যুদ্ধবিরতিতে কাশ্মীরের কী বার্তা?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১০ ২১:২৪:২৫
যুদ্ধবিরতিতে কাশ্মীরের কী বার্তা?

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে ঘিরে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে উপমহাদেশজুড়ে। এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই দেশের জনগণ, বিশেষ করে উত্তপ্ত কাশ্মীর উপত্যকার বাসিন্দারা। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাওয়া কাশ্মীর অঞ্চলে এখন ভেসে আসছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। তবে সঙ্গে সঙ্গেই জেগে উঠেছে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও রাজনৈতিক সমাধানের প্রত্যাশা।

‘আল্লাহ রহমত করেছেন’, বলছে কাশ্মীর

ভারত-শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের ২৫ বছর বয়সী তরুণী রুমাইসা জান, যার আগামী সপ্তাহে বিয়ের আয়োজন, যুদ্ধবিরতির খবর শুনে আল জাজিরাকে বলেন,
‘যা ঘটছে তা নিয়ে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলাম। এত প্রাণহানির পর এটাই সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত। আমরা শান্তি চাই এবং এই সমস্ত শত্রুতার অবসান চাই।’

তার মতো অনেকেই বলছেন, “আল্লাহ রহমত করেছেন”—এই শব্দটাই যেন এই মুহূর্তে দুই কাশ্মীরের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতিক্রিয়া।

আজাদ কাশ্মীর ও ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও একইরকম অনুভূতি। বহু বছর ধরে সীমান্তে গোলাবর্ষণের মাঝে বেড়ে ওঠা একটি প্রজন্ম এখন আশাবাদী, যুদ্ধ নয়—সমাধানই হতে পারে ভবিষ্যতের দিশা।

‘যুদ্ধক্ষেত্র নয়, চাই স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান’

শ্রীনগরে অবস্থিত একটি ট্রাভেল এজেন্সির পরিচালক ফিরদৌস আহমেদ শেখ বলেন,
‘আমরা কাশ্মীরিরা দীর্ঘদিন ধরে দুই পরাশক্তির লড়াইয়ের বলি হয়ে আসছি। আমাদের এলাকা যেন যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আমার একমাত্র ভয় হলো, এই শান্তি যেন আবারও সাময়িক না হয়। দুই দেশকে এবার বসতে হবে—কাশ্মীর নিয়ে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন,
‘আমি দোয়া করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন আর টানেল-সন্ধান, কারফিউ কিংবা গোলাবর্ষণের শব্দে ঘুম ভেঙে না ওঠে।’

মার্কিন মধ্যস্থতায় রাতভর আলোচনা, ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প

এই যুদ্ধবিরতি হঠাৎ নয়—এর পেছনে কাজ করেছে কূটনৈতিক মহলের নীরব ও জটিল প্রচেষ্টা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ’-এ লিখেছেন,
‘দীর্ঘ রাতব্যাপী আলোচনার পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এটি একটি বড় কূটনৈতিক বিজয়।’

পরে নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদ থেকেও যৌথভাবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা নিশ্চিত করা হয়। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বিবিসিকে জানান,
‘স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—সব পথেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এটি শনিবার বিকেল ৫টা থেকে কার্যকর।’

শান্তির শুরু, না কৌশলের অংশ?

যুদ্ধবিরতি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছার ভিত্তিতে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের দিকে না যায়, তবে তা কেবল অস্থায়ী ‘ব্রেক’ হয়ে থাকবে।

কাশ্মীরের জনগণ এখন আর প্রতিশ্রুতিতে তৃপ্ত নয়—তারা চায় প্রকৃত পরিবর্তন, যেখানে অস্ত্রের ভাষা নয়, চলবে আলোচনার রাজনীতি।

যুদ্ধ থেমেছে—এখন সময় কণ্ঠস্বর শোনার।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত