"৭১-এর চেতনার মতো ২৪-এর অভ্যুত্থান যেন চেতনা ব্যবসায় না পরিণত হয়"

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২১ ১০:২০:৩০
"৭১-এর চেতনার মতো ২৪-এর অভ্যুত্থান যেন চেতনা ব্যবসায় না পরিণত হয়"
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে বিভাজন নয়, বরং জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, “স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে আমরা সবাই স্বাধীনতাকে আপন করে নিয়েছি। এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ফ্যাসিবাদবিরোধী, গণতান্ত্রিক চেতনায় গড়ে ওঠা ঐক্য, যা ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে।” রোববার (২০ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে আদর্শ পাবলিকেশন আয়োজিত ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল: অভ্যুত্থানের অজানা অধ্যায়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “স্বাধীনতার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কে ছিল, এই বিতর্ক জাতিকে বিভক্ত করেছে। আমরা সে পথে হাঁটতে চাই না। বরং একাত্তরের চেতনার মতোই ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় শক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। এখন প্রয়োজন এই অভ্যুত্থানের গৌরবকে ঐক্যের মাধ্যমে কাজে লাগানো।” তিনি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, “কারা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল এই প্রশ্নকে রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়ে বিভক্তি তৈরি করেছে তারাই। বিএনপি বরাবরই সংহতির পক্ষে, বিভেদের বিরুদ্ধে।”

তিনি বলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো স্বৈরাচার স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতা ছাড়ে না। যেমন শেখ মুজিব ক্ষমতা পরিবর্তনের কোনো পথ রেখে যাননি সেটি তাজউদ্দীনের মেয়ে তার বইতেই উল্লেখ করেছেন। একইভাবে শেখ হাসিনাও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন না।” সালাহউদ্দিন আহমদের মতে, বর্তমান সরকারও গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ রুদ্ধ করে রেখেছে, যা ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক।

বিএনপির এই প্রবীণ নেতা সতর্ক করে দেন যে, “যেভাবে একাত্তরের চেতনা আজ একটি বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক পণ্যে পরিণত হয়েছে, একইভাবে ২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে নিয়েও যেন কেউ চেতনা ব্যবসা করতে না পারে।” তার মতে, এই অভ্যুত্থান ছিল একটি নির্জলা গণতান্ত্রিক দাবির প্রতীক, যার রাজনৈতিক মর্যাদা রয়েছে সেটিকে ব্যবহারিক ঐক্য ও পরিবর্তনের জন্য কাজে লাগাতে হবে, পণ্য করে তুললে নয়।

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে যত দিন রক্ত ও বিদ্রোহের কথা লেখা হবে, তত দিন শহীদ আবু সাঈদের নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন ২৪-এর অভ্যুত্থানের প্রতীকী শহীদ, যিনি গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছেন।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামীমা সুলতানা এবং বাসস-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আদর্শ প্রকাশনীর প্রকাশক মাহাবুর রাহমান।

বক্তারা বলেন, ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল’ শুধু একটি শিরোনাম নয়, বরং এটি দেশের ইতিহাসের এক অনুপম রাজনৈতিক রূপান্তরের চিত্র। এই অভ্যুত্থান একদিকে যেমন ছাত্র-যুবকের আত্মত্যাগের প্রতীক, তেমনি এটি ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতার ঐক্য ও শক্তির এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ