ফেনী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত 

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৫ ১০:৫২:৩৯
ফেনী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত 

ফেনীর পরশুরাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে মিল্লাত হোসেন (২১) নামের এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় মো. আফসার (৩২) নামে আরেক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টার দিকে ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বাসপদুয়া সীমান্ত এলাকায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা যায়, রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে বাসপদুয়া সীমান্তের ১৫৫৭ নম্বর পিলারের কাছে গুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর স্থানীয় বাসিন্দা মজনু ও অন্যান্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুইজনকে পড়ে থাকতে দেখেন এবং তাদের উদ্ধার করে প্রথমে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।

ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জাকির হোসেন মিল্লাতকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত আফসারকে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

নিহত মিল্লাত হোসেন ফেনীর পরশুরাম পৌরসভার বাসপদুয়া গ্রামের মো. ইউসুফ মিয়ার ছেলে এবং গুরুতর আহত আফসার একই এলাকার এরামত আলীর ছেলে।

মিল্লাতের মা পারভিন আক্তার জানান, তার ছেলে কোনো অপরাধে জড়িত ছিলেন না। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার রাতেও মাছ ধরতে সীমান্ত এলাকায় গিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয় বিএসএফ সদস্যরা কোনো পূর্বসতর্কতা ছাড়াই তার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করে।

স্থানীয় সূত্র বলছে, মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় গেলে মিল্লাত ও আফসার লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে বিএসএফ। তবে ঠিক কোথায় তাদের অবস্থান ছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও বিএসএফ দাবি করেছে, তারা বাংলাদেশি দুই যুবককে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকতে দেখে গুলি চালায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফেনী-৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মোশারফ হোসেন। তিনি বলেন, “ঘটনার পরপরই বিজিবির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং পতাকা বৈঠকের জন্য বিএসএফকে আহ্বান করা হয়েছে।”

এদিকে, পরশুরাম মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নুরুল হাকিম গণমাধ্যমকে জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে দুই ব্যক্তি সীমান্তে অবস্থানকালে গুলিবিদ্ধ হন। একজন ঘটনাস্থলে মারা যান, অপরজন গুরুতর আহত। তদন্ত চলছে।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক হতাহতের ঘটনা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের মৃত্যু বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বারবার সীমান্তে প্রাণহানি রোধে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি তেমন চোখে পড়ছে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির লঙ্ঘন। এ বিষয়ে আরও কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি উঠছে।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ