জাজিরায় পদ্মার ভয়াবহ তাণ্ডব, মুহূর্তেই হারাচ্ছে সবকিছু

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০১ ১২:৪১:৫৮
জাজিরায় পদ্মার ভয়াবহ তাণ্ডব, মুহূর্তেই হারাচ্ছে সবকিছু
ছবিঃ সংগৃহীত

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় পদ্মা নদীর প্রবল স্রোত এবং বর্ষণজনিত কারণে আবারও ভয়াবহ নদীভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকায় গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সকালে পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড রক্ষা বাঁধের অন্তত ১১০ মিটার অংশ নদীতে ধসে পড়ে। এতে অন্তত ৩০টি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আতঙ্কে অনেক স্থানীয় বাসিন্দা নিজ উদ্যোগে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে প্রবল স্রোত এবং অব্যাহত বৃষ্টির কারণে ডাম্পিং কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাজিরা মাঝিরঘাট থেকে পূর্ব নাওডোবা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। ধারাবাহিক ভাঙনে ইতোমধ্যে প্রায় ৭৫০ মিটার বাঁধ ধসে গেছে। সর্বশেষ ধসে নতুন করে ১১০ মিটার বিলীন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে। রিংকু মাদবর, তাজুল মাদবর, রানা মাদবর ও ইমরান মাদবরের পরিবারের ঘরবাড়ি এক দিনের ব্যবধানে নদীতে হারিয়ে গেছে। তারা এখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে উদ্বিগ্ন।

ভুক্তভোগীরা জানাচ্ছেন, ভোর রাতে বিকট শব্দে নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই বসতভিটা নদীতে তলিয়ে যায়। মনোয়ার হোসেন বলেন, "চোখের সামনে দুটি বসতঘর পানিতে মিলিয়ে গেছে। সরকার যদি দ্রুত টেকসই ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে গোটা এলাকা হারিয়ে যাবে।" শাহীন মাদবর বলেন, "আমার ঘর ও কাচারি নদীতে চলে গেছে। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় থাকবো জানি না। সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।"

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান জানান, আপাতত জিওব্যাগ ও জিওটিউব ডাম্পিং অব্যাহত আছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ আগামী বর্ষার আগেই শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করা হচ্ছে। যাদের জমি ও ঘর পুরোপুরি বিলীন হয়েছে, তাদের ঘর ও জমির পুনর্বাসন দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে।

পদ্মা নদীর ভাঙন বর্তমানে আশেপাশের আরও অনেক বসতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা রাত জেগে ভাঙন পর্যবেক্ষণ করছেন। ২০১০ সালে তৈরি এই বাঁধের একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে, ফলে এই এলাকায় টেকসই ও কার্যকর বেড়িবাঁধ নির্মাণ এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ