হঠ্যাৎ সেন্টমার্টিনকে নিয়ে সরকারের মাস্টারপ্ল্যান কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৩ ১৩:৩১:৪৭
হঠ্যাৎ সেন্টমার্টিনকে নিয়ে সরকারের মাস্টারপ্ল্যান কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ সেন্টমার্টিন দ্বীপকে টেকসইভাবে সংরক্ষণ ও পরিবেশগত ভারসাম্য পুনঃস্থাপনে একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সোমবার (২৩ জুন) রাজধানীতে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন এবং পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের কারণে সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আমাদের চলমান নানা সচেতনতামূলক উদ্যোগ এবং প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে দ্বীপের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।”

তিনি জানান, দ্বীপ রক্ষায় ভবিষ্যতের টেকসই পদক্ষেপ নিতে একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পরিকল্পনাটি এমনভাবে তৈরি করা হবে যাতে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, উপকূলীয় পরিবেশ রক্ষা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকা নিশ্চিতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ কাঠামো তৈরি হয়।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, “মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড থেকে একটি প্রকল্প গ্রহণের চিন্তা-ভাবনা চলছে। এই প্রকল্পের আওতায় দ্বীপে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো উন্নয়ন, কোরাল রিফ ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সচেতন পর্যটন ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হবে।”

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট (BCCT) থেকে বিভিন্ন সময় জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়। সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পটিও একই ধরনের সহায়তার আওতায় বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।

সেন্টমার্টিনে প্রতি বছর কয়েক লাখ পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু পরিবেশ রক্ষার যথাযথ ব্যবস্থার অভাবে এই দ্বীপের কোরাল রিফ, সামুদ্রিক কচ্ছপ, ম্যানগ্রোভ ও বিভিন্ন বিরল প্রজাতির গাছপালা ব্যাপক হুমকির মুখে পড়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, “অতীতে পর্যটনের নামে অবাধ ব্যবসা এবং পরিকল্পনাবিহীন অবকাঠামো নির্মাণ সেন্টমার্টিনের পরিবেশকে ধ্বংস করেছে। এখন সময় এসেছে এই দ্বীপকে পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে রক্ষা করার। পর্যটন থাকবে, কিন্তু তা হবে নিয়ন্ত্রিত, বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরিবেশবান্ধব।”

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নিশ্চিত করেন যে, মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা, বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় ও অংশগ্রহণমূলক আলোচনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। “এটি হবে একটি বহুমাত্রিক পরিকল্পনা যেখানে দ্বীপবাসীর জীবন-জীবিকাও সুরক্ষিত থাকবে,” বলেন তিনি।

সেন্টমার্টিনকে শুধু একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে না দেখে এটিকে একটি জলবায়ু ও পরিবেশ সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে বিবেচনায় আনার আহ্বান জানান পরিবেশ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “সেন্টমার্টিন রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক কঠোরতা এবং সর্বোপরি জনগণের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ।”

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ