের চিকিৎসা করা হয়। মার্চেই তিনি ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে কয়েকদিন রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম থেকে বিরত ছিলেন।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক


পুতিন জানালেন, কেন তিনি এখনো ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব গ্রহণ করেননি

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৪ ০৯:২৩:২৫
পুতিন জানালেন, কেন তিনি এখনো ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব গ্রহণ করেননি
ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন যদি শান্তিচুক্তি করতে রাজি না হয়, তবে রাশিয়া সামরিকভাবেই তার সব লক্ষ্য পূরণ করবে। তবে আলোচনার সম্ভাবনা তিনি পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই তথ্য জানিয়েছে।

চীনের এক সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার পর পুতিন বলেন, “যদি ইউক্রেন কোনো সমঝোতায় না আসে, তাহলে রাশিয়া সামরিকভাবেই তার লক্ষ্য পূরণ করবে।” এই বক্তব্যকে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী বিশ্বব্যবস্থার প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার পুতিনকে যুদ্ধ থামাতে রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন। পুতিন তার এই “আন্তরিক প্রচেষ্টা”র প্রশংসা করলেও এখনো তা মানেননি।

অন্যদিকে, ইউক্রেন সফরে থাকা যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বিবিসিকে বলেন, অন্তত ট্রাম্প পুতিনকে আলোচনার টেবিলে এনেছেন। প্রয়োজনে যুক্তরাজ্য ও তার মিত্ররা রাশিয়ার ওপর বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে এবং ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দেবে।

আলোচনা সম্ভব, তবে শর্ত আছে

গত মাসে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। ওই বৈঠকে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাশিয়ার বিচ্ছিন্নতা ভাঙার চেষ্টা করেন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে পুতিনের বৈঠকেরও উদ্যোগ নেন। এ বিষয়ে পুতিন বলেন, “আমি কখনোই এমন বৈঠকের সম্ভাবনা বাতিল করিনি। তবে প্রশ্ন হলো, এর কোনো ফল আসবে কি না। দেখা যাক।” তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, জেলেনস্কি চাইলে মস্কোতে আসতে পারেন। যদিও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটিকে সঙ্গে সঙ্গে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফা নিষেধাজ্ঞা ভারতকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে—ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “পুতিন ভালোভাবেই জানেন তিনি কোথায় অবস্থান করছেন। আমার আলাদা কোনো বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি জানেন আমি কোথায় আছি, এখন তার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

বেইজিংয়ে রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, “টানেলের শেষে সামান্য আলো দেখা যাচ্ছে। সাধারণ জ্ঞান কাজ করলে সমাধান সম্ভব। না হলে সামরিকভাবেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে হবে।” তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণেই থাকবে এবং ভবিষ্যতে কোনো শান্তিচুক্তি হলেও পশ্চিমা নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দনবাসে প্রযোজ্য হবে না।


বিধ্বস্ত হচ্ছে একের পর এক মহল্লা, গাজায় এবার মানবিক সংকট চরমে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৪ ০৮:৫১:৪০
বিধ্বস্ত হচ্ছে একের পর এক মহল্লা, গাজায় এবার মানবিক সংকট চরমে
ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের অব্যাহত বোমাবর্ষণে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় একদিনে অন্তত ৭৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। হামাসের দাবি, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে পুরো পরিবারকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে হত্যা করছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা তীব্র হামলা চালায়। এই ঘটনাকে হামাস ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি সাবরিন আল-মাবহুহ আল জাজিরাকে জানান, “আমার ভাইকে তার ঘরেই হত্যা করা হয়েছে। স্ত্রী-সন্তানসহ তার পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।” শেখ রাদওয়ান এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষজনও এ হামলার শিকার হন। একটি স্কুলের তাঁবুতে গ্রেনেড হামলার ফলে আগুন ধরে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা জাকিয়া সামি বলেন, “যদি গাজা সিটিতে আগ্রাসন বন্ধ না হয়, আমরা সবাই মরব। যারা শুধু দেখছে, কিছু করছে না—আমরা তাদের ক্ষমা করব না।”

বিধ্বস্ত হচ্ছে পুরো মহল্লা, বাড়ছে মানবিক সংকট

গাজার গণমাধ্যম দপ্তর জানায়, গত তিন সপ্তাহে ইসরায়েল অন্তত ১০০ বার রোবট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো আবাসিক ব্লক ও মহল্লা ধ্বংস করেছে। ১৩ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অভিযানে গাজা সিটিতেই মারা গেছেন প্রায় ১ হাজার ১০০ মানুষ। আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ সরেজমিনে জানান, “পরিস্থিতি প্রলয়ংকরী। পুরো মহল্লা একের পর এক ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মানুষ কয়েক দশকে যা গড়ে তুলেছিল, সবকিছু হারাচ্ছে। এটি এক দুঃস্বপ্ন।”

মানবিক পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অবরোধের কারণে খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশ বন্ধ থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় এক শিশুসহ ছয়জন অনাহারে মারা গেছে। চলমান অবরোধকালে ক্ষুধাজনিত কারণে এখন পর্যন্ত ৩৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১৩১ জন শিশু। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, ইসরায়েলের অভিযানে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

শিশুদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাঁচ বছরের নিচে থাকা ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে। বর্তমানে মোট ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু মারাত্মক খাদ্যসংকটে ভুগছে। খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি গত আগস্টেই নিশ্চিত করেছে যে উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে, যা দ্রুত দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ছে।


বেইজিং সফরে কিম জং-উন, আলোচনায় তার মেয়ে জু আয়ে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ২১:৪৮:৪৪
বেইজিং সফরে কিম জং-উন, আলোচনায় তার মেয়ে জু আয়ে
ছবি: সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন বর্তমানে বেইজিং সফরে আছেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য চীন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক হলেও, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, কিমের এই সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো, তার মেয়ে জু আয়েকে সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে পরিচয় করানো।

২০২২ সালে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন প্যারেডে বাবার সঙ্গে প্রকাশ্যে আসার পর জু আয়ে সারা বিশ্বের নজর কাড়েন। সেসময় থেকেই জল্পনা-কল্পনা শুরু হয় যে, কিম পরিবারের পরবর্তী নেতা হতে যাচ্ছেন জু আয়ে।

দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, বেইজিংয়ে কিমের পেছনে ট্রেন থেকে যে কিশোরীকে নামতে দেখা গেছে, সে তার মেয়ে জু আয়ে। এই গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সফরে বাবার সফরসঙ্গী হওয়ায় জু আয়ে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছেন।

কেন জু আয়েকে উত্তরসূরি ভাবা হচ্ছে?জু আয়ের বয়স আনুমানিক ১২ বছর। সে কিমের একমাত্র সন্তান, যাকে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে দেখা গেছে। গণমাধ্যমে তাকে প্রায়শই ‘প্রিয় কন্যা’ বলে ডাকা হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্লেষকদের মতে, কিম তার মেয়েকে উত্তরসূরি হিসেবে গড়ে তুলছেন। তারা মনে করেন, এত বড় আন্তর্জাতিক সমাবেশে যেখানে বিশ্বের বড় বড় নেতারা উপস্থিত থাকবেন, সেখানে জু আয়েকে সবার সামনে পরিচিত করানোর বিশেষ কারণ আছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্টিমসন সেন্টারের উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্ববিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল ম্যাডেন বলেন, এই মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার দৌড়ে জু আয়ে সবচেয়ে এগিয়ে। তিনি আরও বলেন, জু আয়ে এখন প্রটোকল সংক্রান্ত বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করছে, যা তাকে ভবিষ্যতে উত্তর কোরিয়ার নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে।

সিউলভিত্তিক ইউনিভার্সিটি অব নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াং মুজিন বলেন, কিম সম্ভবত তার মেয়েকে চীনের নেতৃত্বের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, কারণ চীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র।

সিউলভিত্তিক সেজং ইনস্টিটিউটের উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ চোং সিয়ং-চ্যাং বলেন, বেইজিং রেলওয়ে স্টেশনের দৃশ্য দেখে বোঝা গেছে, জু আয়ে কেবল দেশেই নয়, বিদেশেও উত্তর কোরিয়ার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।

সূত্র : রয়টার্স


আফগানিস্তানে নতুন আতঙ্ক: বাড়ি থেকেও আশ্রয়হীন হাজারো পরিবার

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৯:৫৭:১২
আফগানিস্তানে নতুন আতঙ্ক: বাড়ি থেকেও আশ্রয়হীন হাজারো পরিবার
আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর চলছে উদ্ধার তৎপরতা। ছবি : সংগৃহীত

পূর্বাঞ্চলীয় আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর অনেক বাসিন্দা গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। খাবারের সংকট এবং আফটার শকের আতঙ্কে তারা নিজেদের ঘরে ফিরতে সাহস পাচ্ছেন না। তাদের এই দুর্দশার খবর প্রকাশ করেছে আরব নিউজ।

গত রোববার পাকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত আফগানিস্তানের একটি পাহাড়বেষ্টিত দুর্গম এলাকায় ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, যাতে ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ভূমিকম্পের পর থেকে এখন পর্যন্ত ছয়টি বড় ধরনের আফটার শক অনুভূত হয়েছে।

সবুজ পাহাড়ের ঢাল এখন সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ভূমিকম্পের কয়েক দিন পর এখনো অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। এদিকে, যেসব বাড়ি আংশিক ধ্বংস হয়েছে, সেগুলোর বাসিন্দারা মেরামতের সাহস পাচ্ছে না, কারণ তারা আশঙ্কা করছে যেকোনো মুহূর্তে এগুলো পুরোপুরি ধসে পড়তে পারে।

নানগাহার প্রদেশের দার-আই-নুরের বাসিন্দা ইমরান মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ভূমিকম্পের পর থেকে তিনি তার পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে একটি প্লাস্টিকের মাদুরে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমাদের এখন থাকার কোনো জায়গা নেই, এজন্য সবার কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।”

যাদের সামর্থ্য ছিল, তারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। আর যাদের সেই সুযোগ হয়নি, তারা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে যা কিছু পেয়েছেন, তা দিয়েই অস্থায়ী আশ্রয় বানিয়েছেন। নানগারহার প্রদেশের রাজধানী জালালাবাদে তেমন কোনো ক্ষতি না হলেও সেখানকার বাসিন্দারা আফটার শকের আতঙ্কে আছেন। ৪২ বছর বয়সী চিকিৎসক ফেরেশতা বলেন, “প্রতিবার যখন আমি পা ফেলি, মনে হয় মাটি কেঁপে উঠছে। আমরা ঘরের ভেতরে থাকি না, বাগানেই ঘুমাই, সারাক্ষণ মনে হয় আরেকটা ভূমিকম্প হবে।”

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৪ হাজার তাঁবু বিতরণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এএফপিকে জানিয়েছে, ৭০০টি তাঁবু এখনও বিতরণ করা সম্ভব হয়নি, কারণ অনেক এলাকায় পৌঁছানো যাচ্ছে না।


চায়ে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে একই প্রেমিকের সঙ্গে দুই গৃহবধূর পলায়ন

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৮:৫৫:৪০
চায়ে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে একই প্রেমিকের সঙ্গে দুই গৃহবধূর পলায়ন
নাজমা বেগম ও কুলচান বেগম। ছবি : সংগৃহীত

একই পরিবারের দুই গৃহবধূ এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটিয়েছেন। শ্বশুর-শাশুড়ি ও পরিবারের তিন মেয়েকে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে দুজনেই মিলে পালিয়ে যান একই পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে। তবে স্বপ্নের ঘর বাঁধার আগেই পুলিশ তাদের আটক করেছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তর ২৪ পরগনার বাগদায়।

পুলিশ জানিয়েছে, দুই গৃহবধূকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেছেন সেই প্রেমিক। স্থানীয় সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, সোমবার বিকেলে হঠাৎ করেই ইয়াসিন শেখ এবং তার ভাই আনিসুর শেখের স্ত্রীরা নিখোঁজ হয়ে যান। পরিবারের সদস্যরা তাদের কোথাও খুঁজে না পেয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তারা জানান, তাদের স্ত্রীরা স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে যাননি, বরং প্রতিবেশী যুবক আরিফ মোল্লা তাদের প্রলুব্ধ করে নিয়ে গেছেন। আরিফের স্ত্রীও পুলিশের কাছে একই দাবি করেন।

পরপর দুটি পরিবার থেকে একই ধরনের অভিযোগ আসায় পুলিশ দ্রুত তদন্তে নামে। তারা দুই গৃহবধূর মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করে। তবে পুলিশ সেখানে পৌঁছানোর আগেই প্রেমিক আরিফ মোল্লা পালিয়ে যায়। পুলিশ তাকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে।

অবশেষে মঙ্গলবার রাতে ওই দুই গৃহবধূকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। বুধবার তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা স্বীকার করেন, একই প্রেমিকের সঙ্গে পালানোর জন্যই এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তারা জানান, বাড়ির লোকজন যেন তাদের আটকাতে না পারে, সেজন্য তারা চায়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন।

পুলিশের প্রশ্নের জবাবে বড় জা কুলচান বেগম অকপটে জানান, “হ্যাঁ, আমরা দুজন একই প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েছিলাম।” পুলিশের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা। কারণ সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় একাধিক প্রেমিকের নাম উঠে আসে। কিন্তু এখানে দুই নারীর লক্ষ্য একই ব্যক্তি হওয়ায় তদন্তে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

এই ঘটনায় পুরো এলাকায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশীরা বলছেন, একই পরিবারের দুই গৃহবধূ যে একই পুরুষের প্রেমে পড়বেন এবং এমন ভয়ংকর পরিকল্পনা করবেন, তা তারা কখনো ভাবেননি। অনেকেই বলছেন, এই ঘটনা সমাজ ও পারিবারিক সম্পর্কের ভাঙন কতটা গভীর হয়েছে, তা স্পষ্ট বোঝাচ্ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, দুই নারীকে আদালতে তোলা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে। একইসঙ্গে মূল অভিযুক্ত প্রেমিক আরিফ মোল্লাকে ধরতে সর্বাত্মক অভিযান চলছে।


সৌদি রাজতন্ত্রের অজানা অধ্যায়: ক্ষমতার জন্য বাবা ও ভাইদের ছাড় দিলেন না মোহাম্মদ বিন সালমান

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৭:২৬:০৪
সৌদি রাজতন্ত্রের অজানা অধ্যায়: ক্ষমতার জন্য বাবা ও ভাইদের ছাড় দিলেন না মোহাম্মদ বিন সালমান
ছবি: সংগৃহীত

প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর সৌদি আরবের সিংহাসনে বসেন সালমান বিন আবদুল আজিজ। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতার এই পালাবদল মোটেই সহজ ছিল না। এটি ছিল নাটকীয় সিদ্ধান্ত আর অপ্রত্যাশিত উত্থানের এক নতুন অধ্যায়।

শুরুতে বাদশাহ সালমান ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে তার ৬৯ বছর বয়সী সৎভাই মুকরিন বিন আবদুল আজিজের নাম ঘোষণা করেন। কিন্তু মাত্র তিন মাস পরেই তিনি হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত বদল করেন। মুকরিনকে সরিয়ে তার স্থানে নিয়ে আসেন নিজের ভাইপো ৫৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন নায়েফকে। পাশাপাশি ২৯ বছরের ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি।

প্রায় ৯ বছর আগে যখন একের পর এক এসব ঘটনা ঘটছিল, সে সময় মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম সৌদি আরবের রাজনীতিতে কেউ শোনেননি। তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানতেনও না কেউ।

অন্যদিকে মোহাম্মদ বিন নায়েফের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল মার্কিন প্রশাসন। তিনি প্রতিরক্ষা বিষয়ে এফবিআইয়ের (যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো) কোর্স করেছিলেন। নিয়েছিলেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে সন্ত্রাস দমন কৌশলের প্রশিক্ষণও; কিন্তু ২০০৯ সালের আগস্টে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হয়। ওই হামলার জন্য সে সময় দায়ী করা হয়েছিল আল-কায়েদাকে।

সৌদি বাদশাহর ‘দ্বাররক্ষক’

মোহাম্মদ বিন সালমান এমবিএস নামে বহুল পরিচিত। লেখক ডেভিড বি ওটাওয়ে তাঁর বইয়ে মোহাম্মদ বিন সালমান সম্পর্কে লিখেছেন, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার পরপরই তিনি (মোহাম্মদ বিন সালমান) বাদশাহর গেট কিপার (দ্বাররক্ষক) হওয়ার জন্য নিজের পদকে ব্যবহার করতে শুরু করেন।’ উদ্দেশ্য ছিল, বাবাকে নজরে রাখা।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্রুতই মোহাম্মদ বিন সালমান তাঁর বাবাকে পরিবার ও বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের থেকে আলাদা করে ফেলেন। এমনকি এ-ও বলা হয় যে বাদশাহকে তাঁর স্ত্রী, মানে এমবিএসের মায়ের সঙ্গেও দেখা করতে বাধা দেওয়া হয়।

লেখক বেন হাবার্ড তাঁর বই ‘দ্য রাইজ টু পাওয়ার, মোহাম্মদ বিন সালমান’-এ উল্লেখ করেছেন, ‘মোহাম্মদ বিন নায়েফ ও তাঁর দুই রক্ষী বাদশাহর সঙ্গে দেখা করার জন্য লিফটে উঠেছিলেন। দোতলায় লিফটের দরজা খুলতেই বাদশাহর সৈন্যরা এগিয়ে গিয়ে নায়েফের রক্ষীদের অস্ত্র ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন।’

ডেভিড বি ওটাওয়ের বইয়ে দাবি করা হয়েছে, মোহাম্মদ বিন সালমান কার্যত তাঁর মা এবং দুই বোনকে গৃহবন্দী করেন এবং বাবাকে এ সম্পর্কে ঘুণাক্ষরেও কিছু টের পেতে দেননি। বাদশাহ নিজের স্ত্রীর কথা জিজ্ঞাসা করলেই বলা হতো চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে তাঁকে।

ইয়েমেন আক্রমণ

প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দ্রুতই নিজের প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তাঁর তত্ত্বাবধানে সে বছরের ২৬ মার্চ (২০১৫ সাল) হুতি বিদ্রোহীদের কাছ থেকে ইয়েমেনের রাজধানী সানাকে মুক্ত করতে হামলা চালায় সৌদি বিমানবাহিনী।

মোহাম্মদ বিন সালমান ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিলেন। ইংরেজি পড়ার চেয়ে ওয়াকিটকিতে প্রাসাদের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলতেই বেশি আগ্রহ ছিল তাঁর।—রশিদ সেকাই, সৌদি যুবরাজের ইংরেজি শিক্ষক

ওটাওয়ে তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে সৌদি জনগণ ওই হামলার প্রশংসা করেছিলেন। ভেবেছিলেন, শেষ পর্যন্ত ইরানের সম্প্রসারণবাদী প্রবণতার বিরোধিতা করার সাহস দেখিয়েছে তাঁদের দেশ।’

‘কিন্তু কিছুদিন পর এ হামলা বাদশাহ, মোহাম্মদ বিন সালমান ও সৌদি আরবের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটিকে মোহাম্মদ বিন সালমানের পররাষ্ট্রনীতির গাফিলতি হিসেবে বিবেচনা করা হতে থাকে।’

মোহাম্মদ বিন নায়েফকে আটক

কাছাকাছি সময়েই তৎকালীন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফকে অপসারণ করে ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স করার সিদ্ধান্ত নেন বাদশাহ সালমান।

পবিত্র রমজান মাসের শেষ দিকে ২০১৫ সালের ২০ জুন রাতে রাজপরিবারের একাধিক সদস্য পবিত্র মক্কায় জড়ো হন। সেই রাতে, রাজনৈতিক ও সুরক্ষাবিষয়ক কাউন্সিলের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, যার সভাপতিত্ব করার কথা ছিল মোহাম্মদ বিন নায়েফের; কিন্তু বৈঠক শুরুর কিছুক্ষণ আগেই তিনি একটি বার্তা পান। সেখানে বলা হয়েছিল, বাদশাহ সালমান তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান।

বলা হয়, সৌদি আরবে অন্তত ১০ হাজার প্রিন্স রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়। তাঁদের সবাইকে সরকারের পক্ষ থেকে মাসিক ভাতা দেওয়া হয়। সর্বনিম্ন ভাতা ৮০০ ডলার এবং সর্বোচ্চ পৌনে ৩ লাখ ডলার। ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করার পরই এ ভাতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

তড়িঘড়ি হেলিকপ্টারে সওয়ার হয়ে বাদশাহর সঙ্গে দেখা করার জন্য সাফা মহলে পৌঁছান বিন নায়েফ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই দেহরক্ষী।

লেখক বেন হাবার্ড তাঁর বই ‘দ্য রাইজ টু পাওয়ার, মোহাম্মদ বিন সালমান’-এ উল্লেখ করেছেন, ‘মোহাম্মদ বিন নায়েফ ও তাঁর দুই রক্ষী বাদশাহর সঙ্গে দেখা করার জন্য লিফটে উঠেছিলেন। দোতলায় লিফটের দরজা খুলতেই বাদশাহর সৈন্যরা এগিয়ে গিয়ে নায়েফের রক্ষীদের অস্ত্র ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন।’

‘পাশের একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় নায়েফকে। তিনি চলে যেতে উদ্যত হলে, বাধা দেওয়া হয় এবং ক্রাউন প্রিন্স পদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া হতে থাকে। কিন্তু তাঁদের কথা শুনতে নারাজ ছিলেন বিন নায়েফ।’

নায়েফের পদত্যাগ

ওই রাতেই বিন নায়েফকে গৃহবন্দী করা হয় এবং রয়্যাল কোর্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়্যাল কাউন্সিলের সদস্যদের ডেকে জানতে চান, তাঁরা মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ বানানোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে একমত কি না।

কাউন্সিলের ৩৪ সদস্যের মধ্যে ৩১ জন সমর্থন জানান। তাঁদের ফোনকল রেকর্ড করা হয় এবং মোহাম্মদ বিন নায়েফকে জানানো হয়, তাঁর কতজন আত্মীয় বাদশাহর এ সিদ্ধান্তে সমর্থন করেছেন।

মোহাম্মদ বিন সালমান তখনো ক্রাউন প্রিন্স হননি। রিয়াদে একটি মূল্যবান জমির ওপর নজর পড়ে তাঁর বাবার; কিন্তু জমির মালিক সেটি বিক্রি করতে চাইছিলেন না। এ নিয়ে চাপ দিতে একজন বিচারকের কাছে যান মোহাম্মদ বিন সালমান। বিচারকও এ নিয়ে কথা বলতে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। তখন মোহাম্মদ বিন সালমান বিচারকের টেবিলে রিভলবারের একটি বুলেট রাখেন। ইঙ্গিত ছিল, বিচারক তাঁর কথা না মানলে হয়তো তাঁকে গুলি করা হবে।—রিচার্ড লেসি, সৌদি রাজপরিবারের ইতিহাস পর্যবেক্ষক

বেন হাবার্ড তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘বিন নায়েফ ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। কিন্তু সে রাতে তাঁকে ওষুধ দেওয়া হয়নি। ফলে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত পরদিন সকালে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করার জন্য তৈরি হয়ে যান।’ তাঁকে পাশের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে বাদশাহ সালমান ও তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা ক্যামেরাসহ হাজির ছিলেন।

বিন নায়েফকে অভ্যর্থনা জানান বাদশাহ এবং তাঁর হাতে চুম্বন করেন। নায়েফ খুব নিচু স্বরে সালমানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। তাঁদের এই সাক্ষাতের ভিডিও সৌদি টিভি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সে সময় বারবার সম্প্রচার করা হয়।

‘এরপর মোহাম্মদ বিন নায়েফ কক্ষ থেকে বেরোনোর পর অবাক হয়ে দেখেন যে তাঁর রক্ষীরা সেখানে নেই। জেদ্দায় নিজের প্রাসাদে পৌঁছানোর পর তাঁকে সেখানে গৃহবন্দী করে রাখা হয়।’

বিন নায়েফের নীরবতা

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রশ্নের জবাবে রয়্যাল কোর্টের একজন মুখপাত্র অবশ্য ওই রাত সম্পর্কে ভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থে ক্রাউন প্রিন্সের পদ থেকে মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়েছিল রয়্যাল কাউন্সিল। রয়্যাল কোর্ট আরও জানায়, তাঁকে বরখাস্ত করার কারণগুলো গোপন রাখা হয়েছে এবং সেগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।

ঘটনার প্রায় এক মাস পর নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, মরফিন ও কোকেনে আসক্ত থাকার কারণে বিন নায়েফকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাদশাহ।

ওই বছরের শেষের দিকে বিন নায়েফের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়। তাঁর প্রতি এমন আচরণ নিয়ে মোহাম্মদ বিন নায়েফ অবশ্য প্রকাশ্যে কোনো কথা বলেননি।

বর্তমানে পরিস্থিতি এমন যে ১৯৮৫ সালের ৩১ আগস্ট জন্ম নেওয়া মোহাম্মদ বিন সালমানের পোস্টার সৌদি আরবের সর্বত্র দেখা যায়। তিনি সৌদি রাজপরিবারের অন্যতম যুবরাজ, যিনি বিদেশে পড়াশোনা করেননি। তিনি কখনোই সৌদি সেনাবাহিনী বা বিমান বাহিনীর সদস্য ছিলেন না। রিয়াদের রয়্যাল অ্যান্ড সেকেন্ডারি স্কুলে পড়াশোনা করেন তিনি।

মোহাম্মদ বিন সালমানের ইংরেজি শিক্ষক রশিদ সেকাই বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘মোহাম্মদ বিন সালমান ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিলেন। ইংরেজি পড়ার চেয়ে ওয়াকিটকিতে প্রাসাদের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলতেই বেশি আগ্রহ ছিল তাঁর।’

স্নাতক হওয়ার পর ২০০৭ সালে সারা বিনতে মাশুরকে বিয়ে করেন মোহাম্মদ বিন সালমান। এই যুগলের চারটি সন্তান রয়েছে।

পিয়ানোতে ধ্রুপদি সুর

মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় তাঁকে নিজের বাড়িতে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।

বইয়ে সে প্রসঙ্গে বেন হাবার্ড লিখেছেন, পুরো সন্ধ্যাটাই কেরির সঙ্গে কথা বলে কাটান মোহাম্মদ বিন সালমান। সে সময় বিন সালমানের চোখ পড়ে সেখানে রাখা পিয়ানোর ওপর।

জন কেরি বিন সালমানের কাছ থেকে জানতে চান, ‘আপনি পিয়ানো বাজাতে জানেন? পিয়ানোতে ধ্রুপদি সুর বাজিয়ে তাক লাগিয়ে দেন মোহাম্মদ বিন সালমান।’

‘ঘরে উপস্থিত সবাই অবাক হয়েছিলেন। যেহেতু ‘‘ওয়াহাবি ঘরানার’’ মানুষেরা সংগীত অপছন্দ করে, ফলে জন কেরি আশা করেননি যে মোহাম্মদ বিন সালমান পিয়ানো বাজাবেন।’

বিচারকের টেবিলে বুলেট

শুরু থেকেই যুবরাজ বিন সালমানের ঝোঁক ছিল বিনিয়োগের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলার দিকে।

সৌদি রাজপরিবারের ইতিহাস পর্যবেক্ষক রিচার্ড লেসি লিখেছেন, ‘মোহাম্মদ বিন সালমান তখনো ক্রাউন প্রিন্স হননি। রিয়াদে একটি মূল্যবান জমির ওপর নজর পড়ে তাঁর বাবার। কিন্তু জমির মালিক সেটি বিক্রি করতে চাইছিলেন না।’

‘এ নিয়ে চাপ দিতে একজন বিচারকের কাছে যান মোহাম্মদ বিন সালমান। বিচারকও এ নিয়ে কথা বলতে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। তখন মোহাম্মদ বিন সালমান বিচারকের টেবিলে রিভলবারের একটি বুলেট রাখেন। ইঙ্গিত ছিল, বিচারক তাঁর কথা না মানলে হয়তো তাঁকে গুলি করা হবে।’

যুবরাজের এহেন আচরণ সম্পর্কে বাদশাহ আবদুল্লাহর কাছে অভিযোগ করেন বিচারক। এ খবর কখনো অস্বীকার করেননি সালমান। এরপর ২০১১ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহ যখন মোহাম্মদ বিন সালমানের বাবাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন, তখন শর্ত দিয়েছিলেন যে এমবিএস যেন কখনোই মন্ত্রণালয়ের ভবনে প্রবেশ না করে।

নারীদের গাড়ি চালানোর স্বাধীনতা

মোহাম্মদ বিন সালমানের বাবা যখন সৌদি আরবের বাদশাহ হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৭৯ বছর। শোনা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরেই আলঝেইমারে ভুগছিলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষমতার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

সৌদি আরবের যুবক ও নারীদের মন জয় করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন বিন সালমান। তিনি ২০১৮ সালে নারীদের জন্য প্রচলিত ড্রেস কোড (পোশাকবিধি) শিথিল করে বলেছিলেন, প্রকাশ্যে নারীদের ‘আবায়া’ পরার দরকার নেই।

সেই বছরই নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, যাতে তাঁরা নিজেরাই কাজে বা কেনাকাটার জন্য গাড়ি চালিয়ে যেতে পারেন। এ জন্য সঙ্গে পুরুষ অভিভাবক রাখার প্রয়োজন নেই।

লেখক মার্ক থম্পসন তাঁর ‘বিয়িং ইয়ং, মেল অ্যান্ড সৌদি’ শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন, ‘অর্থনৈতিক কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, নারীদের স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য নয়।’ তাঁর মতে, ‘নারীরা পুরুষের অনুমতি ছাড়াই যাতে কাজ করতে ও উপার্জন করা অর্থ ব্যয় করতে পারেন, সে কথা মাথায় রেখেই নেওয়া হয় এ পদক্ষেপ।’

‘শুরা’র সমাপ্তি

সৌদি আরববিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে ‘শুরা’ ও জ্যেষ্ঠ প্রিন্সদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঐতিহ্যে বিরাম টেনেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। ‘শুরা’ বলতে পরামর্শমূলক পরিষদকে বোঝায়। এর বদলে নিজেকে এক ও একমাত্র শাসক হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি।

নিজের সিদ্ধান্ত ও রাজনীতির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিবাদ বা সমালোচনা যে বিন সালমান বরদাস্ত করবেন না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।

চেজ ফ্রিম্যান ১৯৯০-এর দশকের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় সৌদি আরবে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর মতে, ‘সৌদি রাজপরিবারের ঐক্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো শুরার ধারণার প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা।’

বিলাসবহুল সামগ্রীর প্রতি আকর্ষণ

ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার আগেও দামি সামগ্রীর প্রতি আকর্ষণের জন্য পরিচিত ছিলেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি ৪৪০ ফুট লম্বা বিলাসবহুল ইয়ট কিনতে ৫০ কোটি ডলার খরচ করেছিলেন। এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে লেওনার্দো দা ভিঞ্চির বিখ্যাত চিত্রকর্ম কেনার জন্য ৪৫ কোটি ডলার খরচ করেন।

সমালোচনা এড়াতে বিন সালমান প্রথমে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ওই বিখ্যাত চিত্রকর্ম আবুধাবির জাদুঘরে দিয়ে দেবেন; কিন্তু তেমনটা হয়নি। এর কিছুদিন পরই তাঁর বিলাসবহুল নৌযান ‘সেরিন’-এ দেখা যায় ওই চিত্রকর্ম।

একের পর এক গ্রেপ্তার, হারিরির পদত্যাগ

বলা হয়, সৌদি আরবে অন্তত ১০ হাজার প্রিন্স রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়। তাঁদের সবাইকে সরকারের পক্ষ থেকে মাসিক ভাতা দেওয়া হয়। সর্বনিম্ন ভাতা ৮০০ ডলার এবং সর্বোচ্চ পৌনে ৩ লাখ ডলার।

ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করার পরই এ ভাতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর মোহাম্মদ বিন সালমান সরকারি তহবিল তছরুপের অভিযোগে প্রিন্স, ব্যবসায়ী ও জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা মিলিয়ে ৩৮০ জনকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন।

বেন হাবার্ড লিখেছেন, ‘তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে ১১ জন প্রিন্স ছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী আদিল ফিকিয়া এবং অর্থমন্ত্রী ইব্রাহিম আবদুল আজিজও ছিলেন।’

‘তাঁদের সবার মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং পাঁচ তারকা রিটজ-কার্লটন হোটেলে নিয়ে গিয়ে গৃহবন্দী করা হয়। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা অর্থ সরকারকে ফেরত দেওয়ার পর তাঁদের সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাঁরা মোট ১০০ কোটি ডলার জরিমানাও দেন।’

একই ভাবে সৌদি আরব সফরে যাওয়া লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরিকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে বিন সালমানের বিরুদ্ধে। সে সময় ওই অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়।

বেন হাবার্ড লিখেছেন, ‘আল-হারিরি মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দেখা করতে এলে তাঁকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর গাড়িবহরে থাকা ব্যক্তিদের বাইরে থাকতে বলা হয়। ওই কক্ষেই হারিরিকে পদত্যাগ করতে বলা হয়।’

‘আল-হারিরি লেবাননের পতাকার পাশে দাঁড়িয়ে পদত্যাগের ঘোষণা করেন এবং একটা বিবৃতি পাঠ করেন। সে বিবৃতি বিশ্বজুড়ে টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছিল।’

আল-হারিরিকে বলতে শোনা যায়, তাঁর পদত্যাগ লেবাননকে আরও শক্তিশালী ও স্বাধীন করে তুলবে। এই বিবৃতি পাঠের সময় তিনি বেশ কয়েকবার থামেন এবং এমন একটা ইঙ্গিত দেন যে ওই বিবৃতি তিনি নিজে লেখেননি।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ‘হারিরি যদি পদত্যাগই করতে চাইতেন, তবে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে কেন পদত্যাগ করলেন?’

এর কয়েকদিন পর আল-হারিরি দেশে ফেরেন এবং তাঁর সেই পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এই অদ্ভুত ঘটনার নেপথ্যের কাহিনি অবশ্য কখনোই জানা যায়নি।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ২০১৮ সালের মে মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সৌদি সরকার ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ২ হাজার ৩০৫ জনকে আটক করেছে, যাঁদের মধ্যে ২৫১ জন তিন বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন এবং তাঁদের কখনো বিচারকের সামনে হাজির করা হয়নি।

শুধু তা-ই নয়, নিউইয়র্কভিত্তিক ‘কমিটি ফর দ্য প্রটেকশন অব জার্নালিস্ট’ও তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, সৌদি আরবে ২৬ জন সাংবাদিক বন্দী রয়েছেন। এ সংখ্যা চীন ও তুরস্কের পর বিশ্বে সর্বোচ্চ। আবার ২০১৯ সালে এক হাজার সৌদি নাগরিকের ওপর ভ্রমণ-নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

জামাল খাসোগি হত্যা মামলা

মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য সবচেয়ে বিব্রতকর ব্যাপার ছিল, যখন তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে গিয়ে এমবিএসের অন্যতম সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাসোগি খুন হন।

খাসোগি আরব নিউজ ও আল-ওয়াতানের মতো সংবাদপত্রের সম্পাদক ছিলেন। সব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মোহাম্মদ বিন সালমান এক বছর ধরে ওই হত্যার দায় অস্বীকার করেন।

ডেভিড বি ওটাওয়ে লিখেছেন, ‘মোহাম্মদ বিন সালমানের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর তত্ত্বাবধানে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তদন্ত শেষে সিআইএ এ সিদ্ধান্তে আসে যে এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ স্বয়ং যুবরাজই দিয়েছিলেন।’

‘যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) মোহাম্মদ বিন সালমানের একটা পুরোনো রেকর্ডিং খুঁজে পায়, যেখানে সৌদি আরবে না ফিরলে খাসোগিকে গুলি করার কথা বলেছিলেন তিনি।’

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উপস্থাপক নোরা ডোনেল যুবরাজকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন?’

জবাবে মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছিলেন, ‘একেবারেই না। এটি একটি জঘন্য অপরাধ। কিন্তু সৌদি আরবের নেতা হিসেবে আমি এর সম্পূর্ণ দায় নিচ্ছি। বিশেষত, যখন অপরাধীরা সৌদি সরকারের হয়ে কাজ করছিল।’

এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সৌদি আরবের এক আদালত সাংবাদিক খাসোগিকে হত্যার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে ২৪ বছরের কারাদণ্ড দেন। তবে ২০২০ সালের ২০ মে প্রয়াত সাংবাদিকের পুত্র সালেহ খাসোগি তাঁর বাবার হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দেন।


মহাকাশে ইসরায়েলের নতুন নজরদারি: উৎক্ষেপণ হলো ‘ওফেক-১৯’

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৬:৪৯:১০
মহাকাশে ইসরায়েলের নতুন নজরদারি: উৎক্ষেপণ হলো ‘ওফেক-১৯’
ছবি : সংগৃহীত

ইসরায়েল সফলভাবে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে তাদের অত্যাধুনিক সামরিক গোয়েন্দা স্যাটেলাইট ‘ওফেক-১৯’। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৩০ মিনিটে কেন্দ্রীয় ইসরায়েলের পামলাচিম বিমানঘাঁটি থেকে ‘শাভিত’ রকেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইটটি কক্ষপথে পাঠানো হয়।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উৎক্ষেপণের পরপরই স্যাটেলাইটটি সফলভাবে নির্ধারিত কক্ষপথে প্রবেশ করে এবং তথ্য প্রেরণ শুরু করে। একাধিক প্রাথমিক পরীক্ষাও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই সাফল্যকে শুধু প্রযুক্তিগত মাইলফলক নয়, বরং শত্রুদের জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা বলেও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা সব সময়, সব পরিস্থিতিতে আমাদের শত্রুদের নজরদারিতে রাখছি।” কাটজ আরও জানান, এই সক্ষমতা আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার পথ খুলে দিতে পারে।

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দৃশ্য রাজধানী তেলআবিবসহ আশপাশের অঞ্চলে সাময়িক আতঙ্ক তৈরি করে। অনেকে এটিকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেবে ভুল করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, অনেক পথচারী আকাশে ছুটে চলা রকেটকে বিস্ময়ের সঙ্গে দেখছেন।

স্যাটেলাইটের সক্ষমতা ও ব্যবহার

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ওফেক-১৯’ একটি সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট, যা দিন-রাত যেকোনো সময় উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি ধারণ করতে সক্ষম। এটি ৫০ সেন্টিমিটারেরও ছোট বস্তু শনাক্ত করার ক্ষমতা রাখে। স্যাটেলাইটটি পূর্ণ কার্যক্রমে গেলে এর দায়িত্ব নেবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখার বিশেষ ইউনিট ৯৯০০, যারা মূলত চিত্রভিত্তিক গোয়েন্দা কাজে বিশেষজ্ঞ।

এই উৎক্ষেপণ ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ কর্মসূচির অংশ, যার নেতৃত্বে রয়েছে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন অধিদপ্তর, সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী। এর আগের বছর মার্চে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ‘ওফেক-১৩’। ‘ওফেক-১৯’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা রেখেছে ইসরায়েল এয়ারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (আইএআই)-এর বিভিন্ন বিভাগ।


চীনের সামরিক মহড়া: প্রকাশ্যে এলো নতুন পারমাণবিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৪:১৯:২৪
চীনের সামরিক মহড়া: প্রকাশ্যে এলো নতুন পারমাণবিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি
ছবি : এএফপি

বিশ্বনেতাদের সামনে নিজেদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করল চীন। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সামনে আয়োজিত এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে পারমাণবিক আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম), নতুন হাইপারসনিক অস্ত্র এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন উন্মোচন করা হয়েছে। এই প্রদর্শনীতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনসহ দুই ডজনের বেশি বিশ্বনেতা উপস্থিত ছিলেন।

সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রদর্শনীতে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে ডিএফ-৫সি, ডিএফ-২৬ডি এবং ডিএফ-৬১-এর মতো নতুন প্রজন্মের আইসিবিএমগুলো। গবেষক আলেকজান্ডার নিলের মতে, চীন তার ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে কৌশলগত প্রতিরোধের মূল অংশ হিসেবে গড়ে তুলছে, যার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর আধিপত্যের বিরুদ্ধে পাল্টা ভারসাম্য তৈরি করা।

মার্কিন নৌবাহিনীর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক নৌবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের। তাদের রয়েছে বিমানবাহী রণতরী ও ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ। এই দিক থেকে চীন এখনও অনেক পিছিয়ে। তবে এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে তারা উন্মোচন করেছে ‘গুয়াম কিলার’ নামে পরিচিত আইসিবিএম ডিএফ–৬১। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান নৌ-ঘাঁটি গুয়ামে সরাসরি আঘাত হানতে সক্ষম।

এই অস্ত্র উন্মোচনের পর থেকেই পশ্চিমা প্রতিরক্ষা মহলে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী ও স্ট্রাইক গ্রুপগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেকোনো চীনা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখে মার্কিন জাহাজগুলো এখন অনেকটা ‘সিটিং ডাকস’ বা সহজ শিকারে পরিণত হতে পারে।

‘সেকেন্ড স্ট্রাইক ক্যাপাবিলিটি’ এবং হাইপারসনিক অস্ত্র

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেইজিং একদিকে যেমন বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধ তৈরি করতে চাইছে, অন্যদিকে ‘সেকেন্ড স্ট্রাইক ক্যাপাবিলিটি’ বা প্রথম আক্রমণের পরও শত্রুর বিরুদ্ধে পাল্টা পারমাণবিক হামলা চালানোর ক্ষমতাও গড়ে তুলছে।

এছাড়াও, চীন প্রথমবারের মতো হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল ওয়াইজে-১৭ ও হাইপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ওয়াইজে-১৯ প্রদর্শন করেছে। উন্মোচন করা হয়েছে পানির নিচে থেকে আক্রমণ করতে সক্ষম বড় আকারের স্বয়ংক্রিয় ড্রোন এজেএক্স০০২, যা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য নতুন দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। একইসঙ্গে গোয়েন্দা কাজে ও মাইন খুঁজতে সক্ষম রোবটিক ‘নেকড়ে ড্রোন’-ও এই কুচকাওয়াজে দেখানো হয়েছে।


বেইজিংয়ে একসাথে শি–পুতিন–কিম এর ঐতিহাসিক মুহূর্ত

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ১২:৩৬:০৮
বেইজিংয়ে একসাথে শি–পুতিন–কিম এর ঐতিহাসিক মুহূর্ত
ছবিঃ সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে আয়োজিত দেশটির সবচেয়ে বড় সামরিক কুচকাওয়াজ বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক মনোযোগ কাড়ে। এই অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে একসাথে উপস্থিত হন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং–উন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং আয়োজক দেশ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তারা তিনজন একসাথে লাল গালিচায় পা রাখেন এবং পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলান। বিশ্লেষকদের মতে, এই দৃশ্য শুধু একটি আনুষ্ঠানিক আচার নয়, বরং বর্তমান বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যে গভীর প্রতীকী তাৎপর্য বহন করে।

চীনের এই আয়োজনকে অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক শি জিনপিংয়ের কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে দেখছেন। বিশেষত কিম জং–উনের উপস্থিতি এ আয়োজনকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। কারণ গত ছয় বছরে এটি তার দ্বিতীয় বিদেশ সফর, এবং প্রথমবার তিনি শি জিনপিং ও ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একই মঞ্চে হাজির হলেন। কিমের এই পদক্ষেপকে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর ঐক্য জোরদার এবং পশ্চিমা প্রভাবের পাল্টা বার্তা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।

চীনের স্টেট কাউন্সিল জানিয়েছে, কুচকাওয়াজে মোট ২৬ জন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট লুয়ং কুয়ং, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো, জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মনানগাগওয়া, সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার ভুচিচ, কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ ক্যানেলসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতা। এছাড়া, মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মিন অং হ্লাইং, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোসহ আরও অনেকে এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বৈচিত্র্যময় অতিথি তালিকা শি জিনপিংয়ের কূটনৈতিক নেটওয়ার্কের শক্তি ও প্রভাবকে প্রতিফলিত করে।

কুচকাওয়াজের উদ্বোধনী ভাষণে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, “অপ্রতিরোধ্য চীনকে কোনোভাবেই ভয় দেখানো যাবে না।” তার এই দৃঢ় উচ্চারণ চীনের আত্মবিশ্বাসী সামরিক অবস্থান ও বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার সংকল্পকে সামনে আনে। একইসঙ্গে এটি দেশের জনগণের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ী বার্তা হিসেবে কাজ করেছে।

এই সামরিক কুচকাওয়াজে চীন প্রথমবারের মতো কিছু আধুনিক সামরিক প্রযুক্তি প্রদর্শন করে। এর মধ্যে ছিল লেজার অস্ত্র, পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং পানির নিচে পরিচালিত বিশাল ড্রোন। এসব নতুন অস্ত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে চীন কেবল সামরিক আধুনিকীকরণে তাদের সাফল্য প্রদর্শন করেনি, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিপক্ষ শক্তিগুলোর জন্য এক প্রকার কৌশলগত সতর্কবার্তাও পাঠিয়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুচকাওয়াজ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি চীনা জনগণ ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রসিকতার সুরে লেখেন, “ভ্লাদিমির পুতিন এবং কিম জং–উনকে সঙ্গে নিয়ে আপনি যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেন, তখন তাদেরকেও আমার উষ্ণ শুভেচ্ছা পৌঁছে দেবেন।” ট্রাম্পের এই মন্তব্য পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বেগ ও শঙ্কাকে প্রতিফলিত করে, যেখানে চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

-শরিফুল

পাঠকের মতামত: