পদে থাকুন ড. ইউনূস, তবেই সমাধান- রাজনীতিকরা

২০২৫ মে ২৪ ০৮:৫৯:৩৬
পদে থাকুন ড. ইউনূস, তবেই সমাধান- রাজনীতিকরা

সত্য নিউজ: দেশের রাজনীতিতে চলমান অস্থিরতা ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব, এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রশ্নে অনিশ্চয়তা এই তিনটি ইস্যু ঘিরে জাতীয় রাজনৈতিক পরিসরে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। যদিও তার পদত্যাগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তথাপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন রাজনীতিবিদের মন্তব্য স্পষ্ট করেছে যে, প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা এবং অবস্থান এখন দেশের রাজনৈতিক উত্তরণ প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে।

ইউনূসের অবস্থান ঘিরে দ্বিমত: পদত্যাগ না করেনেতৃত্বে টিকে থাকার আহ্বান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "বিএনপি ড. ইউনূসের পদত্যাগ চায় না, বরং চায় সম্মানজনকভাবে তার নেতৃত্বে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী রোডম্যাপ নির্ধারণ হোক।" তবে তিনি এটাও বলেন, "তিনি যদি আবেগপ্রবণ হয়ে পদত্যাগ করেন, তবে জাতিকে নতুন বিকল্প খুঁজতে হবে।"

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু আরও সরাসরি বলেন, "জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ইউনূসকে দায়িত্বে থাকতে হবে, নইলে আগামী দিনের পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠবে।"

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, "ড. ইউনূসকে দায়িত্বে থেকেই জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে।" তার মতে, নির্বাচন আয়োজনের আগে মৌলিক সংস্কার, বিচার ও সংবিধান সংশোধন অনিবার্য।

সরকারি নিরবতা এবং বিএনপির সঙ্গে সংলাপের অভাব

গত চার দিনে বিএনপি একাধিকবার প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চাইলেও তাতে সাড়া মেলেনি। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও সর্বদলীয় সংলাপের আহ্বান জানানো হলেও সাড়া আসেনি। এনসিপি ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল প্রধান উপদেষ্টার সরাসরি সাক্ষাৎ পাচ্ছে না এই পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সংলাপ ও ঐক্যের আহ্বান: বিভক্ত শক্তির মধ্যে ঐক্য চাওয়ার চেষ্টা

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, হেফাজতে ইসলামের মামুনুল হক, জেএসডির আ স ম আবদুর রবসহ একাধিক রাজনৈতিক এবং সামাজিক নেতৃত্ব ইউনূসকে দায়িত্বে রেখে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। জেএসডি নেতা রব বলেছেন, "জাতীয় সনদ এখন সময়ের দাবি", যা হবে একটি নতুন গণতান্ত্রিক সমাজচুক্তির ভিত্তি।

তবে তীব্র সমালোচনাও এসেছে। এনসিপির তরুণ নেত্রী ডা. তাসনিম জারা তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, "রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ক্ষুদ্র স্বার্থের দ্বন্দ্ব গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এটা আত্মসমালোচনার সময়, দোষারোপের নয়।"

ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও জাতীয় বিপ্লবের ভবিষ্যৎ

রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার তার ফেসবুকে লিখেছেন, "পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করে ইউনূস একটি ভুল করেছেন। তা হবে তার আত্মঘাতী পদক্ষেপ।" তার মতে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে একসঙ্গে কাজ করাই এখন জাতির প্রয়োজন।

এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া লিখেছেন, "আপনারা যে কুমির আনলেন, সেই কুমির আপনাদেরই খাবে", এই বক্তব্য সরাসরি ইউনূস নেতৃত্বের প্রতি দলের আস্থাহীনতা প্রতিফলিত করে।

নেতৃত্ব সংকট না ঐক্য সংকট?

রাজনীতিকদের মতামত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সংকটের মূল কেন্দ্রে রয়েছে নেতৃত্বের স্থায়িত্ব, নির্বাচন নিয়ে পরিষ্কার রোডম্যাপের অভাব এবং বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের সংকট। একদিকে ইউনূসকে দায়িত্বে রেখে রাজনৈতিক সমঝোতার আহ্বান, অন্যদিকে পদত্যাগ ঘিরে গুঞ্জন এই দ্বন্দ্বময় বাস্তবতায় আগামী দিনের রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারিত হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ, নির্বাচন এবং জাতীয় ঐক্য এই তিনটি প্রশ্নে দেশের রাজনৈতিক পরিসর এখন একটি সঙ্কটময় মোড়ের সামনে। এই মোড় পেরিয়ে শান্তিপূর্ণ উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিশ্বাস, সংলাপ এবং ঐক্যই হতে পারে একমাত্র পথ।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত