বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

 ‘শেখ হাসিনা গুলির অনুমতি দিয়েছিলেন’

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৯ ১৬:১৮:০৫
 ‘শেখ হাসিনা গুলির অনুমতি দিয়েছিলেন’

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা দাবি করেছে, বাংলাদেশে গত বছর ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হন। বিবিসির অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের ওপর সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছিলেন।

বিবিসি জানায়, এই তথ্য তাদের কাছে এসেছে কয়েকটি অডিও ও ভিডিওর মাধ্যমে। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মিরাজ হোসেন নামের এক ব্যক্তির মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজের অবদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মিরাজ হোসেন নিজেই ওই দিনের গুলিতে প্রাণ হারান। পরবর্তীতে তার পরিবারের কাছ থেকে ভিডিও সংগ্রহ করে বিবিসি সেটি যাচাই করে।

ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৫ আগস্ট দুপুর ২:৪৩ মিনিটে যাত্রাবাড়ী থানার মূল ফটকে বিক্ষোভকারীদের সামনে সেনাবাহিনীর একটি দল অবস্থান করছিল। কিছুক্ষণ পর তারা সরে গেলে, থানার ভেতরের পুলিশ সদস্যরা আকস্মিকভাবে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো শুরু করেন। এতে প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই গলির ভেতর দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। আহতদের ওপর লাথি মারার ভিডিওও রয়েছে।

বিবিসির কাছে থাকা অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ৪ আগস্টও পুলিশ থানা থেকে বের হয়ে মহাসড়কের দিকে গুলি চালাচ্ছে। সেই সময় মেশিনগান থেকে গুলির শব্দ পাওয়া গেছে এবং থানার বাইরে একটি ট্রাক থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে ৩০ মিনিটের বেশি সময় গুলিবর্ষণ চলেছিল। ড্রোন ভিডিওতে মহাসড়কের ওপর মৃতদেহ পড়ে থাকা এবং আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার চিত্রও ফুটে উঠেছে। আন্দোলনকারীদের একটি অংশ পরে শাহবাগের দিকে সরে যান, আর যাত্রাবাড়ীতে থাকা অংশ কিছু পুলিশ স্টেশনে আগুন দেয়, যার ফলে পুলিশের ছয় সদস্য নিহত হন।

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে ৩০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। পরে নিহতদের পরিবার, হাসপাতালের নথি ও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট যাচাই করে বিবিসি দাবি করে, ওই ঘটনায় পুলিশের সহিত কমপক্ষে ৫৮ জন নিহত হয়েছেন।

পাঁচ আগস্টের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানসহ বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ভূমিকা বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, একই সময়ে ফাঁস হওয়া একটি অডিও রেকর্ডিংতে দেখা গেছে, শেখ হাসিনা নিজেই গুলির অনুমতি দিয়েছিলেন। এই অডিওটি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথোপকথনের বলে দাবি করা হয় এবং এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অডিওটি বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ যাচাই করেছে এবং এতে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল পাওয়া গেছে।

বিবিসি অলাভজনক সংস্থা ইয়ারশটের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে রেকর্ডিংটির সত্যতা যাচাই করিয়েছে। তাদের বিশ্লেষণে কোনো পরিবর্তনের প্রমাণ মেলেনি এবং কৃত্রিমভাবে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও অত্যন্ত কম।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ