নরসিংদী-৫: সাতবারের রাজুর আসনে বিএনপির নতুন মিশন

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৮ ০৮:২৩:১৫
নরসিংদী-৫: সাতবারের রাজুর আসনে বিএনপির নতুন মিশন
ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর মেঘনা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খা ও কাঁকন নদীবিধৌত ঐতিহ্যবাহী রায়পুরা উপজেলা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা হিসেবে পরিচিত। এই উপজেলা নিয়ে গঠিত নরসিংদী-৫ আসন (রায়পুরা) রাজনৈতিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও, ইতিহাসে একবার জাতীয় পার্টি এবং দুইবার বিএনপি এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছিল।

১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়ার নির্বাচনের পর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল আলী মৃধা বিজয়ী হন। তবে পরবর্তী সময়ে টানা সাতবার আওয়ামী লীগের রাজি উদ্দিন আহমেদ রাজু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, যার ফলে শেখ হাসিনা সরকারের আমল পর্যন্ত এই আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের ঘাঁটি।

তবে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রায়পুরা আসনে আবারও দৃশ্যপটে ফিরে এসেছে বিএনপি। আগত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অন্তত ছয়জন সম্ভাব্য প্রার্থী। প্রত্যেকেই এলাকাজুড়ে ব্যাপক গণসংযোগ, ব্যানার-ফেস্টুনে প্রচার ও ভোটারদের দোয়া চেয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম হলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক নির্বাহী কমিটির সদস্য জামাল আহমেদ চৌধুরী। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চারদলীয় জোটের হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন, চরাঞ্চলে মেঘনা সেতু এবং সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তিনি প্রস্তুত।

অপরদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল বলছেন, তিনি রাজপথে ছিলেন, এখনো আছেন এবং থাকবেন। দলের দুর্দিনে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বলেই তিনি মনোনয়নে সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করেন।

এমএন জামান, ঢাকা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক এবং রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হিসেবে নিজেকে গণসংযোগে ব্যস্ত রেখেছেন। দলীয় আন্দোলনের অন্যতম ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত জামান মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী।

তালিকায় আছেন জাহাঙ্গীর আলম বাদল, যিনি ২০১৮ সালেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এলাকাবাসীর জন্য শিক্ষা, গ্যাস সংযোগ ও নদীভাঙন প্রতিরোধে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। একইভাবে, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন শ্যামল, এবং জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল আমিন ভূঁইয়া রুহেলও মাঠে গণসংযোগে যুক্ত রয়েছেন।

নরসিংদী-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থী হিসেবে রায়পুরা সদর থানা আমির মাওলানা জাহাঙ্গীর আলমকে ঘোষণা করেছিল। তিনি দলীয় সভা-সমাবেশ ও স্থানীয় সামাজিক-ধর্মীয় কার্যক্রমে সক্রিয় থাকলেও ২২ মে তার প্রার্থিতা দলীয় সিদ্ধান্তে স্থগিত করা হয়। তিনি জানান, দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালে তিনি দলের স্বার্থে কাজ করবেন।

অন্যদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর নির্বাহী পরিচালক মাওলানা বদরুজ্জামান। উপজেলার একাধিক ইউনিয়নে তিনি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং মানুষের কাছে নৈতিকতা ও কল্যাণকামী রাষ্ট্রের বার্তা তুলে ধরছেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল্লাহ ফয়সাল। তবে এলাকায় এখনো পর্যন্ত তাকে কোনো গণসংযোগে দেখা যায়নি, যা এনসিপির নির্বাচনি প্রস্তুতির ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।

নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, ভোটের দিন সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতে ড্রোনের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এমন সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রার্থীদের ওপর চাপ ও শৃঙ্খলার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ