প্রযুক্তি

নিউরালিঙ্কের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের বেইনাও-১, মস্তিষ্ক প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ

প্রযুক্তি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২১ ১০:০১:২৩
নিউরালিঙ্কের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের বেইনাও-১, মস্তিষ্ক প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ
মস্তিষ্ক ছবিঃ যমুনা নিউজ

চীনের এক সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬৭ বছর বয়সী এক নারীর মস্তিষ্ক থেকে সরাসরি বেরিয়ে এল একটি বাক্য—‘আমি খেতে চাই’। ভয়েসহীন এই বাক্য কোনোভাবে মুখে উচ্চারিত হয়নি, বরং এসেছে নারীর চিন্তা থেকে, কম্পিউটারের স্ক্রিনে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এক জটিল স্নায়ুবিক রোগ ALS-এ (অ্যামিওট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস) আক্রান্ত এবং কথা বলার সক্ষমতা হারিয়েছেন।

এই অসাধারণ ঘটনাটি ঘটেছে ‘বেইনাও-১’ নামের একটি পরীক্ষামূলক প্রযুক্তির মাধ্যমে, যা মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেস বা BCI প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। গত মার্চ মাসে এটি প্রথম প্রচারিত হয় বেইজিং রেডিও ও টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে। গবেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই প্রযুক্তিতে অনেক আগে থেকেই কাজ শুরু করলেও, চীনও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।

চীনের ব্রেইন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক লুও মিনমিন জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তির প্রতি রোগীদের আগ্রহ অভাবনীয়। তাদের মতে, এটি যেন তাদের শরীরের ওপর আবার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার মতোই। মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত সংকেত বিশ্লেষণ করে তা টেক্সটে রূপান্তর করা কিংবা যন্ত্রপাতি চালানো সম্ভব হচ্ছে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে।

লুও আরও জানান, ভবিষ্যতে আরও ৫০ থেকে ১০০ রোগীর শরীরে চিপ স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। যদি এটি নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হয়, তবে বৈশ্বিক চিকিৎসাক্ষেত্রে এটি এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে।

২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত পাঁচজন ALS রোগীর শরীরে ‘বেইনাও-১’ চিপ স্থাপন করা হয়েছে, যা সংখ্যার দিক দিয়ে ইলন মাস্কের নিউরালিঙ্কের সমতুল্য। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সিনক্রোন নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে জেফ বেজোস ও বিল গেটস বিনিয়োগ করেছেন, ইতিমধ্যে ১০ জন রোগীর ওপর পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র BCI গবেষণায় পথিকৃৎ হলেও, চীনের অগ্রযাত্রা এখন অনেক ক্ষেত্রেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। বেইজিং ২০১৮ সালে সরকারের সহায়তায় CIBR প্রতিষ্ঠা করে এবং ২০২৩ সালে গঠন করে নিউসাইবার নিউরোটেক, যারা ‘বেইনাও-১’ তৈরির কাজ করছে।

যে নারী এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ‘আমি খেতে চাই’ বলতে সক্ষম হয়েছেন, তিনি বহু বছর কথা বলতে পারেননি। এখন তিনি সিস্টেমটির মাধ্যমে ছোট ছোট বাক্য বলতে পারছেন, যা গবেষকদের জন্য এক বিশাল সাফল্য।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান BCI চিপটি মস্তিষ্কের গভীরে বসানোর পথে গেলেও, চীন কম ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে ব্রেইনের ওপরের অংশ থেকেই সংকেত সংগ্রহ করছে। এতে অপারেশনের ঝুঁকি কম এবং তা যথেষ্ট তথ্য দিতে পারছে বলেও গবেষকরা মনে করছেন।

বিশ্বজুড়ে BCI প্রযুক্তি এখন শুধু চিকিৎসায় নয়, বরং অর্থনীতি ও কৌশলগত প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেই এই প্রযুক্তিকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার ‘রণক্ষেত্র’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সরকার এ সংক্রান্ত গবেষণা, ট্রায়াল ও পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ভিন্ন পথে হাঁটলেও লক্ষ্য একই—মানবমস্তিষ্কের অদ্ভুত সম্ভাবনাকে বাস্তবতায় রূপ দেওয়া। শেষ পর্যন্ত কোন প্রযুক্তি এগিয়ে থাকবে, তা নির্ধারণ করবে সময় ও কার্যকারিতা।

সূত্র: সিএনএন নিউজ।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ