ইরান- যুক্তরাষ্ট্র গোপন আলোচনা, শান্তির মুখোশে নতুন যুদ্ধের ছক?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৭ ০৮:৫৮:১৬
ইরান- যুক্তরাষ্ট্র গোপন আলোচনা, শান্তির মুখোশে নতুন যুদ্ধের ছক?

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে এক নতুন মাত্রার গোপন কূটনৈতিক আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা এবং উপসাগরীয় অংশীদাররা যৌথভাবে এক পর্দার আড়ালের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছেন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইরানকে সামরিক উত্তেজনা পরিহার করে একটি শান্তিপূর্ণ, বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত রাখা এবং বিনিময়ে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সুবিধা প্রদান।

আলোচনার প্রেক্ষাপট

বিগত দুই সপ্তাহে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সামরিক হামলার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। সিএনএনের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে একটি নতুন, ইউরেনিয়াম-বিহীন পারমাণবিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করতে চায়। এর জন্য প্রস্তাবিত হয়েছে ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের একটি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ, যার অর্থায়ন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে না হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের আরব অংশীদারদের মাধ্যমে হতে পারে।

অপ্রকাশ্য বৈঠক ও আলোচনার কাঠামো

গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের নেতৃত্বে এক গোপন বৈঠকে ইরান সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয় বলে জানা গেছে। সেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল মার্কিন সামরিক হামলার মাত্র ঘণ্টা কয়েক আগে। আলোচনার খসড়া প্রস্তাবে ইরানের জন্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে-

- ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা

- বিকল্পভাবে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আমদানির অনুমতি (স্বল্প মাত্রায়)

- পর্যবেক্ষকদের মাধ্যমে কর্মসূচির নিয়মিত পরিবীক্ষণ

- বিশ্বব্যাপী ফ্রিজ থাকা ইরানি তহবিলের (প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার) আংশিক মুক্তি

- নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রবেশের সুযোগ

এ আলোচনার একটি প্রধান শর্ত, যা ট্রাম্প প্রশাসন একেবারে অচলাবস্থার মতো করে দাঁড় করিয়েছে, তা হলো: ইরান কোনোভাবেই নিজস্বভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না। যদিও ইরান বহুবার বলেছে, তারা শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ বেসামরিক প্রয়োজনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, তবুও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এই শর্তে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ।

সিএনএনের তথ্যমতে, এই উদ্যোগ একটি বহুস্তরবিশিষ্ট কৌশল, যার মাধ্যমে সামরিক উত্তেজনা হ্রাস করে ইরানকে দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে। তবে এটি এখনো নিশ্চিত নয় যে, ইরান এই প্রস্তাবে সাড়া দেবে কিনা। আলোচনার রূপরেখা এখনো পরিবর্তনশীল এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো নিজেদের অবস্থান ধরে রেখে ‘সৃজনশীল সমঝোতা’র পথ খুঁজছে।

স্টিভ উইটকফ এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। সব প্রস্তাবই এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রে প্রবেশ করতে না পারে, কিন্তু তারা যেন বেসামরিক প্রযুক্তি উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে পারে।”

এই পর্যায়ে মূল লক্ষ্য হলো, ইরানকে এমন একটি প্রণোদনার কাঠামো দেওয়া, যা তাদের স্বার্থ রক্ষা করবে, আবার আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকেও নিশ্চিত করবে। ইরানের জবাব এখনো আসেনি, তবে সূত্রগুলো বলছে, পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং নিকট ভবিষ্যতেই এর ফলাফল উদঘাটিত হবে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ