বিশেষ প্রতিবেদন

ভারতের গর্ব এস-৪০০ ধ্বংস: বাস্তবতা নাকি প্রচারযুদ্ধ?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০১ ১২:১৬:২৯
ভারতের গর্ব এস-৪০০ ধ্বংস: বাস্তবতা নাকি প্রচারযুদ্ধ?

দক্ষিণ এশিয়ায় চলমান সামরিক উত্তেজনার নতুন কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার একটি বিতর্কিত ঘটনা—ভারতের আদমপুরে মোতায়েন এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম ধ্বংস। পাকিস্তান সরাসরি দাবি করেছে যে, তাদের অপারেশন "বুনিয়ানুন মারসুস" এর আওতায় একটি ইন্ডিয়ান এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম ধ্বংস করা হয়েছে। অন্যদিকে ভারত সরকার তা অস্বীকার করলেও এখনও পর্যন্ত নিরপেক্ষ কোনো যাচাই বা স্বাধীন মিডিয়া পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনার সূচনা হয় ৯ মে, শুক্রবার, যখন ভারত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তানে সীমিত আকারে আক্রমণ চালায়। ধারণা করা হয়, এটি ছিল পূর্বের একটি অভিযানে পাকিস্তানের হাতে রাফালসহ পাঁচটি ফাইটার জেট হারানোর প্রতিশোধ। তবে পাকিস্তান এই অভিযানের সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরে পূর্বপ্রস্তুতি নেয় এবং ১০ মে পাল্টা হামলা শুরু করে, যার নাম দেওয়া হয় "অপারেশন বুনিয়ানুন মারসুস"। এই অভিযানে পাকিস্তান ৩৬টি লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করে এবং ২৬টি স্থানে আঘাত হানার দাবি করে। প্রধান টার্গেট ছিল ভারতীয় এস-৪০০ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম, ব্রাহ্মস ফ্যাসিলিটি এবং যুদ্ধবিমান ঘাঁটি।

এই অভিযানে পাকিস্তান সর্বাধুনিক যুদ্ধকৌশল প্রয়োগ করে। তারা প্রথমে ‘Suppression of Enemy Air Defenses (SEAD)’ মিশন চালায়, যার মাধ্যমে শত্রুর রাডার, সিগন্যাল ও কমিউনিকেশন সিস্টেম জ্যাম করা হয়। এরপর ‘Destruction of Enemy Air Defenses (DEAD)’ পর্যায়ে গিয়ে আদমপুরে মোতায়েন এস-৪০০ সিস্টেমকে সরাসরি টার্গেট করা হয়। পাকিস্তান JF-17 Thunder Block III বিমান থেকে উৎক্ষেপণ করে চীনা প্রযুক্তিনির্ভর CM-400AKG অ্যান্টি-রেডিয়েশন মিসাইল, যার টার্মিনাল গতি ঘণ্টায় প্রায় ৫,০০০ কিমি এবং গাইডেন্স সিস্টেম এমনভাবে নির্মিত যে ভারতীয় জ্যামিং ব্যবস্থা তা ঠেকাতে অক্ষম।

পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, আদমপুরের আকাশপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ওভারলোড ও বিভ্রান্ত ছিল, যার সুযোগে ওই হাইপারসনিক মিসাইল সরাসরি এস-৪০০ সিস্টেমে আঘাত হানে এবং তা ধ্বংস করে। তাদের আরও দাবি, এই হামলার ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট তাদের কাছে রয়েছে, যা তারা প্রকাশও করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, পাকিস্তান পুরো সময়টি জুড়ে নিজস্ব ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার অ্যাসেট দিয়ে ভারতীয় স্যাটেলাইট এবং রাডার সিগন্যাল জ্যাম করে রাখে, যার ফলে ভারত এস-৪০০ ব্যবস্থাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারেনি।

অন্যদিকে ভারত সরকার এস-৪০০ ধ্বংসের দাবি প্রত্যাখ্যান করে। তবে তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল ব্যতিক্রমী রকমের প্রতীকী—প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৩ মে আদমপুরে গিয়ে একটি এস-৪০০ লঞ্চারের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেন। কিন্তু সেই ভিডিও ঘিরে তৈরি হয় নতুন বিতর্ক। সেখানে একটি মাত্র লঞ্চার দেখা যায়, অথচ একটি এস-৪০০ ইউনিটে সাধারণত ২১টি ভেহিকেল থাকার কথা, যার মধ্যে রয়েছে চারটি লঞ্চার, দুটি রাডার, একটি কমান্ড ও কন্ট্রোল ইউনিট এবং পাওয়ার সাপ্লাই ভেহিকেল। মোদীর প্রকাশিত দৃশ্যপটে এসবের কিছুই নেই। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আদমপুরে মোতায়েন আসল সিস্টেমটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় অন্য কোথাও থেকে একটি লঞ্চার এনে “মিডিয়া স্টান্ট” করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, এস-৪০০ যদি অক্ষতই থাকত, তাহলে কেন আদমপুরসহ দক্ষিণ কাশ্মীর অঞ্চলে নতুন করে ইসরায়েলি বারাক এবং ভারতীয় আকাশ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন করা হলো? এটি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় যে পুরনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আর সক্রিয় নেই, এবং এস-৪০০ ধ্বংসের দাবি একেবারে অমূলক নয়। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে—ভারত যদি সত্যিই সত্য বলছে, তাহলে সাংবাদিকদের কেন ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি? কেন কোনো স্বাধীন পর্যবেক্ষক দলকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে দেওয়া হয়নি?

উল্লেখযোগ্যভাবে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগে ২০২৪ সালের এপ্রিল-মে মাসে ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার তিনটি এস-৪০০ সাইট ধ্বংস করেছে—ক্রিমিয়া, ঝাপরিজিয়া এবং মসপাইন এয়ারবেজে। রাশিয়ার মূল সংস্করণের চেয়েও ভারতের হাতে থাকা এস-৪০০ ভ্যারিয়েন্টটি তুলনামূলকভাবে প্রযুক্তিগতভাবে সীমিত এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে ডাউনগ্রেডেড। তাই পাকিস্তানের মতো একটি প্রযুক্তি-সক্ষম দেশ যদি এই ব্যবস্থা ভেদ করে থাকে, সেটি একেবারে অবাস্তব নয়।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত