বাবা ভাঙ্গা ভবিষ্যৎবাণী: আমেরিকার পতন, রাশিয়ার উত্থান, ইউরোপে মুসলিম শাসন

টুইন টাওয়ার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু কিংবা চেরনোবিল দুর্ঘটনা-যেসব ঘটনা যুগে যুগে বদলে দিয়েছে পৃথিবীর গতিপথ, সেগুলোর ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন এক দৃষ্টিহীন নারী, যিনি ইতিহাসে পরিচিত “ভাঙ্গা বলকানদের নস্ত্রাদামুস” নামে।

তিনি ছিলেন বুলগেরিয়ান আধ্যাত্মিক নারী বাবা ভাঙ্গা—একজন ভবিষ্যৎবক্তা, যিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯১১ সালে উত্তর মেসিডোনিয়ার এক পাহাড়ি গ্রামে। মাত্র ১২ বছর বয়সে এক ভয়াবহ ঝড়ে তার দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর থেকেই, তার মধ্যে আত্মপ্রকাশ করে এক রহস্যময় ‘দিব্যদৃষ্টি’। তখন থেকেই তিনি ভবিষ্যৎ দেখতে পান—যা বহু গবেষকের মতে আজও ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই মিলে গেছে।

২০২৫: বাবা ভাঙ্গার অশনি সংকেত

বাবা ভাঙ্গার একটি উল্লেখযোগ্য ও আজ আবারও আলোচনায় উঠে আসা ভবিষ্যৎবাণী ছিল সিরিয়ার পতন। তিনি বলেছিলেন, “যেদিন দামেস্ক ধ্বংস হবে, সেদিন থেকে শুরু হবে পূর্ব ও পশ্চিমের সর্ববৃহৎ সংঘর্ষ। এটি ঘটবে এক বসন্তে, যার পরিণতিতে পৃথিবী ঝুঁকে পড়বে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে।”

বর্তমানে HTS এর দখলে দামেস্কের পতন ঘটার প্রেক্ষাপটে, এই ভবিষ্যৎবাণী নতুনভাবে ভাবাচ্ছে বিশ্লেষকদের। যুদ্ধবিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিমা সামরিক জোটের সক্রিয়তা ও রাশিয়া-চীন জোটের উত্থান এক গভীর বৈশ্বিক সংঘাতের দিকে ইঙ্গিত করছে—যার ভবিষ্যৎবাণী বাবা ভাঙ্গা চার দশক আগেই করে গিয়েছিলেন।

ভিনগ্রহের প্রাণী ও রুশ একচ্ছত্র ক্ষমতা?

২০২৫ সাল নিয়ে বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর মধ্যে আরও একটি চমকপ্রদ দিক হলো ভিনগ্রহের প্রাণীর মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা। তিনি দাবি করেছিলেন, “২০২৫ সালেই এলিয়েন প্রথমবারের মতো তাদের উপস্থিতি পৃথিবীতে জানান দেবে।”

আরও বিস্ময়কর দাবি ছিল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্পর্কে। তার মতে, ভবিষ্যতে বিশ্বের একচ্ছত্র ক্ষমতা চলে যাবে রাশিয়ার হাতে। যুক্তরাষ্ট্রের পতন হবে, এবং রাশিয়া হয়ে উঠবে একমাত্র সুপারপাওয়ার। এই বক্তব্য অনেক সময় পাশ্চাত্যের ‘ভবিষ্যৎ বৈরী গোষ্ঠী বিশ্লেষণ’ হিসেবে গণ্য হলেও ইউক্রেন যুদ্ধ পরবর্তী বৈশ্বিক বাস্তবতায় এই দাবিগুলো নতুন আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।

ইসলামিক ইউরোপ ও বিশ্বব্যাপী কমিউনিজম?

বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণীতে ২০৪৩ সালকে ঘিরে রয়েছে আরেকটি বিস্ময়কর ইঙ্গিত—“ইউরোপ শাসন করবে মুসলিমরা”। আর ২০৭৬ সাল নাগাদ পৃথিবীতে পুনরায় ফিরে আসবে কমিউনিজম, যে মতবাদ বিশ্বব্যবস্থার কেন্দ্র থেকে অনেকখানি সরে গেছে। তবে বর্তমান বিশ্বের ক্রমবর্ধমান আর্থসামাজিক অসন্তোষ, রাষ্ট্রপুঞ্জে দ্বিধাবিভক্ত অবস্থান এবং একধরনের সমাজতান্ত্রিক ঢেউ আবারো উত্থান ঘটাতে পারে—যা এই ভবিষ্যদ্বাণীর আভাস দিচ্ছে।

৫০৭৯ সাল: পৃথিবীর শেষ?

সবচেয়ে ভয়াবহ ও বহুল আলোচিত বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণী হলো ৫০৭৯ সাল। তিনি বলেন, “এই সালেই মানব সভ্যতা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হবে।” তবে তা কোনো পরমাণু যুদ্ধ বা মানুষের কর্মকাণ্ডে নয়—প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহাজাগতিক ধ্বংসই পৃথিবীকে গ্রাস করবে। বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের মতে, এটি হয়তো কোনো বিশাল গ্রহাণু, সৌরঝড় কিংবা মহাবিশ্বীয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে বাবা ভাঙ্গা

১৯৯৬ সালে ৮৪ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তার জীবন নিয়ে রাশিয়ায় নির্মিত হয়েছে ২৪ পর্বের টিভি সিরিজ “ভাঙ্গেলিয়া”, যা আজও ইউরোপের অনেক অঞ্চলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।