আইন উপদেষ্টা
শেখ হাসিনার বিচারের শুনানি শুরু অচিরেই: আসিফ নজরুল

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকা অভিযোগে দায়ের করা মামলার শুনানি পর্যায় শিগগিরই শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “এই সরকারের সময়েই এই মামলার বিচার ও রায় দেখতে পাব আমরা।”
তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত চাঁনখারপুল গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এখন আনুষ্ঠানিক বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ফেসবুক পোস্টে আইন উপদেষ্টার মন্তব্য
আসিফ নজরুল তার পোস্টে লিখেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া সমাজে দৃশ্যমান করার দাবি দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। সেই প্রক্রিয়াটি গত আট মাস আগে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুনর্গঠনের মাধ্যমে। এরপর তদন্তকারী অফিস ও প্রসিকিউশন ইউনিট পুনর্গঠিত হয়েছে। তদন্ত শেষ করে একটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে এবং আদালত তা আমলে নিয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান আসামি শেখ হাসিনার মামলার শুনানি শিগগির শুরু হবে। ইনশাআল্লাহ, ড. ইউনূস স্যারের সরকারের শাসনকালেই আমরা এই ঐতিহাসিক বিচারের রায় পাবো।”
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, ঢাকার চাঁনখারপুল এলাকায় নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক গুলি চালায় বলে অভিযোগ উঠে। এতে নিহত হন অন্তত ছয়জন আন্দোলনকারী শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া।
ঘটনাটিকে একটি পরিকল্পিত ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা দায়ের করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে
এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ মোট আটজনকে আসামি করেছে, যাদের সবাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা। অভিযুক্তরা হলেন সাবেক ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ইমন এবং মো. নাসিরুল ইসলাম। এই আট আসামির মধ্যে চারজন বর্তমানে কারাগারে আছেন, আর বাকি চারজন পলাতক রয়েছেন।
২০২৫ সালের ২১ এপ্রিল মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে সেই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে রাষ্ট্রপক্ষ ২৫ মে মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র (Formal Charge) ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়, যা আদালত একই দিনে আমলে নেয়। এর মাধ্যমে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
এই মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠনের পর প্রথম দৃশ্যমান পদক্ষেপ। আদালতের বিচারক ও প্রসিকিউশন ইউনিট আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে তদন্ত ও অভিযোগ দাখিলের প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে।
এটি বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদলেই পরিচালিত হলেও, বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া প্রথম মামলা, যা আইনি ও রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ।
সরকার সমর্থিত বিভিন্ন পক্ষ এবং আওয়ামী লীগের নেতারা এই মামলাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তারা বলছেন, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হেয় করার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালকে ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে, গণতন্ত্রপন্থী এবং নাগরিক আন্দোলন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো এ বিচারকে জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিচারিক প্রক্রিয়া আইনি স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে পরিচালিত হলে এটি দেশের বিচারব্যবস্থার জন্য একটি মাইলফলক হয়ে উঠবে। একইসঙ্গে এটি অতীতের মতো রাজনৈতিক প্রভাবের ছাপমুক্ত রাখতে না পারলে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে পারে।
-ফারহান, নিজস্ব প্রতিবেদক
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে গেম্বলারদের দৌরাত্ম্য: আস্থা ফেরাতে চাই কঠোর শাস্তি ও কাঠামোগত সংস্কার
- বাংলাদেশে সেনা-সরকার উত্তেজনা ও ‘কু’ এর গুঞ্জন: নেপথ্যে কি?
- নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে কারা টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে?
- জবি’র সাবেক অধ্যাপক আনোয়ার বেগম হত্যাচেষ্টা মামলায় সুত্রাপুরে আটক
- সেনাপ্রধানের বক্তব্য, জুলকারনাইন তাতে যা বললেন!
- তারকা পরিচিতি: রক্ষাকবচ না কি সমাজবিমুখ অব্যাহতি?
- নাহিদের স্পষ্ট বার্তা: এনসিপিতে নেই দুই উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ
- বিএনপির সালাউদ্দিনকে নিয়ে কি লিখলেন প্রেস সচিব শফিকুল?
- সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা কর্মকর্তা নিহত
- বাংলাদেশে আন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে মৌলিক অধিকার হুমকিতে
- মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত
- ডিসেম্বরে নির্বাচন চান সেনাপ্রধান
- "ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সব রাজনৈতিক দল অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে"
- জেনে নিন ঈদের ছুটিতে কোন কোন এলাকায় ব্যাংক খোলা থাকবে
- ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের পর চীনের পুরস্কার