‘একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, আমরা আশাবাদী’: জুলাই বিপ্লব স্মরণে ফখরুল

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১০ ১৭:০৩:১৭
‘একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, আমরা আশাবাদী’: জুলাই বিপ্লব স্মরণে ফখরুল

বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা এবং রাজনৈতিক সংস্কারের প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার যে ঘোষণা এসেছে, সেটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তিনি বলেন, “জনগণ বহু ত্যাগ স্বীকার করে ভোটাধিকার অর্জন করেছে। আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে এখন আর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” তিনি এও জানান, বিএনপি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’কে ছোট করে দেখতে চায় না, বরং এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে সম্মান জানিয়ে ‘জুলাই সনদ’-এর সুপারিশপত্র বুধবার রাতে সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রগঠনের কাঠামো ও রাজনৈতিক সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরেছে।

আলোচনাসভা শেষে তিনি বিএফইউজে ও ডিইউজে আয়োজিত একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন, যেখানে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ওপর চালানো নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়। এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, “গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। যারা সাংবাদিকদের হুমকি দেয়, তাদের মানসিকতা গণতন্ত্রবিরোধী। স্বৈরতন্ত্র চলে গেলেও তার চর্চা এখনও অনেকের মধ্যে রয়েছে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা সংস্কারকে স্বাগত জানাই। কিন্তু কেউ যদি বলে বিএনপি সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, তাহলে সেটা ভুল ব্যাখ্যা।” তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৭ বছরে প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে এবং ২০ হাজারের মতো নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এই বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। যারা এই সত্য অস্বীকার করছেন, তারা গণতন্ত্রের পথেই চোখ বন্ধ করে আছেন।

তিনি আরও বলেন, “আমরা আশাবাদী সামনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা হবে, যেখানে মানুষ প্রকৃত অর্থে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।” এ সময় তিনি সীমান্তে হত্যা ও পুশইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে, পুশইন হচ্ছে। এগুলো কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।” তিনি সরকারকে আহ্বান জানান, এসব বিষয়ে ভারতের সঙ্গে শক্ত অবস্থানে দরকষাকষি করতে হবে এবং পানিবণ্টন ইস্যুতে আন্তরিক আলোচনায় বসতে হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এ ধরনের শুল্ক দেশের তৈরি পোশাকশিল্পকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে। সরকারকে অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে মোকাবিলা করতে হবে।”

আলোচনায় জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী জাতীয় ঐক্য। বিভাজন নয়, বরং অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে সবাই মিলে দেশের ভবিষ্যৎ গঠন করবে।”

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, যিনি বলেন, রাষ্ট্র গঠনে রাজনৈতিক দল, জনগণ ও গণমাধ্যম—এই তিন শক্তির সমন্বয় জরুরি। তিনি বলেন, জাতীয় রাজনীতিতে বিতর্ক চলুক, কিন্তু ব্যক্তিকেন্দ্রিক আক্রোশ কিংবা দলে দলে বিভক্তি দেশের জন্য হানিকর।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, “স্বৈরাচার চলে গেলেও তার মানসিকতা অনেকের মধ্যে রয়ে গেছে। তরুণ নেতৃত্বের কেউ কেউ ফেসবুকে সাংবাদিকদের হুমকি দিচ্ছেন—এটা গণতান্ত্রিক সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। এই বিজয় ধরে রাখতে প্রয়োজন ধৈর্য ও সহনশীলতা।”

সভায় আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয় যখন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক ও ডিইউজের সাবেক সভাপতি আবদুল হাই শিকদার ‘জুলাই বিপ্লবে’ প্রাণ হারানোদের স্মরণ করে ‘জুলাই বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। তিনি গত ১৫ বছরে যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে নিপীড়িত হয়েছেন, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিইউজের সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির উপদেষ্টা আবদুস সালাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ইলিয়াস খান, সৈয়দ আবদাল রহমান, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারীসহ আরও অনেকে।

এই আলোচনা সভা ও ‘জুলাই সনদ’ জমাদানের মধ্য দিয়ে বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ রাজনৈতিক পরিবেশ গঠনের লক্ষ্যে নিজেদের অবস্থানকে সুসংহতভাবে উপস্থাপন করলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের সংলাপ এবং আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার পথে অগ্রসর হতে পারে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ