ভিউয়ের দৌড়ে পথ হারাচ্ছে বাংলা নাটক

বিনোদন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১২ ১৩:৫৪:৫২
ভিউয়ের দৌড়ে পথ হারাচ্ছে বাংলা নাটক

সত্য নিউজ: এক সময় টেলিভিশন ছিল বাংলার গ্রামীণ ও প্রান্তিক দর্শকের প্রধান বিনোদনের মাধ্যম। বিশেষ করে বিটিভির নাটক ঘিরেই গড়ে উঠেছিল একসময়ের সাংস্কৃতিক বন্ধন ও পারিবারিক আবহ। সেই জৌলুশ আজ আর নেই। পরিবর্তিত বাস্তবতায় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম—বিশেষত ইউটিউব—নাটক সম্প্রচারের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

বর্তমান নাট্যপ্রবণতায় ‘ভিউ’ শব্দটিই হয়ে উঠেছে প্রাধান্যকারী। ইউটিউবে যত বেশি ভিউ, তত বেশি রাজস্ব—এই সরল সমীকরণই নাটকের শিল্পমানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। নাটকের গঠন, গল্প, সংলাপ কিংবা অভিনয়—সব কিছু ছাপিয়ে নির্মাণকেন্দ্রিক সব আলোচনা এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ভিউয়ের ঘরেই। আর এ দৌড়ে এগিয়ে থাকার লড়াইয়ে আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে চটকদার নাম, অশালীন দৃশ্য ও সামাজিক রুচিবোধের পরিপন্থী উপস্থাপনায়।

শুধু কনটেন্টের গঠন নয়, পরিবর্তন এসেছে শিল্পী নির্বাচনেও। এখন অভিনয়ের দক্ষতা নয়, অগ্রাধিকার পাচ্ছে অনলাইন ভাইরাল জনপ্রিয়তা। সামাজিক মাধ্যমে আলোচনায় আসা ব্যক্তি কিংবা ভাইরাল চেহারারাই হঠাৎ হয়ে উঠছেন নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র। অভিনয়ের কোনো প্রশিক্ষণ বা পটভূমি ছাড়াই তারা যুক্ত হচ্ছেন পেশাদার অভিনয়জগতে। এর ফলে নাটক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গভীরতা, চরিত্রে আসছে অস্থিরতা ও কৃত্রিমতা।

নাট্যজগতে আরেকটি উদ্বেগজনক প্রবণতা হচ্ছে ‘সিন্ডিকেট’ সংস্কৃতি। ভিউয়ের আধিপত্য বজায় রাখতে কিছু জনপ্রিয় শিল্পী নিয়ন্ত্রণ করছেন শিল্পী নির্বাচন থেকে নাটক নির্মাণ পর্যন্ত নানা পর্যায়। অভিযোগ রয়েছে, এই প্রভাবশালী শিল্পীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে পরিচালক-প্রযোজকদের পাওয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় ডেট। এমনকি শুটিং সেটে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও উঠেছে একাধিকবার—যা শিল্পাঙ্গনের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্বরা।

একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন,

“শিল্পের জায়গা এখন দখল করেছে ব্যবসা। অর্থকেন্দ্রিক এই দৃষ্টিভঙ্গি নাটকের শৈল্পিকতা ধ্বংস করছে। সামাজিক বন্ধন ও নৈতিকতা আজ নাটকে অনুপস্থিত।”

অভিনেত্রী দিলারা জামান এর ভাষায়,

“বর্তমানে অনলাইনে নির্মিত অনেক নাটক দেখে লজ্জা লাগে। এগুলো কি আমাদের সমাজের প্রতিচ্ছবি? রুচির অবক্ষয়ই এখানে মুখ্য হয়ে উঠছে।”

নাট্যজগতের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার নিয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এখনই যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে বাংলা নাটকের ঐতিহ্য এক সময় ইতিহাসে রূপ নিতে পারে।বর্তমানে যে হারে ইউটিউব-কেন্দ্রিক নিম্নমানের নাটকের বিস্তার ঘটছে, তা থামাতে না পারলে ভবিষ্যতে আমাদের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল আরও দুর্বল হয়ে পড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন নাট্যজগতের অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত

close button