বিচারহীনতার সংস্কৃতিই জন্ম দিচ্ছে খুন ও সন্ত্রাস—মামুনুল হক

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ২০:১৯:০৯
বিচারহীনতার সংস্কৃতিই জন্ম দিচ্ছে খুন ও সন্ত্রাস—মামুনুল হক

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় গভীর শোক ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দলটি।

শনিবার (১২ জুলাই) সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মাসিক সভায় দলটির আমির মাওলানা মামুনুল হক এই মন্তব্য করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়ের আলোচিত সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, দেশের প্রতিটি ব্যবসাকেন্দ্র, দোকান, পরিবহন ও নির্মাণ খাত এখন চাঁদাবাজদের দখলে চলে গেছে। এই চাঁদাবাজির সংস্কৃতি কোনো একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং তা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় মদদে বিকাশ লাভ করেছে। মামুনুল হক জানান, এখন শুধু ব্যবসায়ীই নয়, ইমাম, খতিব ও আলেমরাও নিরাপদ নন—সন্ত্রাসের কবলে পড়ে রয়েছেন তাঁরাও।

তিনি সোহাগ হত্যাকাণ্ডকে একটি জাতিগত ব্যর্থতা ও রাষ্ট্রীয় দুর্বলতার চূড়ান্ত প্রতিচ্ছবি হিসেবে উল্লেখ করেন। শত শত মানুষের সামনে এক ব্যক্তিকে নির্মমভাবে হত্যা করা যে সমাজে ঘটে, সে সমাজের বিচারব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলার অবস্থা যে কতটা ভঙ্গুর, সেটাই এতে প্রমাণিত হয়। মামুনুল হকের মতে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এই ধরনের অপরাধকে উৎসাহিত করছে, যা রাষ্ট্র ও জাতির জন্য লজ্জাজনক।

সভায় তিনি নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাবও রাখেন। তিনি বলেন, দেশে এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেখানে সংসদের নিম্নকক্ষে আংশিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক পদ্ধতি (PR) চালু থাকবে। এতে করে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে এবং দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্য কমবে বলে তিনি মত দেন।

বৈঠকে দলটির অন্য নেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সরকার দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। প্রশাসনের একাংশের দুর্নীতিগ্রস্ত ভূমিকার কারণে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী চক্রগুলো দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষ আজ চরম অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

এছাড়া জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় বাংলাদেশে স্থাপনের বিরোধিতা জানায় দলটি। খেলাফত মজলিসের মতে, এটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং ইসলামি জীবনধারা ও জাতীয় সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের ওপর একটি বৈশ্বিক আগ্রাসনের অংশ। তারা দাবি করে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এখন সেই আন্তর্জাতিক এজেন্ডার বাহক হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর আশপাশের উপদেষ্টারা দীর্ঘদিন ধরেই ইসলামী মূল্যবোধ ও পারিবারিক কাঠামোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন।

বৈঠকে খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা এই অবস্থান থেকে জানান, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস এবং আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি সুদৃঢ় ও সুসংহত জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ