পবিত্র হজ: এক আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের ইতিহাস

সত্য নিউজইসলাম ডেস্ক: প্রতি বছর যখন লাখো মুসলমান সাদা কাপড়ে জড়ানো অবস্থায় কাবার উদ্দেশে যাত্রা করেন, তখন সেই দৃশ্য শুধু একটি ইবাদতের প্রতিফলন নয়, বরং হাজার বছরের এক ঐতিহাসিক ধারার অংশ হয়ে ওঠে। হজ ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি, যা কেবল শারীরিক কর্ম নয়, বরং আত্মিক, ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। এই ইবাদতের পেছনে আছে বিস্ময়কর সব কাহিনি—আদি মানব থেকে শুরু করে নবী ইবরাহিম (আ.) এবং সর্বশেষে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে পূর্ণতা পাওয়া এক ঐশী সফর।
আদি সূচনা: ফেরেশতাদের নির্মিত কাবা ও আদম (আ.)-এর ইবাদত
ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, কাবা পৃথিবীর প্রথম ঘর যা মানুষের ইবাদতের জন্য নির্ধারিত হয়েছিল। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “নিঃসন্দেহে প্রথম ঘর যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছিল, তা মক্কায়।” হাদিস ও কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী, কাবা ঘর প্রথম নির্মাণ করেছিলেন ফেরেশতারা, আল্লাহর নির্দেশে। পরে হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে মিলিত হওয়ার পর, আদম (আ.) আল্লাহর নিকট ইবাদতের স্থান কামনা করেন। তখন ফেরেশতারাই তাঁকে পথ দেখান এবং একটি ঘর নির্মাণের নির্দেশ দেন, যা ছিল স্বর্গীয় ঘর ‘বাইতুল মামুর’-এর প্রতিরূপ। সেখানে তিনি আল্লাহর ইবাদত শুরু করেন, আর সেটিই ছিল হজের প্রাথমিক রূপ।
ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.): হজের রূপকার
পরে নূহ (আ.)-এর সময় এক মহাপ্লাবনে কাবা ঘর বিলীন হয়ে যায়। বহু বছর পর, আল্লাহর আদেশে ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.) মক্কায় সেই পুরাতন জায়গায় কাবাঘর পুনরায় নির্মাণ করেন। আল্লাহ তাঁদের মাধ্যমে হজের নিয়মাবলি নির্ধারণ করেন। ইবরাহিম (আ.)-কে হজের রীতি শেখানো হয় ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে। তাঁরা কাবার তাওয়াফ করেন, জমজম কূপ আবিষ্কৃত হয়, হাজেরা (আ.)-এর সাফা-মারওয়ার মধ্যকার দৌড় সংযোজন হয় এবং শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ ও কোরবানির রীতি চালু হয়। এসব ঘটনাই আজকের হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে বিবেচিত হয়।
প্রাক-ইসলামি যুগে হজ: বিকৃতি ও বিভ্রান্তি
ইবরাহিম (আ.)-এর মৃত্যুর বহু বছর পর হজের প্রকৃত রূপ বিকৃত হয়ে পড়ে। আরবের কুরাইশসহ বিভিন্ন গোত্র কাবা ঘরকে কেন্দ্র করে মূর্তি পূজায় লিপ্ত হয়। হজের সময় মানুষ নগ্ন হয়ে তাওয়াফ করত এই বিশ্বাসে যে, পোশাক তাদের গুনাহর স্মারক। হজ পরিণত হয় সামাজিক উৎসবে— মদ, গান, জুয়া ও অশ্লীলতায় ভরে যায় এই পবিত্র সময়। কোরবানির মাংস কাবার সামনে ফেলে রেখে বলা হতো— এটি আল্লাহর জন্য। এভাবে আত্মশুদ্ধির ইবাদত হজ এক বিভ্রান্ত সংস্কারে পরিণত হয়।
ইসলামি যুগে নবজাগরণ: হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পুনঃপ্রবর্তন
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আবির্ভাবের পর ইসলাম আবার ইবরাহিম (আ.)-এর প্রকৃত পথকে ফিরিয়ে আনে। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পর তিনি কাবাঘরকে মূর্তিমুক্ত করেন এবং ঘোষণা দেন— হজ হবে শুধু আল্লাহর নামে। নবম হিজরিতে হজ ফরজ করা হয় এবং পরের বছর রাসুল (সা.) আবু বকর (রা.)-কে পাঠান হজ পরিচালনার জন্য। সেই হজে মুশরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়, নগ্ন হয়ে তাওয়াফের রীতি বাতিল করা হয় এবং ইসলামী বিধি অনুযায়ী হজ আদায়ের নতুন যুগ শুরু হয়।
বিদায় হজ: একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত
দশম হিজরিতে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে হজে অংশগ্রহণ করেন— এটিই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র হজ এবং মুসলমানদের জন্য চিরন্তন আদর্শ। প্রায় এক লক্ষেরও বেশি সাহাবি সেই হজে অংশ নেন। আর এই হজেই তিনি প্রদান করেন ‘বিদায় হজের ভাষণ’— যা আজও মানবজাতির জন্য এক মহা-ঘোষণা। সেখানে তিনি বলেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ কারো রক্ত ও সম্পদ নষ্ট করতে পারবে না। সুদ চিরতরে হারাম। নারীজাতির অধিকার রক্ষা করো। তোমরা সবাই এক, কোনো আরব অ-আরবের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়।” এই ভাষণে কেবল হজের শিক্ষা নয়, বরং এক সমতাভিত্তিক সমাজব্যবস্থার দিকনির্দেশনাও পাওয়া যায়।
হজ কেবল শারীরিক ও অর্থনৈতিক সামর্থ্যের ইবাদত নয়, এটি ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় একজন ঈমানদারকে আত্মত্যাগ, ভ্রাতৃত্ব ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের এক মহা-সংকল্পে নিয়ে যায়। আদম (আ.) থেকে শুরু করে ইবরাহিম (আ.) ও শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর হাতে পূর্ণতা পাওয়া এই হজ আজও কোটি কোটি মানুষের অন্তর ছুঁয়ে যায়। প্রতিটি আনুষ্ঠানিকতায় রয়েছে এক গহীন আধ্যাত্মিক অর্থ— যা হজকে শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং একটি জীবন্ত ঐতিহাসিক অধ্যায়ে পরিণত করেছে।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- সঠিক প্রশ্ন করা জরুরি: আমাদের শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি প্রসঙ্গে
- আবু সাইদ: এক জনতার মহানায়ক
- বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ: আত্মপরিচয়ের নবতর ব্যাখ্যা ও আগামী রাষ্ট্র নির্মাণের ভিত্তি
- ৩১ জুলাই, শেয়ারবাজারে দরপতনের শীর্ষ ১০ শেয়ার
- “সুশীল” শব্দটি কেন আজও গালি?
- ঢাকার ২০টি আসনে বিএনপির নির্বাচনী কৌশল: কারা পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন?
- ৩১ জুলাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আজকের বাজার পর্যালোচনা
- ‘নির্বাচনের আগে সংস্কার না হলে আন্দোলন চলবে’—সাবধান করলেন নাহিদ ইসলাম
- ঘুষের হারে পাঁচগুণ বৃদ্ধি, কোথাও কোনো সুশাসন নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই- মির্জা ফখরুলের উদ্বেগ
- তারেক রহমান এখন উপযুক্ত নেতা: কাদের সিদ্দিকী
- ভাইরাল ভিডিও নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন এডলফ খান!
- ৩১ জুলাই, শেয়ারবাজারে দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ শেয়ার
- সিইসি: এআই অপব্যবহার হতে পারে নির্বাচনের জন্য ভয়াবহ হুমকি
- আজ ৩০ জুলায়ের শেয়ারবাজারে শীর্ষ ১০ গেইনারের তালিকায় নতুন চমক
- কাঁদিস নে গোপনে
- আন্তঃসরকারি আলোচনার সফল পরিণতি: মালয়েশিয়ায় বিশেষ নিয়োগ শুরু
- স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে যুবলীগ: নিষিদ্ধ সংগঠনের শীর্ষ ৮ নেতা গ্রেফতার
- ডোমিনো এফেক্ট: ছোট পরিবর্তনে কীভাবে বদলায় বড় সিদ্ধান্ত
- হাটহাজারী মাদরাসায় কবর জিয়ারতে নজরুল-সালাহউদ্দিন: খালেদা-তারেকের শুভেচ্ছা বার্তা
- গাজায় লুটপাটের শিকার ১০৪টি ত্রাণবাহী ট্রাক
- সৃজনশীলতার ৫টি ধাপ: একটি বিশ্লেষণধর্মী বাংলা প্রতিবেদন
- কর্ণফুলীর তীরে এক নীরব বিপ্লব: বাংলাদেশের অস্ত্র কারখানা নিয়ে উত্তপ্ত দক্ষিণ এশিয়া
- সেন্ট মার্টিন ও বঙ্গোপসাগর: ইন্দো-প্যাসিফিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার নতুন ভূকেন্দ্র
- খাবারের আশায় ১২ কিলোমিটার হাঁটা শিশুটি ইসরায়েলি গুলিতে নিহত
- গেরিলা প্রশিক্ষণে লিপ্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাস্টারপ্ল্যান ফাঁস
- জুলাইযোদ্ধাদের সড়ক দখল: শাহবাগে ২৪ ঘণ্টার অচলাবস্থা
- গুলশান কেলেঙ্কারিতে ছাত্রনেতা গ্রেপ্তার আরও ১
- জুমার দিনের ৪টি মহৎ আমল
- জাজিরায় পদ্মার ভয়াবহ তাণ্ডব, মুহূর্তেই হারাচ্ছে সবকিছু
- জাতীয় স্বার্থে বড় জয়: যুক্তরাষ্ট্রের বিপজ্জনক শুল্কের হুমকি প্রতিহত
- একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু, ফি পরিশোধে সুখবর!
- যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতি: বাংলাদেশের পণ্যে যত শুল্ক আরোপ
- খাদ্যে ভেজাল, প্রতারণা ও নকল: এক সপ্তাহে ১০ প্রতিষ্ঠানের কড়া শাস্তি
- 'চলুন সহজভাবে বুঝি': হেপাটাইটিস সম্পর্কে সচেতনতার নতুন বার্তা
- আফ্রিকায় কলেরার ঝুঁকিতে ৮০ হাজার শিশু: ইউনিসেফ
- বিসিবির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে সালাহউদ্দিন
- ফখরুলের হুঁশিয়ারি: ‘এক–এগারোর পুনরাবৃত্তি অস্বাভাবিক নয়’
- ময়মনসিংহে উচ্ছেদ করা হলো মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুপার্ক
- রাজশাহীতে ছয় মাস ধরে অন্ধকারে পাড়া-মহল্লা, নাগরিকরা চরম ভোগান্তিতে
- সিলেটে আধুনিক ও ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয়ে তানযীম ইন্টারন্যাশনালের নতুন উদ্যোগ
- সঠিক প্রশ্ন করা জরুরি: আমাদের শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি প্রসঙ্গে
- আবু সাইদ: এক জনতার মহানায়ক
- বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ: আত্মপরিচয়ের নবতর ব্যাখ্যা ও আগামী রাষ্ট্র নির্মাণের ভিত্তি
- ৩১ জুলাই, শেয়ারবাজারে দরপতনের শীর্ষ ১০ শেয়ার
- “সুশীল” শব্দটি কেন আজও গালি?
- ঢাকার ২০টি আসনে বিএনপির নির্বাচনী কৌশল: কারা পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন?
- ৩১ জুলাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আজকের বাজার পর্যালোচনা
- ‘নির্বাচনের আগে সংস্কার না হলে আন্দোলন চলবে’—সাবধান করলেন নাহিদ ইসলাম
- ঘুষের হারে পাঁচগুণ বৃদ্ধি, কোথাও কোনো সুশাসন নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই- মির্জা ফখরুলের উদ্বেগ
- তারেক রহমান এখন উপযুক্ত নেতা: কাদের সিদ্দিকী
- ভাইরাল ভিডিও নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন এডলফ খান!
- ৩১ জুলাই, শেয়ারবাজারে দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ শেয়ার
- সিইসি: এআই অপব্যবহার হতে পারে নির্বাচনের জন্য ভয়াবহ হুমকি
- আজ ৩০ জুলায়ের শেয়ারবাজারে শীর্ষ ১০ গেইনারের তালিকায় নতুন চমক
- কাঁদিস নে গোপনে