গাজার মানুষেরা জোরপূর্বক অনাহারের শিকার

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ৩১ ০৯:৪৪:৫০
গাজার মানুষেরা জোরপূর্বক অনাহারের শিকার

গাজায় ইসরায়েলের কারণে মানুষের অনাহারকে "জোরপূর্বক চাপ" হিসেবে উল্লেখ করে সেটিকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছেন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার। তিনি বলেন, গাজার সীমান্তে খাবার জমা থাকলেও ইসরায়েল তা সেখানে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না, ফলে সাধারণ মানুষ মারাত্মক দুর্ভোগের মুখে পড়ছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফ্লেচার বলেন, “হ্যাঁ, এটা যুদ্ধাপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। আদালতই এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দেবেন, তবে ইতিহাস এর বিচার করবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা শুনছি, ইসরায়েলি মন্ত্রীরা বলছেন গাজার মানুষদের ওপর চাপ তৈরি করার জন্য তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।”

সম্প্রতি গাজা পরিস্থিতি নিয়ে করা এক মন্তব্যের জন্য ফ্লেচার দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি পূর্বে বলেছিলেন, “সহায়তা না পৌঁছালে ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে।” পরে জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যান সংশোধন করে জানায়, এটি অতিরঞ্জিত ছিল। ফ্লেচার স্বীকার করেছেন, ভাষা ব্যবহারে আরও নির্ভুল হওয়া প্রয়োজন।

গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছিল। প্রায় তিন মাস পর সামান্য পরিমাণে খাবার, ওষুধ, জ্বালানি ও আশ্রয় সামগ্রী প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু এরই মাঝে ১৮ মার্চ থেকে আবার নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা দাবি করছে, গাজায় এখনো আটক থাকা ৫৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি মুক্ত করতে এই চাপ প্রয়োগের কৌশল নেওয়া হয়েছে।

অবরোধ শিথিলের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়। তবে জাতিসংঘ এই সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এক ঘটনায় ত্রাণ বিতরণের সময় ৪৭ জন আহত হওয়ার খবর দিয়েছে জাতিসংঘ।

ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ সম্প্রতি বলেন, “গাজার মানুষ যেন বুঝে নেয় তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই এবং তারা যেন অন্য কোথাও গিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে বাধ্য হয়।” এই মন্তব্যকে নৈতিকভাবে বিপজ্জনক ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছেন ফ্লেচার।

তিনি বলেন, “ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উচিত স্মোট্রিচের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া। বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে, এবং আমরাও সে অবস্থানেই আছি।”

গাজায় ইসরায়েলের হামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনা বেড়েই চলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক কাজা কালাস বলেন, “হামাসের বিরুদ্ধে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।” জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎর্স বলেন, “ইসরায়েলের প্রকৃত লক্ষ্য কী—তা এখন আর বোঝা যাচ্ছে না।”

চলতি মাসের শুরুতেই যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার নেতারা গাজায় অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতির আহ্বান জানালে, নেতানিয়াহু পাল্টা অভিযোগ তোলেন—এই নেতারা “হামাসের পক্ষ নিচ্ছেন”।

গাজার মানবিক সংকট নিয়ে জাতিসংঘ, ইউরোপ, এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মুখে ইসরায়েলের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের প্রসঙ্গ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক চাপ আরও তীব্র হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে কূটনৈতিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত