বাংলাদেশ ব্যাংকে বাড়ছে উদ্বৃত্ত তারল্য, রেমিট্যান্স ও রিজার্ভে ইতিবাচক অগ্রগতি

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৩ ১১:৫৯:১২
বাংলাদেশ ব্যাংকে বাড়ছে উদ্বৃত্ত তারল্য, রেমিট্যান্স ও রিজার্ভে ইতিবাচক অগ্রগতি
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই ও আগস্টে ছাত্র ও জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও, জুন শেষে দেশের আর্থিক খাতে এক ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন মাস শেষে ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট তারল্যের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রয়োজনীয় সর্বনিম্ন তারল্য ছিল ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। ফলে নিট উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়ায় ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংক অনুযায়ী বিশ্লেষণে দেখা যায়, সরকারি ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত তারল্য ৮৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা, বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকে ৩৩ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। তবে ইসলামী ব্যাংক খাতে ৪৩৩ কোটি টাকা এবং বিশেষায়িত ব্যাংকে ৬২ কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে।

অর্থনীতিতে এই ইতিবাচক অবস্থানের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। শুধু জুন মাসেই এসেছে ২ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার—যা আগের বছরের জুন মাসের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বেশি।

ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী জানিয়েছেন, সরকার পরিবর্তনের পর সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বিনিয়োগে গতি আসেনি। উচ্চ সুদের কারণে অনেক উদ্যোক্তা ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকছেন, যার ফলে ব্যাংকগুলোর কাছে তারল্য জমা থাকছে।

অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ ও চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ-এর রিসার্চ ফেলো এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ বাড়ায় রিজার্ভে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। হুন্ডির প্রবণতা কমে যাওয়ায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স বেড়েছে, যা ডলারের ওপর চাপ কমিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৫০৩ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জুনে ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় হার ছিল ১২২ টাকা ৭৭ পয়সা, যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি।

সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিস্থিতিও উল্লিখিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। মে মাস পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে নিট সরকার ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এই অবস্থানকে দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “সরকার পরিবর্তনের পর অর্থনীতিতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তারল্য ও রিজার্ভ বেড়েছে, ডলারের বাজার স্থিতিশীল হয়েছে। সব মিলিয়ে এটি ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক।”

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ