আল জাজিরার প্রতিবেদন
মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার, সেনাবাহিনী এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক এখন এক জটিল এবং উত্তপ্ত মোড় নিয়েছে। জাতীয় নির্বাচন, ক্ষমতা হস্তান্তর, নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সংস্কার—এসব ইস্যুতে ক্রমশ বাড়ছে মতবিরোধ। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্ব ও সরকারের স্থায়িত্ব নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে।
সেনাবাহিনী বনাম প্রশাসন:
২০ মে অনুষ্ঠিত একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। তবে এটি এমন এক সময় হলো, যখন সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সেনাপ্রধানের দাবি, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত; অন্যদিকে ইউনূস প্রশাসন বলছে, ২০২৬ সালের আগে কোনো ভোট নয়।
জেনারেল ওয়াকার স্পষ্ট করে বলেন, “সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য, পুলিশের কাজ করার জন্য নয়।” তিনি একে দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন এবং বলেছেন, নির্বাচন শেষে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফেরানো উচিত।
পদত্যাগ গুজব ও বাস্তব সংকট
গত সপ্তাহে মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুজব ছড়ালে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনার সৃষ্টি হয়। যদিও উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর এ দাবি নাকচ করা হয়, কিন্তু ভেতরের সূত্র বলছে, ইউনূস বাস্তবিকই পদত্যাগের কথা বিবেচনা করছিলেন। তার দাবি, “বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা খুব কম,” এবং যেকোনো ভোট যদি কারচুপির শিকার হয়, তিনি তার দায় নিতে রাজি নন।
এ বক্তব্য ইঙ্গিত করে, তিনি সরকারের ওপর রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে মনে করছেন। বিশেষত পুলিশ প্রশাসন, রাজস্ব বোর্ড ও সেনাবাহিনী—সব কটি অঙ্গই এখন তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক
সেনাপ্রধানের মতে, একাধিক বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত “সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস” করছে। যেমন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডর খোলা, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি ব্যবস্থাপনায় দেওয়া বা স্টারলিংক চালু করার মতো উদ্যোগে সেনাবাহিনী ‘কড়া আপত্তি’ জানিয়েছে।
জেনারেল ওয়াকারের ভাষায়, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত শুধু একটি নির্বাচিত সরকারই নিতে পারে।” তার বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি ইউনূস প্রশাসনের সার্বিক বৈধতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের নৈতিক ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন।
রাজনৈতিক চাপ ও BNP-এর দাবি
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি একদিকে চায় নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হোক, অন্যদিকে কয়েকজন উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করছে। তারা নির্বাচন না হলে সরকারকে সহযোগিতা বন্ধের হুমকি দিয়েছে। যদিও তারা বলছে, ইউনূসের পদত্যাগ চায় না।
বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, “আমরা চাই ইউনূস একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।” তবে তিনি বলেন, বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে একটি ছোট আকারের নিরপেক্ষ উপদেষ্টা দল গঠনের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
রাজনৈতিক সংস্কার ও ইউনূসের ব্যর্থতা
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে প্রস্তাবিত নানা সংস্কার উদ্যোগ, যেমন এনবিআর ভেঙে দুটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছে। এটি সরকারের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণহীনতা ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া সংস্কার কার্যকর নয়। আন্দোলন ও অচলাবস্থার মধ্যে পড়ে ইউনূস নিজেকে ‘জিম্মি’ বোধ করছেন, এবং সেটা তাঁর অবস্থানকে দুর্বল করে তুলছে।বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট এখন নেতৃত্ব সংকটে পর্যবসিত হয়েছে। সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের টানাপোড়েনের কেন্দ্রে এখন মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই চাপ বাড়ছে—এবং উত্তেজনা নিরসনের কোনো তাৎক্ষণিক উপায় চোখে পড়ছে না।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে গেম্বলারদের দৌরাত্ম্য: আস্থা ফেরাতে চাই কঠোর শাস্তি ও কাঠামোগত সংস্কার
- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের দীর্ঘ ছুটি, চালু থাকবে জরুরি সেবা
- বাংলাদেশে সেনা-সরকার উত্তেজনা ও ‘কু’ এর গুঞ্জন: নেপথ্যে কি?
- নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে কারা টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে?
- সেনাপ্রধানের বক্তব্য, জুলকারনাইন তাতে যা বললেন!
- নাহিদের স্পষ্ট বার্তা: এনসিপিতে নেই দুই উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ
- তারকা পরিচিতি: রক্ষাকবচ না কি সমাজবিমুখ অব্যাহতি?
- বিএনপির সালাউদ্দিনকে নিয়ে কি লিখলেন প্রেস সচিব শফিকুল?
- বাংলাদেশে আন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে মৌলিক অধিকার হুমকিতে
- সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা কর্মকর্তা নিহত
- ডিপ্লোমেটিক শেকআপ: জসীম উদ্দিন দূতাবাসে , সচিব হচ্ছেন নজরুল
- মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত
- ইউজিসি-ম্যাকগিল পিএইচডি স্কলারশিপ: শুধুমাত্রবাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য
- ডিসেম্বরে নির্বাচন চান সেনাপ্রধান
- "ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সব রাজনৈতিক দল অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে"