সেই এয়ার ইন্ডিয়ার বিধ্বস্ত ফ্লাইট তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ০৯:৪৪:১৭
সেই এয়ার ইন্ডিয়ার বিধ্বস্ত ফ্লাইট তদন্তে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

ভারতের আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উড্ডয়নের মাত্র তিন সেকেন্ডের মাথায় বিমানের উভয় ইঞ্জিনের জ্বালানি সরবরাহ হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়। গত মাসে সংঘটিত এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় যাত্রী, ক্রু এবং ভূমিতে অবস্থানকারী মানুষের মিলিয়ে ২৬০ জন প্রাণ হারান।

শনিবার (১২ জুলাই) ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অধীনস্থ দুর্ঘটনা তদন্তকারীদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের ফ্লাইট AI171 উড্ডয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। গতি হারিয়ে বিমানটি নিচের দিকে নেমে আসে এবং ভয়াবহভাবে বিধ্বস্ত হয়। তদন্তকারীরা বলছেন, উড্ডয়নের তিন সেকেন্ডের মাথায় বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচগুলো ‘অন’ থেকে ‘কাটঅফ’ অবস্থানে চলে যায়, যার ফলে ইঞ্জিনে জ্বালানি প্রবাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে।

প্রতিবেদনে ককপিট ভয়েস রেকর্ডারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এক পাইলট অপর পাইলটকে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি জ্বালানি বন্ধ করেছ কেন?” উত্তরে অপর পাইলট জানান, তিনি এমন কিছু করেননি। এই কথোপকথন কে ক্যাপ্টেন নাকি ফার্স্ট অফিসার এ বিষয়ে প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি। এমনকি ‘মে ডে’ সংকেত পাঠানোর বিষয়েও কোনো নির্দিষ্টতা নেই।

এ নিয়ে মার্কিন বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জন কক্স বলেন, বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা সহজে সরানো যায় না। ইচ্ছাকৃতভাবে নাড়াচাড়া না করলে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। তিনি বলেন, "এগুলো এমন নয় যে সামান্য নড়াচড়া করলেই বন্ধ হয়ে যাবে।" একই অভিমত ব্যক্ত করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ডেভিড সোসি, যিনি বলেন, "এই ধরনের সুইচ অপারেশন অত্যন্ত সচেতন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে করতে হয় এটা দুর্ঘটনাবশত হয় না।"

সাধারণত এই কাটঅফ সুইচ ব্যবহৃত হয় বিমান যখন গন্তব্যে পৌঁছে গেটের সামনে থামে কিংবা যদি ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়, এমন জরুরি পরিস্থিতিতে। কিন্তু AI171 ফ্লাইটে এমন কোনো পরিস্থিতি ছিল কি না, সে সম্পর্কে প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি।

উল্লেখযোগ্যভাবে, তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বোয়িং কোম্পানি কিংবা এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে কোনো সুপারিশ বা প্রযুক্তিগত ঘাটতির কথা উল্লেখ করেনি। ফলে দুর্ঘটনার দায় এখনো পুরোপুরি কারও ওপর নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে।

দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোদের মধ্যে ছিলেন ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, সাতজন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডিয়ান নাগরিক। এছাড়া, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় মাটিতে থাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের বেশ কয়েকজন বাসিন্দাও নিহত হন। এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতে মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬০ জনে।

এয়ার ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করছে এবং নিহতদের পরিবারের পাশে রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, "ফ্লাইট AI171-এর মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাই। এই দুঃসময়ে আমরা তাদের পাশে আছি।"

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ