শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশ: ভারতের কূটনৈতিক হিসাব শুরু

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৭ ১৭:৪৩:২১
শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশ: ভারতের কূটনৈতিক হিসাব শুরু

বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সব বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত ভারত, তবে সেটি হতে হবে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সদিচ্ছার ভিত্তিতে এমনটাই জানালেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক পদ্ধতি রয়েছে, যার মাধ্যমে দুই দেশ তাদের সম্পর্কের প্রতিটি দিকেই কাজ করতে পারে।”

১৯৯৬ সালের বহুল আলোচিত গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জয়সওয়াল বলেন, “পারস্পরিক লাভজনক সংলাপের অনুকূল পরিবেশে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী।”

ভারতের এমন মন্তব্য একটি ইতিবাচক বার্তা দিলেও এটিও স্পষ্ট করে যে, তারা আলোচনার জন্য আগে পরিবেশ ও প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব দিচ্ছে। পানি নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে ভারত নিজের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমন্বয় ছাড়া এগোতে চায় না, যা আলোচনার গতি মন্থর করে তুলছে বলেই ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই পানি বণ্টন ইস্যু দুই দেশের সম্পর্কে একটি অমীমাংসিত অধ্যায় হয়ে আছে। যৌথ নদী কমিশন সক্রিয় থাকলেও টেকসই সমাধান দূরে।

ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব বিষয়ের নীতিগত অবস্থান নির্ধারণ করতে হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। ফলে রাজনৈতিক সমন্বয়হীনতা এবং অভ্যন্তরীণ বিবেচনা অনেক সময় আলোচনায় জটিলতা তৈরি করে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, “ভারত যেসব বাণিজ্য-সংশোধনী ঘোষণা করেছে, তা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ন্যায্যতা ও পারস্পরিকতা প্রদর্শনের ভিত্তিতে করা হয়েছে।”

এ বক্তব্যের মাধ্যমে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, ভারত চায় বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্যের প্রবেশে আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করুক, অথচ নিজ দেশের বাজার রক্ষা করতে বাংলাদেশের নীতিমালা তেমন ছাড় দেয় না এমন অভিযোগ তুলে বহুদিন ধরেই ভারত চাপ প্রয়োগ করে আসছে।

ভারত এরই মধ্যে কিছু বিষয় বিভিন্ন কাঠামোগত ফোরামে তুলেছে, যেমন বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠক।

একই দিনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীন ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ সভায় অংশ নেওয়া নিয়েও ভারতের পক্ষ থেকে মন্তব্য আসে। জয়সওয়াল বলেন, “আমরা আশপাশের অঞ্চলের ঘটনাপ্রবাহ ও ভারতের স্বার্থের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে সদা সতর্ক।”

এই বক্তব্য সরাসরি না বললেও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের চীনের সঙ্গে সাম্প্রতিক কৌশলগত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে ভারতের সতর্ক ও শঙ্কিত অবস্থান বোঝায়।

‘দ্য হিন্দু’ জানিয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী সংসদীয় কমিটি ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ’ নিয়ে আলোচনা করতে চলেছে। এ বিষয়ে ৪ জন বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এই বিশেষজ্ঞরা হলেন শিব শঙ্কর মেনন (সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা), আতাউল হাকিম হাশনাইন (অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল), রিভা গাঙ্গুলী দাস (ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার) এবং অধ্যাপক অমিতাভ মাত্তু।

আলোচনায় উঠে আসা সম্ভাব্য বিষয়গুলো হলো:

  • ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সম্ভাব্য অন্তর্বর্তী সরকার ও তাতে ভারতের ভূমিকা
  • ধর্মীয় উগ্রবাদ ও মৌলবাদী রাজনীতির উত্থান
  • রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তার ঝুঁকি
  • শেখ হাসিনা সরকার পরবর্তী বাংলাদেশ-চীন কৌশলগত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতা

ভারতের মুখপাত্রের বক্তব্য এবং সংসদীয় আলোচনার প্রেক্ষাপট এই ধারণা দেয় যে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বর্তমানে এক জটিল, সতর্ক, ও শর্তসাপেক্ষ পর্যায়ে রয়েছে।

ভারতের পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য পরিবেশ তৈরি হওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে যা একদিকে আত্মরক্ষামূলক, আবার অন্যদিকে বাংলাদেশকে ‘নীতিগত নমনীয়তার বার্তা’ দেওয়ার চেষ্টাও হতে পারে।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ