নরসিংদী-৫: সাতবারের রাজুর আসনে বিএনপির নতুন মিশন

নরসিংদীর মেঘনা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খা ও কাঁকন নদীবিধৌত ঐতিহ্যবাহী রায়পুরা উপজেলা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা হিসেবে পরিচিত। এই উপজেলা নিয়ে গঠিত নরসিংদী-৫ আসন (রায়পুরা) রাজনৈতিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও, ইতিহাসে একবার জাতীয় পার্টি এবং দুইবার বিএনপি এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছিল।
১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়ার নির্বাচনের পর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল আলী মৃধা বিজয়ী হন। তবে পরবর্তী সময়ে টানা সাতবার আওয়ামী লীগের রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, যার ফলে শেখ হাসিনা সরকারের আমল পর্যন্ত এই আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের ঘাঁটি।
তবে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রায়পুরা আসনে আবারও দৃশ্যপটে ফিরে এসেছে বিএনপি। আগত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অন্তত ছয়জন সম্ভাব্য প্রার্থী। প্রত্যেকেই এলাকাজুড়ে ব্যাপক গণসংযোগ, ব্যানার-ফেস্টুনে প্রচার ও ভোটারদের দোয়া চেয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম হলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক নির্বাহী কমিটির সদস্য জামাল আহমেদ চৌধুরী। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চারদলীয় জোটের হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, চরাঞ্চলে মেঘনা সেতু এবং সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তিনি প্রস্তুত।
অপরদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল বলছেন, তিনি রাজপথে ছিলেন, এখনো আছেন এবং থাকবেন। দলের দুর্দিনে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলেই তিনি মনোনয়নে সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করেন।
এমএন জামান, ঢাকা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক এবং রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হিসেবে নিজেকে গণসংযোগে ব্যস্ত রেখেছেন। দলীয় আন্দোলনের অন্যতম ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত জামান মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী।
তালিকায় আছেন জাহাঙ্গীর আলম বাদল, যিনি ২০১৮ সালেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এলাকাবাসীর জন্য শিক্ষা, গ্যাস সংযোগ ও নদীভাঙন প্রতিরোধে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। একইভাবে, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন শ্যামল, এবং জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল আমিন ভূঁইয়া রুহেলও মাঠে গণসংযোগে যুক্ত রয়েছেন।
নরসিংদী-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থী হিসেবে রায়পুরা সদর থানা আমির মাওলানা জাহাঙ্গীর আলমকে ঘোষণা করেছিল। তিনি দলীয় সভা-সমাবেশ ও স্থানীয় সামাজিক-ধর্মীয় কার্যক্রমে সক্রিয় থাকলেও ২২ মে তার প্রার্থিতা দলীয় সিদ্ধান্তে স্থগিত করা হয়। তিনি জানান, দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালে তিনি দলের স্বার্থে কাজ করবেন।
অন্যদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর নির্বাহী পরিচালক মাওলানা বদরুজ্জামান। উপজেলার একাধিক ইউনিয়নে তিনি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং মানুষের কাছে নৈতিকতা ও কল্যাণকামী রাষ্ট্রের বার্তা তুলে ধরছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল্লাহ ফয়সাল। তবে এলাকায় এখনো পর্যন্ত তাকে কোনো গণসংযোগে দেখা যায়নি, যা এনসিপির নির্বাচনি প্রস্তুতির ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, ভোটের দিন সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে ড্রোনের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এমন সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রার্থীদের ওপর চাপ ও শৃঙ্খলার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন: নিরাপত্তা, অনিয়ম ও বিতর্কে সরগরম ক্যাম্পাস
৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২১টি আবাসিক হলে ভোটগ্রহণ চলছে। মোট ১১ হাজার ৯১৯ জন শিক্ষার্থী এবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৮ জন প্রার্থী।
কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ক্যাম্পাসে ১,২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন আছে, যাদের মধ্যে অনেকেই সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় কমিউনিটির সঙ্গেও সমন্বয় করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, তবুও তারা নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত।
মাদক, টাকা ও খাবার বিতরণের অভিযোগ
ভোটের আগে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মাদক সহজলভ্য হওয়ার অভিযোগ করেছেন। জনপ্রিয় আড্ডাস্থল যেমন তারজান পয়েন্ট, সিডনি ফিল্ড ও বিভিন্ন হল এলাকায় মাদক, মদ এবং বিরিয়ানি বিতরণের খবর পাওয়া গেছে। অনেকেই বলছেন, এসব ভোটার প্রভাবিত করার জন্য দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ সরাসরি অর্থ বিতরণের অভিযোগও করেছেন।
স্বতন্ত্র প্যানেলের জিএস প্রার্থী মো. শাকিল আলী বলেন,
“হলগুলোতে মদ ও মাদক সরবরাহ হচ্ছে। প্রার্থীরা ভোটারদের বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছে। এগুলো অন্যায্য এবং আচরণবিধি ভঙ্গ।”
‘সংসপ্তক পরিষদ’-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন,
“অনেক প্রার্থী টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করছে। আমরা আশা করেছিলাম সবাই নিয়ম মেনে চলবে, কিন্তু তা হয়নি।”
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসন এসব অনিয়ম ঠেকাতে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
মনোনয়ন বাতিল ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার
নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী সাইদা আনন্যা ফারিয়া প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন, ঐক্যের স্বার্থে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
এদিকে, আদালতের আদেশে ‘ঐক্য প্যানেল’-এর ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এতে ভোটের আগে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে।
ডোপ টেস্ট নিয়ে বিতর্ক
এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট চালু করা হয়েছে। তবে ভোটের মাত্র দুই দিন আগে টেস্ট শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বলছেন, এত কম সময়ে সবাই পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারবে না। সময়সীমা বাড়ানো হলেও অনেক প্রার্থীর নমুনা সংগ্রহ এখনো শেষ হয়নি।
-নাজমুল হোসেন
ডাকসুতে জয়ীদের উদ্দেশ্যে জামায়াত আমিরের বার্তা
গতকাল মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ নির্বাচনে শীর্ষ তিনটি পদে বিজয়ী হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম), জিএস পদে এসএম ফরহাদ এবং এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান। এছাড়া ১২টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ৯টিতে একই প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয় অর্জন করেন। বাকি তিনটি সম্পাদকীয় পদে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অভিনন্দন জানান এবং নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
জামায়াত আমির নির্বাচিতদের উদ্দেশে বলেন, “আমার প্রত্যাশা, তারা দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমগ্র ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করবেন।”
তিনি আরও বলেন, “৯ সেপ্টেম্বর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রদান করেছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। এ নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছেন, আমি তাদের সবাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”
ডা. শফিকুর রহমান তার বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করেন, “জাতির এ গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক সমাজ এবং নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।”
এসময় তিনি ডাকসু নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের সময় চ্যানেল এস-এর সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম শিবলীর মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।”
-রাফসান
"ষড়যন্ত্র ভেদ করে ধানের শীষের জয় নিশ্চিত করতে হবে"
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সহযোগী শক্তির পাশাপাশি আরেকটি রাজনৈতিক দলও প্রহসনের খেলায় অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে এবং সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন থেকেই সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
বুধবার দুপুরে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বরিশাল মহানগর মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সভায় সেলিমা রহমান আরও বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে এবং এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “এখন থেকে ঘরে ঘরে যেতে হবে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। কে নমিনেশন পেলেন বা কে প্রার্থী হলেন সেটা বড় বিষয় নয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হবে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে ভোট নিশ্চিত করা।”
তিনি দেশের বর্তমান সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেলিমা রহমান বলেন, “আজকের সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে গেছে। শিশু ও তরুণরা অশালীন ভাষায় কথা বলছে, শিক্ষকের মর্যাদা নেই, মায়ের সম্মান নেই, বাবার সম্মান নেই। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে আপনাদের মাধ্যমে।” তিনি আরও আহ্বান জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির জয় নিশ্চিত করতে এবং দেশকে সঠিক পথে ফেরাতে তারেক রহমান প্রস্তাবিত ৩১ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।
-রফিক
স্বাস্থ্য জটিলতায় স্ত্রীকে নিয়ে বিদেশে বিএনপি মহাসচিব
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগমের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর গিয়েছেন। বুধবার (১০ আগস্ট) সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি নির্ধারিত ফ্লাইটে তিনি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে জানান, রাহাত আরা বেগমের চিকিৎসকের পরামর্শ ও শিডিউল আগেই নির্ধারিত ছিল। সেই সময়সূচি অনুযায়ী তারা আজ সকালে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তিনি আরও জানান, সকাল ৮টা ১০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে মির্জা ফখরুল ও তাঁর স্ত্রী ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
তবে, চিকিৎসা শেষে তারা কতদিন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করবেন, সে বিষয়ে শায়রুল কোনো তথ্য দেননি। পারিবারিক কারণে এ যাত্রা মূলত চিকিৎসাকেন্দ্রিক, বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে নিজেও চোখের চিকিৎসা করিয়েছিলেন। গত মাসেই তিনি চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসেন। এবার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য একই দেশে নিয়ে যাওয়া তাঁর পারিবারিক ও ব্যক্তিগত জীবনের একটি ধারাবাহিকতা বলেই মনে করছেন অনেকে।
-রাফসান
আসন পুনর্বিন্যাসে উত্তাল ফরিদপুরের ভাঙ্গা
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে এলাকাবাসী। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা থেকে স্থানীয়রা ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের পুকুরিয়া, হামিরদী, মাধবপুর ও নওয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা–খুলনা মহাসড়কের মুনসুরাবাদ ও আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী এলাকায় অবস্থান নেয়। এতে মহাসড়ক দুটিতে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস ও পণ্যবাহী যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র রোদে কষ্ট এড়াতে আন্দোলনকারীরা মহাসড়কের ওপর সামিয়ানা টানিয়ে দীর্ঘসময় অবস্থান করেন।
অবরোধে অংশ নেওয়া এলাকাবাসী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ভাঙ্গাকে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত তারা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না। দাবি পূরণ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য মহাসড়ক অচল রাখার হুঁশিয়ারিও দেন তারা। স্থানীয়দের দাবি, আগে ফরিদপুর–৪ আসনটি গঠিত ছিল ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে, আর ফরিদপুর–২ আসনে অন্তর্ভুক্ত ছিল নগরকান্দা ও সালথা। কিন্তু গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন দেশের ৪৬টি আসনের সীমানা পরিবর্তন করে যে গেজেট প্রকাশ করে, তাতে ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর–৪ থেকে কেটে নিয়ে ফরিদপুর–২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করেই বিরোধ দেখা দেয়।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, “আমরা অনেকটা অসহায় অবস্থায় আছি। এলাকাবাসী দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়বে না বলে জানিয়েছে। এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করব, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।”
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে উল্লেখ করে বলেন, “আন্দোলনকারীদের দাবি জাতীয় পর্যায়ের। স্থানীয় প্রশাসনের এখতিয়ার নেই। তারা যে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিল, সেটি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি।”
প্রসঙ্গত, ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর–৪ থেকে ফরিদপুর–২ আসনে যুক্ত করার গেজেট প্রকাশের পর থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ৫ সেপ্টেম্বর এলাকাবাসী দুই দফা সড়ক অবরোধ করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আশ্বাসে তারা অবরোধ তুলে নেন। কিন্তু দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব নির্বাচন কমিশন সচিবকে বিবাদী করে ওই গেজেট বাতিলের দাবিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাড়া না পেয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি নেতা মো. শহিদুল ইসলাম বাবুল ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান দুলালসহ পাঁচজনের পক্ষে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
এদিকে, নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি ভিন্ন। ৭ সেপ্টেম্বর আগারগাঁওয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আইন অনুযায়ী সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত হলে তা নিয়ে কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে সতর্ক করে দেন, “বিক্ষোভ–আন্দোলন করেও কোনো লাভ হবে না।”
-রাফসান
বিক্ষোভে রক্তক্ষয়, নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। এর মাত্র একদিন আগে দেশজুড়ে বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দমন-পীড়নের ঘটনা।
রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া পদত্যাগপত্রে ৭৩ বছর বয়সী ওলি লিখেছেন, “আজ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করছি, যাতে রাজনৈতিক সমাধানের পথে আরও অগ্রসর হওয়া যায় এবং বিদ্যমান সংকট নিরসনের উপায় খোঁজা সম্ভব হয়।”
সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপের দাবিতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যদিও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপগুলো চালু করা হয়, তবুও বিক্ষোভ থামেনি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, বিক্ষোভকারীদের ওপর সরাসরি গুলি চালানো হয়, যাতে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়।
ওলি গত বছর চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসেন, যখন তার কমিউনিস্ট পার্টি মধ্য-বামপন্থি নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গঠন করে সরকার গড়ে। তবে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি ও ধীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে জনঅসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছিল।
হিমালয়ের এই দেশটির জনসংখ্যা প্রায় তিন কোটি। এর মধ্যে ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী তরুণরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৩ শতাংশ। কিন্তু বেকারত্বের হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি এবং মাথাপিছু আয় মাত্র ১,৪৪৭ ডলার। ফলে তরুণ প্রজন্ম ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছে।
২০০৮ সালে এক দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধের পর নেপাল রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে ফেডারেল প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। মাওবাদীদের শান্তি চুক্তির মাধ্যমে রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে বয়স্ক রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা দখলের পালাবদল, দলাদলি ও ঘনঘন সরকার পরিবর্তন জনগণের কাছে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আরও অবিশ্বস্ত করে তুলেছে।
গত শুক্রবার থেকে টিকটকে ভাইরাল হওয়া কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, সাধারণ নেপালিদের দুঃখ-দুর্দশার বিপরীতে রাজনীতিবিদদের সন্তানরা বিলাসবহুল সামগ্রী ও বিদেশ ভ্রমণ প্রদর্শন করছে। এসব দৃশ্য বিক্ষোভকে আরও উসকে দিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ওলির পদত্যাগ নিঃসন্দেহে নেপালের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে। তবে এই অস্থিরতা থেকে উত্তরণের পথ এখনো অনিশ্চিত।
-সুত্রঃ এ এফ পি
৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে, নির্বাচন স্বচ্ছ দাবি ঢাবি ভিসির
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান দাবি করেছেন, ডাকসু নির্বাচনে কোনো ধরনের স্বচ্ছতার অভাব নেই। শনিবার বিকেল ৩টার দিকে সেনেট ভবনের তিনটি কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
উপাচার্য জানান, ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ৭০ শতাংশের বেশি ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, “কার্জন হলে একটি সামান্য সমস্যা হয়েছিল, যা ভুলবশত ঘটেছে। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। তারপরও বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করা হবে। যদি কারও দায়িত্বহীনতা প্রমাণিত হয়, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভিসির এই মন্তব্যকে ঘিরে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ বা অনিয়মের খবর সামনে এলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এখন মূল চ্যালেঞ্জ।
-আলমগীর হোসেন
থাকসিন শিনাওত্রার কারাদণ্ড: রাজনৈতিক বংশপরিচয়ের পতনের আভাস
থাইল্যান্ডের সর্বোচ্চ আদালত মঙ্গলবার দেশটির প্রভাবশালী ও বিতর্কিত রাজনীতিবিদ থাকসিন শিনাওয়াত্রাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আদালত জানায়, ২০২৩ সালে নিজস্ব হাসপাতালে থেকে শিনাওত্রা কারাদণ্ড অযথা সম্পন্ন করেছিলেন, যা বেআইনি ছিল।
দশকেরও বেশি সময় ধরে শিনাওত্রার রাজনৈতিক বংশপরিচয় দেশের সামরিক ও রাজতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক মহলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই পরিবার এবং তাদের পপুলিস্ট ধারা দেশটির প্রথাগত সামাজিক কাঠামোর জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইনি ও রাজনৈতিক ব্যর্থতার পরিশেষে তাদের প্রভাব হ্রাস পেতে শুরু করেছে। সর্বশেষ তার কন্যা পেটংটার্ন শিনাওত্রাকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবারের সর্বোচ্চ আদালতের রায় থাইল্যান্ডের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্য একটি কঠিন ধাক্কা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। আদালতের নির্দেশে তার ব্যাংকক রিম্যান্ড প্রিজনে স্থানান্তরের জন্য ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে।
থাকসিন ২০০১ এবং ২০০৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, তবে দ্বিতীয় মেয়াদে সামরিক অভ্যুত্থানের পর নির্বাসনে যান। ২০২৩ সালের আগস্টে দেশে ফেরার পর তিনি দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে আট বছরের সাজা পান। কিন্তু তিনি কখনো সেল না কাটিয়ে ব্যক্তিগত হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাজার বিশেষ ক্ষমা ও বয়স্ক বন্দীদের জন্য পূর্বমুক্তির প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাজা এক বছরে কমিয়ে দেওয়া হয়।
এই সময়ের ফেরা ও হাসপাতাল ট্রান্সফার, যা পেউ থাই পার্টির নতুন সরকার গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, তা জনমনে বিশেষ ব্যবস্থার অভিযোগ ও সন্দেহ সৃষ্টি করেছিল। আদালতের রায়ে বলা হয়, “অভিযুক্তের সাজা কার্যকর করা বেআইনি। তিনি জানতেন বা সচেতন ছিলেন যে তার স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার মধ্যে নেই এবং এটি বহির্বিভাগে চিকিৎসা করা যেত।”
শিনাওত্রার পরিবারের জন্য রাজনৈতিক সাফল্যের এই ধাক্কা একটি চ্যালেঞ্জ হলেও তারা এখনও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে গণ্য। তার কন্যা পেটংটার্ন জানিয়েছেন, “আমার পিতা এখনও মানুষের জীবন উন্নয়নের জন্য তাঁর নৈতিক ও রাজনৈতিক ভূমিকার মাধ্যমে নেতা হিসেবে রয়েছেন।”
বিশ্লেষকরা মনে করেন, শিনাওত্রা সহজে রাজনীতি ছাড়বেন না। থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে তার প্রভাব ও বুদ্ধিমত্তা এখনও বিবেচনার বিষয়। আদালতের বাইরে তার সমর্থকরা লাল রঙের পোশাকে উপস্থিত হয়ে রায়ের প্রতি একাগ্রতা দেখিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে পেউ থাই পার্টি ক্ষমতা হারানো এবং শিনাওত্রার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে নানা গুজব ও রাজনৈতিক উত্তেজনা চলছে। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, “এটি শেষ নয়, তবে পেউ থাইয়ের শক্তি কমিয়ে দিয়েছে।”
-সুত্রঃ এ এফ পি
প্রথমবার আস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী বিদায়, ইতিহাস গড়ল ফ্রান্স
ফ্রান্সের জাতীয় সংসদ সোমবার আস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরুর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, যা দেশটির আধুনিক ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা। মাত্র নয় মাস ক্ষমতায় থাকার পরই বাইরু তাঁর মিতব্যয়ী বাজেট নিয়ে জটিল অচলাবস্থা কাটাতে আস্থা ভোট ডাকেন। বাজেটে প্রস্তাব ছিল ৪৪ বিলিয়ন ইউরো (৫২ বিলিয়ন ডলার) সাশ্রয় করে ফ্রান্সের ঋণের বোঝা কমানো। কিন্তু ফল এসেছে উল্টো—৩৬৪ জন সাংসদ সরকারের প্রতি অনাস্থা জানান, আর আস্থা জানান মাত্র ১৯৪ জন।
ফরাসি সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরপরই প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর সরকারের পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন সংসদের স্পিকার ইয়েল ব্রন-পিভেট। বাইরু এভাবে আস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া ফ্রান্সের ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক বিবৃতিতে জানান, তিনি এই ফলাফল মেনে নিয়েছেন এবং আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন। মঙ্গলবার বাইরুর সঙ্গে বৈঠকে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে।
ম্যাক্রোঁর সামনে নতুন সংকট
২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত ছয়জন প্রধানমন্ত্রী দেখলেন ম্যাক্রোঁ। তবে ২০২২ সাল থেকে পাঁচবার নেতৃত্ব বদলের ফলে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ এখন অস্থিরতায় ভরা। ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সক্রিয় থাকলেও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট এখন তাঁর জন্য বড় মাথাব্যথা।
বাইরু আস্থা ভোটের ঝুঁকি নিয়ে বলেন, “সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হতো কোনো ঝুঁকি না নেওয়া—যেন সব আগের মতো চলতে থাকে। অথচ ঋণের পাহাড় ফ্রান্সের জন্য প্রাণঘাতী। কয়েক বছরের মধ্যে দেশকে ঋণের স্রোত থেকে বাঁচাতেই আমরা এই পরিকল্পনা নিয়েছিলাম।”
নতুন নেতৃত্ব কে?
এখন প্রশ্ন, ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রী হবেন কে? সমাজতান্ত্রিক পার্টির নেতা অলিভিয়ার ফোরে ঘোষণা দিয়েছেন, বামপন্থীরা দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “আমাদের সময় এসেছে ফ্রান্সকে নতুন পথে নিয়ে যাওয়ার।” তবে এমন সরকার কতটা টিকবে, তা নিয়ে সংশয় আছে।
অন্যদিকে, ম্যাক্রোঁর আস্থাভাজন হলেও ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থী হতে পারেন বিচারমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানাঁ। তুলনামূলকভাবে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যাথরিন ভত্রাঁ কিংবা অর্থমন্ত্রী এরিক লম্বার।
তবে সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ফরাসিদের ৬৪ শতাংশ চান ম্যাক্রোঁ নিজেই পদত্যাগ করুন, নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ নয়। যদিও সংবিধান অনুযায়ী তিনি ২০২৭ সালের নির্বাচনে তৃতীয়বার প্রার্থী হতে পারবেন না।
লে পেনের ছায়া
রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি সামাজিক অস্থিরতাও বাড়ছে। “ব্লক এভরিথিং” নামের একটি বামপন্থী জোট বুধবার দেশে গণআন্দোলনের ডাক দিয়েছে। বড় শ্রমিক সংগঠনগুলোও আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে, ২০২৭ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার ডানপন্থী ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) দলের সবচেয়ে বড় সুযোগ তৈরি হতে পারে। তবে এর নেতা মেরিন লে পেন মার্চ মাসে ভুয়া চাকরির মামলায় চার বছরের কারাদণ্ড (যার মধ্যে দুই বছর স্থগিত) ও পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষিদ্ধ হন।
লে পেন অবশ্য রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। সোমবার আদালত জানিয়েছে, তাঁর আপিল শুনানি ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। যদি আপিলে জয় পান, তবে আবারও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড়ে ফিরতে পারেন তিনি। ইতোমধ্যেই তিনি ম্যাক্রোঁকে দ্রুত সংসদীয় নির্বাচনের ডাক দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, “এটি আর কোনো বিকল্প নয়, এটি একটি বাধ্যবাধকতা।”
ফ্রান্সের এই রাজনৈতিক অস্থিরতা কেবল সরকারের স্থায়িত্ব নয়, বরং ইউরোপীয় রাজনীতিতেও নতুন অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
-সুত্রঃ এ এফ পি
পাঠকের মতামত:
- মার্কিন রাজনীতিতে নতুন বিভাজনের আশঙ্কা
- নেপালে রাজনৈতিক শূন্যতা: সেনা তত্ত্বাবধানে উত্তাল দেশ, নতুন নেতৃত্ব কে?
- ৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন: নিরাপত্তা, অনিয়ম ও বিতর্কে সরগরম ক্যাম্পাস
- ১০ সেপ্টেম্বর শেয়ারবাজারের সার্বিক চিত্র ও বিশ্লেষণ
- ডিএসই ব্লক মার্কেট: বড় লেনদেনে যেসব কোম্পানি
- ১০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ ১০ শেয়ার
- জলবায়ু ইস্যুতে গণমাধ্যমের দায়িত্ব বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন পিকেএসএফ চেয়ারম্যান
- ১০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে দর পতনের শীর্ষ ১০ শেয়ার
- ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা: নিরাপত্তায় ১২০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ
- ১০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ শেয়ার
- ডেঙ্গুতে আরও দুইজনের মৃত্যু, একদিনে আক্রান্ত ৬২৫
- ভাঙ্গায় ১১ ঘণ্টা অবরোধ শেষে ফের নতুন ঘোষণা
- জাতীয় পরিচয়পত্র হারালে আর জিডি করতে হবে না: ইসি
- ডাকসুতে জয়ীদের উদ্দেশ্যে জামায়াত আমিরের বার্তা
- কর ফাঁকি তদন্তে শেখ হাসিনার ব্যাংক লকার সিলগালা
- "ষড়যন্ত্র ভেদ করে ধানের শীষের জয় নিশ্চিত করতে হবে"
- ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫: কারা পেলেন সেরা সম্মাননা
- যুক্তরাষ্ট্রে আটক কোরীয় শ্রমিকদের দেশে ফেরাতে চার্টার্ড ফ্লাইট
- কাপ্তাই বাঁধে ১৬ গেট খোলা: কর্ণফুলীতে তীব্র পানি প্রবাহ
- জরায়ুর যত্নে সচেতনতা: নারীর সুস্থ জীবনের অপরিহার্য শর্ত
- মহেশখালী-মাতারবাড়ি: পর্যটন ও অর্থনীতির নতুন দিগন্ত
- ডোপ টেস্ট কী, কেন করা হয়, কেন এত এখন জরুরি
- একীভূতকরণ প্রসঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের ব্যাখ্যা
- বিজয়ের পর শিবিরের তিনটি কাজের নির্দেশ
- ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমকে নিয়ে জুলকারনাইন সায়েরের বার্তা
- স্বাস্থ্য জটিলতায় স্ত্রীকে নিয়ে বিদেশে বিএনপি মহাসচিব
- মাত্র ২৪ ঘণ্টায় নতুন প্রধানমন্ত্রী
- আসন পুনর্বিন্যাসে উত্তাল ফরিদপুরের ভাঙ্গা
- ইসরায়েলের হামলা, কাতারের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
- ঢাবি ডাকসু: ভিপি–জিএস–এজিএস পদে শিবিরের দাপট
- ডাকসু নির্বাচনের ভোট শেষ, ফলাফলের আগে অস্থির ঢাবি—পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত পরিবেশ
- নিরাপদ কাতারেও হামলা! দোহায় ইসরাইলি হামলায় তোলপাড় আরব বিশ্ব
- ইইউ সংলাপ: ঢাকার অগ্রাধিকার বাণিজ্য, ইউরোপের নজর অনিয়মিত অভিবাসনে
- খুনের পরিসংখ্যানে বৃদ্ধি: দেরিতে দায়ের হওয়া মামলার প্রতিফলন
- নেপালে অস্থিরতা: বাংলাদেশি নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দূতাবাসের
- বিক্ষোভে রক্তক্ষয়, নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
- ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে, নির্বাচন স্বচ্ছ দাবি ঢাবি ভিসির
- টিএসসি কেন্দ্রে তিন ঘণ্টায় ৩৫% ভোট
- অল্প সময়েই ছয় দফা বৃদ্ধি: স্বর্ণের বাজারে আগুন
- আবারও যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ইরান: সেনাপ্রধান হাতামির হুঁশিয়ারি
- থাকসিন শিনাওত্রার কারাদণ্ড: রাজনৈতিক বংশপরিচয়ের পতনের আভাস
- বার্মিংহামে বলিউডের ‘ওজিজি’ রানী: কারিনা কাপুর খানের সিলভার শাড়ি
- ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস: পোশাক নয়, স্টাইলের প্রদর্শনী
- বলিউডে বহিরাগতদের প্রতি ক্ষোভ, ‘নেপো বেবি’দের পক্ষ নিলেন তনিশা মুখার্জি
- মেক্সিকোতে ভয়াবহ ট্রেন-বাস সংঘর্ষে ১০ নিহত, আহত ৪১
- ডাকসু নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য
- বিদায় নিশ্চিত, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩
- উয়েফার নিয়ম মানতে প্রস্তুত হ্যারি কেইন ও দল
- পরিচালকের শেয়ার কেনা সম্পন্ন
- যে ভোট রাতেই করা যায়, সেটা দিনে টেনে রাখা কেন?- ফারুকী
- ডাকসু নির্বাচনের ভোট শেষ, ফলাফলের আগে অস্থির ঢাবি—পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত পরিবেশ
- ডিএসইতে আজকের লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- গোয়ালন্দে কবর অবমাননার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র নিন্দা
- “তারেক রহমানের নেতৃত্বেই ঐক্য সম্ভব”
- ডিএসইতে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- ডাকসু নির্বাচন: ৪৭১ প্রার্থী, ৩৯ হাজার ভোটার, টানটান নিরাপত্তায় উৎসবমুখর ভোটযুদ্ধ
- প্রথমবার আস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী বিদায়, ইতিহাস গড়ল ফ্রান্স
- নেপালে অস্থিরতা: বাংলাদেশি নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দূতাবাসের
- চাকরির প্রলোভনে কোটি টাকা হাতিয়ে ৩ প্রতারক গ্রেপ্তার
- ডিএসইতে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- জ্বর, মাথাব্যথা, আর্থ্রাইটিস—ভিন্ন ভিন্ন সমস্যায় ভিন্ন ডোজ প্যারাসিটামল
- শেখ হাসিনার উত্তরাধিকার প্রশ্ন: আওয়ামী লীগের সামনে এক অমীমাংসিত সংকট
- শেয়ারদর বৃদ্ধি নিয়ে ডিএসইকে যে ব্যাখ্যা দিল বিডিকম অনলাইন
- রজনীকান্ত–কমল হাসান আবারও একসঙ্গে বড় পর্দায়
- নিরাপদ কাতারেও হামলা! দোহায় ইসরাইলি হামলায় তোলপাড় আরব বিশ্ব