মাইলস্টোন দুর্ঘটনা

গিটার বাজানো ছেলেটি আজ চিরনিদ্রায়—মাইলস্টোন স্কুল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল উক্যচিংয়ের

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৩ ১২:৪৯:১৯
গিটার বাজানো ছেলেটি আজ চিরনিদ্রায়—মাইলস্টোন স্কুল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল উক্যচিংয়ের
ছবি: সংগৃহীত

‘আমার বুকের মানিক আগুনে ঝলসে গেছে। অনেক কষ্ট পেয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলো। কিছুই করতে পারিনি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ।’—চোখে জল আর কাঁপা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাসিন্দা উসাই মং মারমা, যিনি ঢাকায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী উক্যচিং মারমার বাবা।

উসাই মং মারমা জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি ঢাকায় ছুটে যান। কিন্তু শেষবারের মতো ছেলের সঙ্গে কথা বলার সুযোগও পাননি। বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সপ্তম শ্রেণির এই ছাত্র।

উক্যচিং ছিলেন শিক্ষক দম্পতি উসাই মং মারমা ও তেজিপ্রু মারমার একমাত্র সন্তান। উন্নত শিক্ষার আশায় ছেলেকে হোস্টেলে রেখে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন তাঁরা। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী, শান্ত স্বভাবের ছেলে উক্যচিংয়ের স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। গাড়ি, টিভি কিংবা মোবাইল দেখলেই বলে দিতে পারতো মডেল ও ব্র্যান্ডের নাম। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রতি ছিল গভীর আগ্রহ। পাশাপাশি গিটার বাজাতো, গান গাইতো, সৃজনশীল কাজেও পারদর্শী ছিল।

বাবা বলেন, ছোট থেকেই নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে উক্যচিং। এক বছর আগে অসুস্থ হয়ে দুই মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য ঋণ করে টাকা জোগাড় করতে হয়েছিল। এখনও সেই ঋণ শোধ হয়নি। ‘আমরা কষ্ট করেছি, কিন্তু ওর জন্য কখনো কিছু কম করিনি।’

মৃত্যুর আগে ছেলের সঙ্গে শেষ কথোপকথনের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একদিন আগেই কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম, আগামী ১৫ তারিখে ঢাকায় যাবো, যা যা দরকার সব কিনে দেবো। এখন সব স্মৃতি হয়ে গেছে।’

উক্যচিংয়ের আত্মীয়রাও তার দেখভাল করতেন ঢাকায়। মাসি-পিসিরা মাঝে মাঝে তাকে বাইকে করে ঘুরতে নিয়ে যেতেন, মোরগ পোলাও খাওয়াতেন—উক্যচিংয়ের প্রিয় খাবার। বাবা বলেন, ‘এখন আর কেউ মোরগ পোলাও খেতে চাইবে না, আর কখনো ফিরেও আসবে না আমার বুকের ধন।’

আজ বুধবার বিকেল ৩টায় রাঙ্গামাটির বাঙ্গালহালিয়া হেডম্যান পাড়া কেন্দ্রীয় মারমা শ্মশানে উক্যচিংয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ