বাড়ি কিনলেই নাগরিকত্ব! ক্যারিবীয় দ্বীপে ভিড় বাড়াচ্ছেন ধনীরা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৮ ২১:৫৩:৫৬
বাড়ি কিনলেই নাগরিকত্ব! ক্যারিবীয় দ্বীপে ভিড় বাড়াচ্ছেন ধনীরা
ছবি: সংগৃহীত

ক্যারিবীয় দ্বীপগুলোতে এখন শুধু নয়নাভিরাম সৈকত নয়, বাড়ি কেনার সঙ্গে সঙ্গে মিলছে নাগরিকত্বও। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ধনীদের কাছে এই সুযোগ হয়ে উঠেছে বেশ আকর্ষণীয়। এই অঞ্চলের পাঁচটি দ্বীপরাষ্ট্র—অ্যান্টিগা ও বারবুডা, ডমিনিকা, গ্রেনাডা, সেন্ট কিটস ও নেভিস এবং সেন্ট লুসিয়া বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব (সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট, সিবিআই) দিচ্ছে। এর জন্য শুরুতে খরচ করতে হচ্ছে কমপক্ষে দুই লাখ মার্কিন ডলার।

এই নাগরিকত্ব পেলে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করা যায়, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের শেঙেন অঞ্চল। করমুক্ত সুবিধাও অনেকের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে—অনেক দ্বীপে কোনো পুঁজিগত লাভ কর, উত্তরাধিকার কর বা আয়ের ওপর কর নেই।

সম্প্রতি মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে এই প্রোগ্রামের জনপ্রিয়তা দ্রুত বেড়েছে। রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের মতে, অ্যান্টিগায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ক্রেতাই এখন নাগরিকত্ব চান, যার বড় অংশ মার্কিন। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা ও সামাজিক উদ্বেগ এসব সিদ্ধান্তের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স নামে একটি অভিবাসন পরামর্শদাতা সংস্থার তথ্যে জানা যায়, ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সিবিআই আবেদন ১২ শতাংশ বেড়েছে। তাদের মতে, আবেদনকারীদের মধ্যে মার্কিন নাগরিকের পাশাপাশি ইউক্রেন, তুরস্ক, চীন ও নাইজেরিয়ার নাগরিকদের উপস্থিতিও রয়েছে।

তবে সবাই নাগরিকত্ব পাওয়ার পর দ্বীপে গিয়ে বসবাস করেন না। অনেকেই এটি রাখেন ‘বিকল্প পরিকল্পনা’ হিসেবে। হেনলির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, অনেক আবেদনকারী নিরাপদ ও নিরপেক্ষ পাসপোর্টে যাতায়াতের সুবিধা খোঁজেন, যা ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত উভয় ক্ষেত্রেই কাজে লাগে।

তবে এই নাগরিকত্ব বিক্রির প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, পর্যাপ্ত যাচাই না থাকলে এই স্কিম কর ফাঁকি বা অর্থপাচারের পথ খুলে দিতে পারে। ইউরোপীয় কমিশন এই স্কিমগুলোর ওপর নজরদারি করছে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

আবার দ্বীপ দেশগুলোর নেতারা বলছেন, তাদের প্রোগ্রামগুলো স্বচ্ছ এবং নিরাপত্তা মান বজায় রেখেই পরিচালিত হচ্ছে। এই স্কিম থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে হাসপাতাল, পেনশন স্কিম এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর পুনর্গঠনে ব্যয় করা হয়েছে।

সম্পত্তি কিনে নাগরিকত্ব পাওয়ার বাইরে রয়েছে আরো কিছু পথ, যেমন—জাতীয় উন্নয়ন তহবিলে অনুদান বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ। অ্যান্টিগায় যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুদান দিয়ে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দ্বীপগুলো এখন একটি আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে কাজ করতে রাজি হয়েছে, যা আবেদন যাচাই ও নিরাপত্তা মান নিশ্চিত করবে। এতে যেমন বৈশ্বিক আস্থার উন্নয়ন হবে, তেমনি সিবিআই প্রোগ্রামের দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বও নিশ্চিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই মুহূর্তে দ্বীপগুলোর মোট দেশজ উৎপাদনের ১০ থেকে ৩০ শতাংশই আসে এই পাসপোর্ট বিক্রি কার্যক্রম থেকে। স্থানীয় সাংবাদিকদের মতে, এসব দেশেও সাধারণ মানুষ এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছে, কারণ এটি সরাসরি অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ