ছাত্র আন্দোলনে গুলির নির্দেশনা? সাবেক ডিসি ইকবাল হোসাইন বরখাস্ত

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৩ ১১:৩১:৪১
ছাত্র আন্দোলনে গুলির নির্দেশনা? সাবেক ডিসি ইকবাল হোসাইন বরখাস্ত

সরকারি অনুমোদন ছাড়াই দীর্ঘ সময় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বর্তমানে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত এই পুলিশ কর্মকর্তা গত বছরের ২৮ আগস্ট থেকে কোনো প্রকার সরকারি অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী এটি ‘পলায়নের শামিল’ হিসেবে বিবেচিত এবং গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। সেই ভিত্তিতেই ২৩ জুলাই প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে তাকে কার্যকরভাবে বরখাস্ত করা হয়।

এই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এলো, যখন কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা নিয়ে ব্যাপক জনসমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। আন্দোলন দমন করতে গিয়ে ছাত্র ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর পুলিশ যেভাবে গুলি চালিয়েছে, তার একটি ভিডিও ক্লিপ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ঘিরে রয়েছেন একাধিক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা। এদের মধ্যে মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন একটি মোবাইল ফোনে আন্দোলন দমনে পুলিশের গুলির দৃশ্য দেখিয়ে বলছেন, “গুলি করে করে লাশ নামানো লাগছে স্যার। গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।”

ভিডিওটি ৪৩ সেকেন্ডের হলেও, তাতে ধরা পড়ে যায় রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের ভয়াবহ চিত্র। জানা গেছে, এটি ধারণ করা হয় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের কাঁধের পেছন থেকে। ভিডিওতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চোখে-মুখে কোনো প্রতিক্রিয়ার ছাপ ছিল না, যা অনেককে স্তব্ধ করে দেয়।

সরকারি পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে, মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন কর্মস্থলে দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থেকেছেন, যা একটি শৃঙ্খলাবিরোধী অপরাধ। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি খোরপোষ ভাতা পাবেন।

এ ধরনের অনুপস্থিতির জন্য গত কয়েক মাসে প্রায় ২৫ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। তবে ইকবাল হোসাইনের ক্ষেত্রে এটি শুধুমাত্র প্রশাসনিক শাস্তি নয়, বরং এটি প্রতীকী একটি পদক্ষেপ হিসেবেও দেখা হচ্ছে যেখানে সরকারের তরফে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়কার বিতর্কিত ভূমিকার প্রতি দৃষ্টান্তমূলক অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে।

এই বরখাস্তের খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি আন্দোলন দমনে পুলিশের ভূমিকার স্বীকৃতি ও দায় চাপানোর প্রচেষ্টা। অন্যদিকে, কেউ বলছেন, এই ভিডিও এবং বরখাস্তের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় দমননীতির বাস্তবতা আরও পরিষ্কার হয়েছে।

এছাড়া প্রশ্ন উঠেছে শুধু একজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলেই কি পুরো দমন-পীড়নের দায় মেটানো সম্ভব? ভিডিওতে উপস্থিত অন্য কর্মকর্তাদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ