খামেনিকে সরাসরি হত্যার হুমকি ইসরায়েলের

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৮ ০৮:৪০:১৭
খামেনিকে সরাসরি হত্যার হুমকি ইসরায়েলের

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাপূর্ণ ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজের প্রকাশ্য হুমকি। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে সরাসরি হত্যার হুমকি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েল যদি ইরানের কাছ থেকে আবারও হুমকি পায়, তবে “তেহরানে ইসরায়েলের দীর্ঘ হাত” আরও শক্তভাবে পৌঁছাবে, এবং এবার লক্ষ্যবস্তু হবেন খোদ খামেনি নিজে।

রোববার (২৭ জুলাই) রাতে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তুরস্কভিত্তিক বার্তাসংস্থা আনাদোলু। তারা জানিয়েছে, দক্ষিণ ইসরায়েলের রামন বিমান ঘাঁটি পরিদর্শনের সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাটজ সাংবাদিকদের সামনে বলেন, “আমি এখান থেকেই স্বৈরশাসক খামেনিকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই আপনি যদি আমাদের হুমকি দিতে থাকেন, আমরা ফের তেহরানে আঘাত হানব, এবার আগের চেয়েও শক্তিশালীভাবে। এবং এবার আপনি নিজেই হবেন আমাদের সরাসরি লক্ষ্য।”

এই মন্তব্য প্রকাশ করে ইসরায়েলের অন্যতম প্রভাবশালী দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনোথ।

খামেনিকে লক্ষ্য করে এমন উচ্চমাত্রার হুমকি এমন এক সময়ে এল, যখন মাত্র মাসখানেক আগে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে এক সরাসরি সংঘর্ষের রক্তাক্ত পর্ব শেষ হয়েছে।

গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক অবকাঠামোয় বোমা বর্ষণ করলে অঞ্চলজুড়ে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হয়। ইরান পাল্টা জবাবে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। যুক্তরাষ্ট্রও এই সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে তারা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়।

এই সংঘাত টানা ১২ দিন ধরে চলার পর ২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সাময়িকভাবে স্থগিত হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিরতি ছিল অনেকটাই ভঙ্গুর এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা ও কৌশলগত সংঘাতের মূল চক্র এখনো বহাল রয়েছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এমন প্রকাশ্য ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক হুমকি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে কূটনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা আরও বাড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। সাধারণত, এক দেশের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যার হুমকি দেওয়া আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক রীতিনীতির পরিপন্থী এবং তা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।

এমন সময় এই বক্তব্য এলো, যখন ইসরায়েল গাজায় নতুন করে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, আর ইরান সিরিয়া ও লেবাননে তার মিত্র গোষ্ঠীগুলোকে সক্রিয় রেখেছে। ফলে পরোক্ষ যুদ্ধের পাশাপাশি সরাসরি সংঘর্ষের আশঙ্কাও আবার সামনে এসেছে।

ইসরায়েলের এই সরাসরি হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের শীর্ষ নেতৃত্ব এ ধরনের বক্তব্যকে কেবল বাক্যবাণ হিসেবে দেখবে না বরং কৌশলগত হুমকি হিসেবে বিবেচনা করবে এবং তার উপযুক্ত পাল্টা প্রস্তুতি নেবে।

বিশ্লেষকরা আরও মনে করছেন, এই হুমকি কেবল সামরিক উত্তেজনাই নয়, বরং বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে নতুন করে বিভাজন ও সংঘাতের রেখা স্পষ্ট করে তুলবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ