চাঁদাবাজ ছাড়াতে থানা ঘেরাও—নুরের বিস্ফোরক অভিযোগ

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১৬:২৬:৫৬
চাঁদাবাজ ছাড়াতে থানা ঘেরাও—নুরের বিস্ফোরক অভিযোগ

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি কিংবা টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও বাস্তবে অনেক সময় তাদের ভূমিকা ভিন্ন হয়ে ওঠে। পুলিশ যখন কোনো অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে, তখন অনেক ক্ষেত্রে সেই দলের নেতাকর্মীরাই থানায় গিয়ে বিক্ষোভ করে বা ঘেরাওয়ের মাধ্যমে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে এই চক্র বারবার আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রোববার (১৩ জুলাই) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন নুর। তিনি জানান, বর্তমান সময়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ও মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলগুলোতে এই অপরাধচক্রের দখলদারি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে একটি যৌথবাহিনী গঠনের প্রয়োজন রয়েছে, যারা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালাবে। জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত এই বাহিনীর নিয়মিত অভিযান পরিচালনার দাবি জানান তিনি।

নুর বলেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বর্তমানে কার্যত অচল। অনেক জায়গায় মেয়র, কাউন্সিলর বা উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ শূন্য। সেই অনুপস্থিতি পূরণ করছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা, বিশেষ করে ইউএনওরা। কিন্তু রাজনৈতিক দলের চাপের মুখে তাদেরও কাজ করতে হচ্ছে দ্বিধা নিয়ে। কেউ বলছে তারা গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে, কেউ আবার প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধির অভাব স্পষ্ট। তাই তিনি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান, যাতে করে একটা নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে ওঠে এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন কার্যকরভাবে পরিচালিত হয়।

দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়েও তিনি কথা বলেন। বলেন, “বাংলাদেশে ধর্মীয় সহাবস্থান একটি গর্বের বিষয়। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই মিলেমিশে বসবাস করে।” তবে ৫ আগস্টের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার জানা মতে আশপাশে এমন কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়তো ঘটতে পারে, যার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।” তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থনের সময় ছাত্র-জনতা অত্যন্ত সহিষ্ণু ভূমিকা রেখেছে। সরকারদলীয় নেতারা বলেছিলেন, ক্ষমতা ছাড়লে লাখো মানুষের রক্ত ঝরবে। কিন্তু বাস্তবে পাঁচশো জনেরও প্রাণহানি ঘটেনি। তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের জনগণের সহনশীলতারই প্রমাণ।

নুরুল হক নুরের বক্তব্যে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা—সবই উঠে আসে। একইসঙ্গে নির্বাচন ও প্রতিনিধিত্বশীল প্রশাসন গঠনের তাগিদও তুলে ধরেন তিনি।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ