বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখলো বাংলাদেশ

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৮ ১৬:০৬:২৭
বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখলো বাংলাদেশ

বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ও দেশি-বিদেশি চ্যালেঞ্জের মধ্যেও টানা দ্বিতীয় বছরের মতো তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। তবে রপ্তানির বাজার হিস্যা কিছুটা কমেছে—২০২৩ সালের ৭.৩৮ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে তা নেমে এসেছে ৬.৯০ শতাংশে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস: কি ইনসাইটস অ্যান্ড ট্রেন্ডস ইন ২০২৪’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির হিসেবে, গত বছর বৈশ্বিক তৈরি পোশাক আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৭ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৮.৪৮ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় মাত্র ০.২১ শতাংশ বেশি। যদিও প্রবৃদ্ধি কম, তবুও ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানটি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ভিয়েতনাম গত বছর রপ্তানি করেছে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক, যা তাদের আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি।

তবে বাজার হিস্যার বিচারে বাংলাদেশের পতন এবং ভিয়েতনামের অগ্রগতি উদ্বেগ তৈরি করেছে শিল্প সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বিপরীতে ভিয়েতনামের রপ্তানি বাড়তে পারে। তবুও তিনি আশা প্রকাশ করেন, চলতি বছর দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতকে গত বছর একাধিক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক আন্দোলন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট এবং বড় শিল্পাঞ্চলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সামগ্রিকভাবে শিল্প খাতের কার্যক্রমে প্রভাব পড়ে।

এ ছাড়া রপ্তানি উপাত্ত নিয়েও নানা বিতর্ক রয়েছে। ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে বড় ধরনের গরমিল ধরা পড়ে। ২০২২ সালে WTO-এর হিসাবে বাংলাদেশ ৪৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি দেখালেও বাস্তব পরিসংখ্যান ছিল কম। তিন অর্থবছরে ইপিবি এনবিআরের তুলনায় অতিরিক্ত ২ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের রপ্তানি দেখায়, যা প্রকৃত চিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

এদিকে, এখনো বিশ্ব বাজারে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ চীন। গত বছর চীন রপ্তানি করেছে ১৬৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক, যার প্রবৃদ্ধি মাত্র ০.৩০ শতাংশ। ২০১৭ সালে যেখানে তাদের বাজার হিস্যা ছিল প্রায় ৩৫ শতাংশ, ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৯.৬৪ শতাংশে।

তুরস্ক, ভারত, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যথাক্রমে চতুর্থ থেকে দশম অবস্থানে রয়েছে। তাদের মধ্যে ভারত ও কম্বোডিয়ার রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও তুরস্ক ও পাকিস্তানের রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে।

বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং কাঁচামালের সংকট—এই সব মিলিয়ে আগামীর পোশাক রপ্তানির বাজারে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ