জুলাই হত্যাকাণ্ডে গোপন কল রেকর্ড খতিয়ে দেখছে ফরেনসিক, তিন প্রভাবশালীর মোবাইল তদন্তে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২১ ১১:০৬:৩৮
জুলাই হত্যাকাণ্ডে গোপন কল রেকর্ড খতিয়ে দেখছে ফরেনসিক, তিন প্রভাবশালীর মোবাইল তদন্তে
ছবিঃ যুগান্তর

২০২৪ সালের ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার বিষয়টি এখন তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, সেই সময় সরকারবিরোধী আন্দোলন দমন করতে শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় নেতাদের গোপনে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা তানভীর হাসান সৈকতের মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া এই তিনজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের অনুমতি নিয়ে সাতটি ফোনসেট সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠান। এর মধ্যে পলকের তিনটি, টুকু ও সৈকতের দুটি করে ফোন রয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে মুছে ফেলা ছবি, বার্তা, অডিও, ভিডিওসহ নানা ধরনের তথ্য পুনরুদ্ধার করা যায়। এ তথ্য বিচারিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। ২০২২ সালের এভিডেন্স অ্যাক্ট অনুযায়ী ডিজিটাল ডেটাও আদালতে উপস্থাপনযোগ্য প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত।

মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২০ জুলাই পল্টন থানায় দায়ের করা রিকশাচালক কামাল মিয়া হত্যা মামলায় আসামিদের ফোন জব্দ দেখানো হয়। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে বলা হয়, আসামিরা তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারক ও দলীয় ক্যাডার ছিলেন। হত্যাকাণ্ডে তাদের ভূমিকা ও অপর আসামিদের সনাক্ত করতে এসব ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা প্রয়োজন।

ফোনগুলোর মধ্যে রয়েছে— পলকের একটি আইফোন ১৫ প্রো ও দুটি স্যামসাং এস২৪ আল্ট্রা, টুকুর একটি নোকিয়া বাটন ফোন ও একটি গ্যালাক্সি এম১৪, এবং সৈকতের একটি আইফোন ও একটি ডোকোমো ৫জি মডেলের ফোনসেট।

তদন্তসংশ্লিষ্টদের দাবি, জুলাই মাসজুড়ে চলা আন্দোলনে সরকার চাপে পড়ে। তখন শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে কথা বলেন। আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে পরে ইন্টারনেট বন্ধসহ ব্লকরেইড অভিযান চালানো হয় এবং একপর্যায়ে গুলির নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ।

তদন্তে জানা গেছে, ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে শেখ হাসিনা পলককে ফোন করেন। একইভাবে টুকু ও সৈকতের ফোনেও হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, সিগন্যাল ও ভাইবারে বার্তা পাঠানো হয়।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃতরা ডাটা মুছে ফেলায় ফোনে তেমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ফরেনসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মুছে ফেলা তথ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব হতে পারে। আদালতে দেওয়া আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদান-প্রদানের সময়, বার্তা ও মিডিয়া ফাইল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।

তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি ইন্সপেক্টর আব্দুল্লাহেল বাকী বলেছেন, বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গোপনীয়। ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে সময়মতো চার্জশিটে তথ্য দেওয়া হবে।

ডিজিটাল তথ্যের গুরুত্ব প্রসঙ্গে মামলার বিশেষ প্রসিকিউটর টিমের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজি বলেন, এসব তথ্য যদি মামলার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়, তাহলে তা বিচারে ‘ম্যাটেরিয়াল ফ্যাক্টস’ হিসেবে গণ্য হবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ