নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মুখ খুলে বিপাকে জাতিসংঘের নারী বিশেষজ্ঞ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১০ ০৯:৪৫:৩৪
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মুখ খুলে বিপাকে জাতিসংঘের নারী বিশেষজ্ঞ

ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সরব ভূমিকা নেওয়ায় জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ফ্রানচেস্কা আলবানেজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নির্দেশনায় বুধবার এ ঘোষণা দেন বর্তমান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে আলবানেজের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা যেকোনো সম্পদ জব্দ করা এবং তার ও পরিবারের সদস্যদের মার্কিন ভিসা বাতিল ও প্রবেশাধিকার বন্ধ করা।

ফ্রানচেস্কা আলবানেজ বর্তমানে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গাজায় ইসরায়েলি হামলা, অবরোধ এবং যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত তার ধারাবাহিক প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দৃষ্টিতে এসব কার্যক্রম ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যুদ্ধ’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কো রুবিও।

আলবানেজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, তার সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কোম্পানির নাম উঠে এসেছে, যেগুলো ইসরায়েলের গাজা অভিযানকে সরাসরি সহায়তা করেছে। এ রিপোর্টে মার্কিন কোম্পানির নামও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় আলবানেজ কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও এক টেক্সট বার্তায় আল জাজিরাকে জানান, “মাফিয়া-স্টাইল ভয়ভীতির কৌশল নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। ব্যস্ত আছি রাষ্ট্রগুলোকে তাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিতে গণহত্যা থামাও, শাস্তি দাও এবং যারা এসব কর্মকাণ্ড থেকে লাভবান হচ্ছে, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনো।”

তিনি আরও জানান, জাতিসংঘের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার দায়িত্ব রাষ্ট্রগুলোকে তাদের আইনি ও নৈতিক বাধ্যবাধকতা স্মরণ করিয়ে দেওয়া বিশেষ করে তখন যখন তা গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো গুরুতর ইস্যুতে পরিণত হয়।

আন্তর্জাতিক মহলে আলবানেজের উচ্চারণ নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, “ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওয়ারেন্টভুক্ত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও ইউরোপের আকাশসীমা ব্যবহার করছেন, যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।” তিনি বলেন, “ইতালি, ফ্রান্স ও গ্রিসের নাগরিকদের বোঝা উচিত যে এ ধরনের রাজনৈতিক পদক্ষেপ শুধু আইন লঙ্ঘনই নয়, বরং সবাইকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়।”

এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে ঘোষণা দেন, যারা আইসিসির মাধ্যমে ইসরায়েলকে লক্ষ্যবস্তু করছে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এর পরপরই আইসিসির চারজন বিচারকসহ একাধিক কর্মকর্তার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এই ধারাবাহিকতায় এবার জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ওপর নিষেধাজ্ঞা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক তদন্তকে কার্যত প্রতিহত করতে চায়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক ‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসি’র প্রধান ন্যান্সি ওকাইল এ নিষেধাজ্ঞার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এটি ভয়াবহ এবং কর্তৃত্ববাদী আচরণ। জাতিসংঘের একজন স্বাধীন বিশেষজ্ঞকে এভাবে নিষিদ্ধ করা স্বৈরশাসকদের নীতি অনুসরণের শামিল।”

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের মার্কিন-সমর্থিত সামরিক অভিযানে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত ২১ মাসে ইসরায়েলি আগ্রাসনে অন্তত ৫৭ হাজার ৫৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খাদ্য, পানি ও ওষুধের মতো মৌলিক উপকরণের অবরোধকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইসিসি।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

লেনদেনের শীর্ষ দশে যেসব শেয়ার

লেনদেনের শীর্ষ দশে যেসব শেয়ার

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (২১ জুলাই) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ছিল কিছুটা চাঙা। এই দিনে লেনদেনের... বিস্তারিত