রাজশাহী

রাজশাহীতে ছয় মাস ধরে অন্ধকারে পাড়া-মহল্লা, নাগরিকরা চরম ভোগান্তিতে

রাজশাহী ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩১ ২১:৩৭:৪৪
রাজশাহীতে ছয় মাস ধরে অন্ধকারে পাড়া-মহল্লা, নাগরিকরা চরম ভোগান্তিতে
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীতে নাগরিক সেবা ভেঙে পড়ায় বাড়ছে জনভোগান্তি, বাড়ছে ডেঙ্গু ও অপরাধ

রাজশাহীতে গত বছরের (২০২৪) আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়। রাস্তাঘাটে জমে থাকা আবর্জনা, অচল ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং লাইটহীন বৈদ্যুতিক পোল—সব মিলিয়ে শহরের অব্যবস্থাপনায় নাগরিকদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ড্রেনে পচা ময়লার কারণে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, তৈরি হয়েছে জঙ্গল ও ঝোপঝাড়, যার ফলে মশার উপদ্রব আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে ‘আলোর শহর’ খ্যাত রাজশাহী মহানগরীর পাড়া-মহল্লাগুলো এখন অন্ধকারে ডুবে আছে। অধিকাংশ বৈদ্যুতিক পোলের বাল্ব নষ্ট । দীর্ঘ ছয়-সাত মাস ধরে এসব বাল্ব জ্বলছে না, ফলে সন্ধ্যার পর অন্ধকার নেমে আসে রাস্তায়। এতে করে চুরি, ছিনতাই ও ইভটিজিংয়ের মতো অপরাধ বেড়েছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।

মতিহার থানার ধরমপুর এলাকার বাসিন্দা ও বিএনপি নেতা আনসার আলী বলেন, এলাকাবাসী এখন একপ্রকার অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাসিকের পরিচ্ছন্নতাও এখন কার্যত বন্ধ।

রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মো. আশরাফুল হাসান বাচ্চু জানান, বর্তমানে নগরীর কোনো ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলর নেই। সব ওয়ার্ড পরিচালিত হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে, যা নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে বড় সীমাবদ্ধতা তৈরি করেছে।

তিনি জানান, ছোটখাটো সমস্যার সমাধানে আগে জনগণ সরাসরি কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করত। এখন সেই ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যাগুলোর সমাধান বিলম্বিত হচ্ছে।

চাকরির আবেদন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন বড়-বনগ্রামের বাসিন্দা মো. আবির শেখ। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় নাগরিক সনদ নিতে গিয়ে তিনি দশ দিন ধরে ঘুরেও সনদ পাননি। ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ের সচিব জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঢাকায় থাকায় সনদ ইস্যু সম্ভব হয়নি।

কাজলা এলাকার বাসিন্দা অতিকুর রহমান মন্টু বলেন, বৈদ্যুতিক পোলের আলো না থাকায় চুরি, ছিনতাই এবং মাদক সংক্রান্ত অপরাধ বেড়ে গেছে। এছাড়াও পুলিশের টহল কার্যত অনুপস্থিত, ফলে এলাকাবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

আরিফুজ্জামান নামে এক বাসিন্দা জানান, তার এলাকায় এসির যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে। আর রুবেল নামে আরেকজন জানান, বৈদ্যুতিক তার চুরি হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ শাখার প্রধান কর্মকর্তা এবিএম আসাদুজ্জামান সুইট জানান, বর্তমানে তাদের কাছে বৈদ্যুতিক লাইটের পর্যাপ্ত মজুদ নেই। জানুয়ারিতে টেন্ডার করে ৭,৫০০ লাইট সংগ্রহ করা হয়েছিল, যা ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, আগামী ৪ আগস্ট নতুন টেন্ডার উন্মুক্ত হবে এবং ১০ আগস্টের মধ্যে নতুন লাইট সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যত দ্রুত সম্ভব সমস্যাগুলো সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ