প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়

বাংলাদেশের মানবাধিকার কাঠামোয় নতুন যুগের সূচনা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১০ ১৫:১১:০৯
বাংলাদেশের মানবাধিকার কাঠামোয় নতুন যুগের সূচনা

বাংলাদেশের মানবাধিকার অঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জিত হলো। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (OHCHR) মিশন স্থাপন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের (MoU) খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৈঠক-পরবর্তী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জাতিসংঘের এই মিশন বাংলাদেশের ভেতর মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, প্রতিবেদন তৈরি ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর পাশাপাশি, বাংলাদেশ সরকার ‘নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রটোকল’ (OP-CAT) এ পক্ষভুক্ত হওয়ার প্রস্তাবেও সম্মতি দিয়েছে। কূটনৈতিক ও মানবাধিকার অঙ্গনের বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর আরও ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালেই জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী মূল কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে যুক্ত হয়। ঐচ্ছিক প্রটোকলটি (OP-CAT), যা ২০০২ সালে গৃহীত হয়, সেটি মূল কনভেনশনকে পরিপূরকভাবে শক্তিশালী করে। এই প্রটোকলের মূল উদ্দেশ্য হলো—বিশ্বজুড়ে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ প্রতিরোধে একটি কার্যকর ও পর্যবেক্ষণভিত্তিক কাঠামো গড়ে তোলা।

প্রটোকলে অংশ নেওয়ার ফলে, বাংলাদেশে একটি জাতীয় পর্যবেক্ষণব্যবস্থা (National Preventive Mechanism) গড়ে তোলা বাধ্যতামূলক হবে, যা কারাগার, আটক কেন্দ্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতের অন্যান্য স্থানে নিয়মিত পরিদর্শন পরিচালনা করবে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্যাতনের ঝুঁকি হ্রাস পাবে এবং জবাবদিহি নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই দুই সিদ্ধান্তকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলছে, এটি শুধু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নত করবে না, বরং অভ্যন্তরীণভাবে মানবাধিকারের মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সরকার পক্ষ বলছে, এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের ‘অবিচল মানবাধিকার প্রতিশ্রুতি’র অংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উন্নয়ন বহুপাক্ষিক সহযোগিতা, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং নির্যাতনবিরোধী সংস্কৃতির দিকে বাংলাদেশকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। এখন দেখা যাক, ঘোষণাগুলো বাস্তবায়নের স্তরে কতটা গভীর ও কার্যকরভাবে পৌঁছাতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ