ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে শিবচরে তোলপাড়: অসহায় গ্রাহক, নির্বিকার কর্তৃপক্ষ

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৭ ১৭:১৬:২৭
ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে শিবচরে তোলপাড়: অসহায় গ্রাহক, নির্বিকার কর্তৃপক্ষ

মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় ‘ভুতুড়ে বিল’ আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাধারণ গ্রাহকরা। জুন মাসের বিদ্যুৎ বিল হাতে পেয়েই বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন অনেকেই। নিয়মিত ও প্রায় অপরিবর্তিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরও গত মাসের তুলনায় দেড় থেকে চারগুণ বেশি বিল দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয়রা। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলো এই অতিরিক্ত আর্থিক চাপে পড়েছেন চরম দুরবস্থায়।

শিবচর পৌরসভা এবং উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, হঠাৎ করেই এমন বিলে তারা হতবাক। তাদের অভিযোগ, মিটার না দেখে বা সঠিকভাবে রিডিং না নিয়েই বিল তৈরির মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরিক্ত চার্জ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, অফিসের চাপে বা ‘ঘাটতি পূরণে’ এক ধরনের গোপন নির্দেশেই এমন বিল করা হয়েছে।

গ্রাহকদের কান্না: ভাঙা স্বপ্ন, দুঃস্বপ্নে দিনযাপন

শিবচরের ছোট ব্যবসায়ী হাফেজ শাহীন সরদার বলেন, “আমি একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা করে কোনোরকমে সংসার চালাই। আমার মাসিক বিল সাধারণত ১১০০–১২০০ টাকা থাকলেও এবার এসেছে ৪৩০০ টাকা! অথচ আমি বিদ্যুৎ ব্যবহারে কোনও পরিবর্তন করিনি। এ কেমন অমানবিকতা? আমি সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।”

এমন অভিজ্ঞতা একা শাহীনের নয়। শাজাহান হাওলাদার জানান, “প্রতি মাসে আমার বিল আসে ৮০০–৯০০ টাকা। কিন্তু জুন মাসে এল প্রায় ১৮০০ টাকা। বিদ্যুৎ ব্যবহারে কোনো পরিবর্তন হয়নি। অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।”

আব্দুল করিম বয়াতি, যিনি ঢাকায় চাকরি করেন এবং তার পরিবার গ্রামে বসবাস করে, জানালেন, “আমার মাসিক বিল সাধারণত ৩০০–৪০০ টাকা। এবার এসেছে ১১০০ টাকা! ঢাকায় পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি, তার ওপর এই অযৌক্তিক বিল কীভাবে মেনে নিই?”

ভেতরের স্বীকারোক্তি: চাপের মুখে বাড়তি বিল আদায়

একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিটার রিডার জানান, “পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বার্ষিক আর্থিক হিসাব বা জুন ক্লোজিংয়ের সময় মোট রাজস্ব ঘাটতি পূরণে উপরমহল থেকে মৌখিকভাবে বাড়তি বিল করার নির্দেশ আসে। বাধ্য হয়ে অফিসে বসেই মিটার না দেখে বিল তৈরি করতে হয়। এতে হয়রানি হয় গ্রাহকদের, আর বিব্রত আমরা।”

অফিস বলছে, সমস্যা নেই!

তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শিবচর বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডি.জি.এম) অভিলাষ চন্দ্র পাল। তার ভাষায়, “ভুতুড়ে বিল বলে কিছু নেই। দু–একটি বিচ্ছিন্ন অভিযোগ পেয়েছি, যাচাই করে দেখছি। সফটওয়্যার বা প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে কখনো কখনো এমন হতে পারে। এছাড়া মাঠপর্যায়ের ভুল লেখার ফলেও বিল বিভ্রাট হতে পারে।”

তবে স্থানীয়দের বক্তব্য, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ব্যাপক হারে ঘটছে। প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে বহু গ্রাহক প্রতিদিন অভিযোগ নিয়ে অফিসে আসছেন। কেউ কেউ বলছেন, এই ঘটনাটি তদন্ত করে দেখার মতো নয়— এটি একটি সাংগঠনিক ব্যর্থতা ও জবাবদিহির সংকট।

প্রতিকারের প্রত্যাশা: জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা চায় জনসাধারণ

ভুক্তভোগীরা বলছেন, বিদ্যুৎ অফিসে বারবার গিয়েও কেউ কার্যকর সমাধান পাননি। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে বাড়তি বিল প্রত্যাহার, দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। নাহলে এই ভুতুড়ে বিল মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে, সৃষ্টি করবে সামাজিক অসন্তোষ।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ