পলক-টুকু-সৈকতের মোবাইলে ‘হাসিনা নির্দেশনার’ খোঁজে ডিজিটাল অনুসন্ধান

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২১ ১১:১২:১২
পলক-টুকু-সৈকতের মোবাইলে ‘হাসিনা নির্দেশনার’ খোঁজে ডিজিটাল অনুসন্ধান

ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার ‘জুলাই আন্দোলন’ দমন করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনার অভিযোগ এখন তদন্তের কেন্দ্রে। অভিযোগ উঠেছে, তৎকালীন সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিশ্বস্ত দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন, যার ফলস্বরূপ ঘটে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। এই অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা তানভীর হাসান সৈকতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসমূহ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

সরকার পতনের পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় এই তিনজনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের কাছ থেকে মোট সাতটি মোবাইল ফোনসেট উদ্ধার করা হয়। পরে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আবেদন করে এগুলো ফরেনসিকে পাঠান। পলকের ব্যবহৃত রয়েছে একটি আইফোন ১৫ প্রো ও দুটি স্যামসাং এস২৪ আল্ট্রা। টুকুর কাছে পাওয়া গেছে একটি নোকিয়া বাটন ফোন ও একটি স্যামসাং এম১৪। সৈকতের কাছে ছিল একটি আইফোন ও একটি ডোকোমো ৫জি ফোনসেট।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠলে শেখ হাসিনা আতঙ্কিত হয়ে বিশেষ ব্লক রেইডের নির্দেশ দেন এবং সারাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেন। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী পলককে কয়েক দফায় ফোন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। একইভাবে ডেপুটি স্পিকার টুকু এবং ছাত্রনেতা সৈকতের সঙ্গেও টেলিফোন ও বার্তা আদান-প্রদান হয়। হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, সিগন্যাল ও ভাইবার অ্যাপের মাধ্যমেই এসব বার্তা বিনিময় হয়েছে বলে অভিযোগ।

তবে আটক ব্যক্তিরা গ্রেফতার হওয়ার আগে তাদের মোবাইল ফোন থেকে সব ধরনের ডেটা মুছে ফেলে এবং সংশ্লিষ্ট অ্যাপসগুলোও আনইনস্টল করে দেয়। এজন্য তদন্তের স্বার্থে ফরেনসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মোবাইল ফোনগুলো থেকে মুছে ফেলা ডেটা পুনরুদ্ধার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

২০২২ সালের ‘ডিজিটাল এভিডেন্স অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ডেটা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হয়। ফরেনসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মোবাইল ডিভাইস থেকে মুছে ফেলা ছবি, ভিডিও, ভয়েস রেকর্ডিং, বার্তা এবং অন্যান্য মিডিয়া ফাইল উদ্ধার করা সম্ভব।

পল্টন থানায় দায়েরকৃত রিকশাচালক কামাল মিয়া হত্যা মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, ২০ জুলাইয়ের এই মামলায় উল্লিখিত সাতটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। ডিবি ইন্সপেক্টর আব্দুল্লাহেল বাকী আদালতে আবেদনে বলেন, ‘আসামিরা তৎকালীন সরকার ও দলের নীতিনির্ধারক এবং ক্যাডার ছিলেন। হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতা, নির্দেশনা প্রদান ও অন্য জড়িতদের শনাক্তকরণে এই ফোনসেটগুলোর ফরেনসিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন।’

ফরেনসিক বিশ্লেষণে মূলত খোঁজা হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে বার্তা ও মিডিয়া ফাইল আদান-প্রদান হয়েছিল কিনা, ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছিল কিনা, বার্তা আর্কাইভ করা বা মুছে ফেলা হয়েছে কিনা, এবং এসব আদান-প্রদানে তৃতীয় কোনো পক্ষ যুক্ত ছিল কিনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর আব্দুল্লাহেল বাকী জানান, ‘ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে, এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। প্রাপ্ত তথ্য তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।’

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষ প্রসিকিউশন টিমের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজি জানান, ‘যদি ফরেনসিকে পাওয়া তথ্য মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে তা ম্যাটেরিয়াল ফ্যাক্ট হিসেবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যাবে।’

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ