সিলেটে ম্লান ১৫ হাজার পরিবারের ঈদ আনন্দ

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০৭ ০৮:১৮:০৪
সিলেটে ম্লান ১৫ হাজার পরিবারের ঈদ আনন্দ

পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দে যখন সারা দেশ উৎসবমুখর, তখন সিলেটের অন্তত ১৫ হাজার পরিবারের কাছে ঈদ এসেছে কষ্ট ও দুর্ভোগের বার্তা নিয়ে। টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় সিলেটের জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট ও বালাগঞ্জসহ চারটি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ভেসে গেছে ঈদের প্রস্তুতি, নষ্ট হয়েছে ঘরবাড়ি, ডুবে গেছে কোরবানির আনন্দ।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাইক ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় ঈদের আগ মুহূর্তে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বহু পরিবার। সিলেট জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ১৫,৬০৭ জন মানুষ পানিবন্দি এবং ৪৩২ জন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৮২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য।

বন্যা কবলিতদের জন্য সরকার পক্ষ থেকে চাল, শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য, নগদ অর্থ, ওষুধ এবং গোখাদ্যের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে—

  • জিআর চাল: ৩২০ মেট্রিক টন
  • শুকনো খাবার: ৭০০ বস্তা
  • নগদ অর্থ: ৪.২০ লাখ টাকা
  • শিশু খাদ্য ও গোখাদ্য: ১.৩০ লাখ টাকা করে

এছাড়া ৪টি উপজেলায় ৬৩ টন চাল, ৫০ হাজার টাকা নগদ এবং ১৯৪ প্যাকেট শুকনো খাবার ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (৬ জুন) বিকেলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর চারটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। তবে জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটে কিছুটা পানি হ্রাস পেলেও বিয়ানীবাজার ও ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় পানি বাড়ছে।

জকিগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে ঈদের দিনও বহু মানুষ পানি ঘেরা ঘরে অবস্থান করছেন। অনেকেই এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

  • দিলু বেগম, গৃহিণী: “বসতঘর তলিয়ে গেছে, রান্নার উপায় নেই। ঈদের আনন্দ তো দূরে থাক, ঘর মেরামত নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।”
  • সুবহান মিয়া: “বন্যায় ঘর ভেঙে গেছে। এখনো কোন সরকারি সহায়তা পাইনি। ঈদ নেই, শুধু বেঁচে থাকার যুদ্ধ চলছে।”
  • নাজমা বেগম: “চেয়ারম্যান ডাইক বন্ধ করলেও আমাদের ঘর এখনো ভেজা। ঈদের প্রস্তুতির মতো অবস্থা নেই।”
  • রহিমা বেগম, বিধবা: “চার সন্তান নিয়ে কোনমতে বেঁচে আছি। ঈদ বলতে কিছুই নেই।”
  • জালাল উদ্দিন: “ডাইক ভেঙে আমার ঘর ভেসে গেছে। ঈদ তো নেইই, সামনে কিভাবে চলব তাও জানি না।”

বন্যার প্রভাবে জকিগঞ্জের বাজারগুলোতে ক্রেতার অভাব দেখা দিয়েছে। ঈদের আগে যেখানে দোকানগুলোতে ভিড় লেগে থাকত, সেখানে এবার ফাঁকা বাজার। পশুর হাটেও ছিল না আগের মতো ভিড়, কারণ অধিকাংশ পরিবারই কোরবানির প্রস্তুতি নিতে পারেনি।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, “বন্যা কবলিত এলাকায় আমরা দুই দফা ত্রাণ দিয়েছি। ঈদের দিন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের জন্য খাবার পরিবেশন করা হবে।”সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি আমরা নজরদারিতে রেখেছি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রশাসন মানুষের পাশে আছে।”

বন্যায় ভেসে গেছে সিলেটের হাজারো পরিবারের ঈদের আনন্দ। ঈদের নতুন জামা, কোরবানির পশু, কিংবা ঘর সাজানোর কোনো সুযোগ নেই তাদের জীবনে। এখন তাদের একমাত্র লড়াই—জীবন রক্ষা আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা। ঈদের এই দিনে দেশবাসীর উচিত এসব দুর্ভোগপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের দুঃখ ভাগ করে নেওয়া।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ