গাজায় শান্তির ভান, পেছনে বোমার বিস্ফোরণ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৮ ০৮:৩৩:৪২
গাজায় শান্তির ভান, পেছনে বোমার বিস্ফোরণ
ছবি: সংগৃহীত

গাজায় ঘোষিত আংশিক যুদ্ধবিরতির মাঝেও নির্বিচারে হামলা চালিয়ে অন্তত ৬৩ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। নিহতদের মধ্যে ৩৪ জনই ছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় খাদ্য, ওষুধ ও সহায়তার আশায় আসা সাধারণ ত্রাণপ্রার্থী। এই নৃশংস হামলা এমন সময় চালানো হলো, যখন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরাইল গাজায় মানবিক সহায়তার সুবিধার্থে প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ের জন্য সামরিক অভিযান স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল।

রোববার (২৭ জুলাই) আল-জাজিরা এবং রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ইসরাইলি সেনাবাহিনী সম্প্রতি গাজার আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা সিটি এলাকায় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সামরিক অভিযান স্থগিত রাখবে বলে ঘোষণা দেয়। উদ্দেশ্য ছিল ত্রাণ সরবরাহের পথকে উন্মুক্ত রাখা এবং সহিংসতাবিধ্বস্ত জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনা।

তবে বাস্তবতা ভিন্ন। যুদ্ধবিরতির সেই সময়সীমার মধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ড্রোন ও স্থলবাহিনীর অভিযান চালিয়ে বহু সাধারণ নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে এসেছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সূত্রের কাছ থেকে।

বিশেষ করে ত্রাণের জন্য অপেক্ষমাণ লোকজনের ওপর চালানো হামলায় প্রাণ হারানো ৩৪ জনের মৃত্যু আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

ইসরাইলি বাহিনী জানায়, যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি তারা প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত একটি ‘নিরাপদ করিডোর’ চালু রেখেছে, যাতে করে খাবার ও ওষুধবাহী গাড়িবহর গাজায় প্রবেশ করতে পারে। এই করিডোরটি আল-মাওয়াসি অঞ্চল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বলে জানানো হয়।

কিন্তু বাস্তবে এই করিডোরের নিরাপত্তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। জাতিসংঘসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা অভিযোগ করছে, গাজার ভেতরে প্রবেশে তাদের ব্যবহারের জন্য বিকল্প রুট ও নিরাপদ চলাচলের পর্যাপ্ত নিশ্চয়তা ইসরাইল দিচ্ছে না। এতে করে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং অনেক সময় তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে।

ইসরাইল দাবি করছে, তারা গাজাবাসীদের জন্য আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে। মিশরের সীমান্ত দিয়েও ত্রাণ সরবরাহে অংশ নিচ্ছে মিসরীয় সরকার। মিশরের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আল-কাহেরা নিউজ জানায়, রোববার থেকে রাফা সীমান্ত দিয়ে নতুন করে ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে শুরু করেছে। তবে মজুদ সংকট, বিতরণ বাধা এবং হামলার ঝুঁকির কারণে কার্যকর সহায়তা এখনো নিশ্চিত হয়নি।

জাতিসংঘ সম্প্রতি জানিয়েছে, সাময়িক মানবিক বিরতির মাধ্যমে গাজায় ত্রাণ সরবরাহের গতি কিছুটা বাড়ানো গেলেও ইসরাইল পর্যাপ্ত বিকল্প রুট না দেওয়ায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তারা আরও জানিয়েছে, নিরাপত্তাহীন পরিবেশে কার্যকর ত্রাণ তৎপরতা চালানো সম্ভব নয়, এবং যুদ্ধবিরতির শর্ত বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে না।

-রাফসান

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ