বিশ্লেষণ
লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ: ভারতের কৌশলগত তৎপরতা

আহমেদ ইশতিয়াক
স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ঐতিহাসিক ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত এ বিমানবন্দরটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনীর একটি প্রধান বিমানঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো এবং একসময় এটি এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর হিসেবে স্বীকৃত ছিল। বহু বছর পরিত্যক্ত থাকার পর বাংলাদেশ সরকার বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট বিমানবন্দর পুনরায় চালু হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি, পর্যটন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটবে। এ সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি ঘিরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও। ভারতীয় গণমাধ্যম NDTV এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, বিমানবন্দরটি ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডর বা ‘চিকেনস নেক’-এর নিকটবর্তী হওয়ায় এটি ভারতের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
ভারত আশঙ্কা করছে, লালমনিরহাট বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে এবং ভবিষ্যতে সেখানে ফাইটার জেট, রাডার ও নজরদারি সরঞ্জাম বসানোর সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, যা তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ হতে পারে। বিমানবন্দরটি চালু হলে আন্তর্জাতিক যাত্রী ও কার্গো পরিবহন শুরু হতে পারে, যা সীমান্ত অঞ্চলে ভারতের নজরদারি এবং কৌশলগত পরিকল্পনায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিমানবন্দরটি বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে আঞ্চলিক ট্রানজিট হাব হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এতে বাংলাদেশের আঞ্চলিক যোগাযোগ ও প্রভাব বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভারতের দীর্ঘদিনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের ইতি টানতে পারে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয়েছে যে, লালমনিরহাট বিমানবন্দর একটি জাতীয় সম্পদ এবং এর ব্যবহার শুধুমাত্র জাতীয় স্বার্থে করা হবে। তবে, কৌশলগত অবস্থান বিবেচনায় অনেক ভারতীয় বিশ্লেষক ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা এটিকে একটি সম্ভাব্য হুমকি হিসেবেই দেখছেন।
এই পটভূমিতে ভারতও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। দেশটির ত্রিপুরা রাজ্যের তিন দশক ধরে বন্ধ থাকা কৈলাশহর বিমানবন্দর পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যে বিমানবন্দরটি পরিদর্শন করেছে। এলিয়েন্স এয়ার ও স্পিরিট এয়ার নামের দুটি বেসরকারি বিমান সংস্থা সেখানে বিমান চলাচলের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রাথমিকভাবে কৈলাশহর থেকে আগরতলা ও কলকাতার মধ্যে ছোট বিমানের চলাচল শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে, যদিও অপারেশনাল পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর পরিচালনা করতে হলে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আকাশসীমা, রুট, সময়সূচি ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত সমঝোতা প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে—বাংলাদেশের উদ্যোগে ভারত সহযোগিতা করবে, নাকি কৌশলগত আপত্তি তুলে দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার নতুন অধ্যায় সূচিত হবে?
লালমনিরহাট বিমানবন্দর ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন এক উত্তাপের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন ও সংযোগের প্রয়াস কতটা সফল হবে এবং এর জবাবে ভারতের পদক্ষেপ কতটা সহানুভূতিশীল বা প্রতিযোগিতামূলক হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে গেম্বলারদের দৌরাত্ম্য: আস্থা ফেরাতে চাই কঠোর শাস্তি ও কাঠামোগত সংস্কার
- বাংলাদেশে সেনা-সরকার উত্তেজনা ও ‘কু’ এর গুঞ্জন: নেপথ্যে কি?
- নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে কারা টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে?
- শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান: রাষ্ট্র নির্মাণের এক উজ্জ্বল প্রতিমূর্তি
- জবি’র সাবেক অধ্যাপক আনোয়ার বেগম হত্যাচেষ্টা মামলায় সুত্রাপুরে আটক
- তারকা পরিচিতি: রক্ষাকবচ না কি সমাজবিমুখ অব্যাহতি?
- সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা কর্মকর্তা নিহত
- দেশের ৬ জেলায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা, নদীবন্দরে ২ নম্বর সতর্কতা
- নাহিদের স্পষ্ট বার্তা: এনসিপিতে নেই দুই উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ
- বিএনপির সালাউদ্দিনকে নিয়ে কি লিখলেন প্রেস সচিব শফিকুল?
- “ভারতের দালালরা ঘাপটি মেরে বসে আছে”: মুফতি রেজাউল করিম
- সোনাক্ষীর ‘নিকিতা রায়’-এর মুক্তি পেছাল, ঘোষণা দিলেন নতুন তারিখ
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৪০৫ কোটি টাকার লোকসান
- "ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সব রাজনৈতিক দল অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে"
- জেনে নিন ঈদের ছুটিতে কোন কোন এলাকায় ব্যাংক খোলা থাকবে