উপদেষ্টাদের জন্য কি ২৫ টি গাড়ি ক্রয় করছে সরকার?

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২০ ১৮:০৮:৫৫
উপদেষ্টাদের জন্য কি ২৫ টি গাড়ি ক্রয় করছে সরকার?

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ২৫টি সরকারি গাড়ি কেনার একটি উচ্চমূল্যের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হলেও, অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও ব্যয় সংযমের নীতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কমিটি প্রস্তাবটি অনুমোদন না করার সিদ্ধান্ত নেয়।

মঙ্গলবার (২০ মে) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিবরা এবং আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারকরা।

গাড়ি কেনার প্রস্তাবের পটভূমি

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ‘সরকারি ক্রয় বিধিমালা, ২০০৮’ এর বিধি ৭৬(২)-এর আওতায় নির্ধারিত মূল্যের সীমা অতিক্রম করে ২৫টি বিলাসবহুল গাড়ি কেনার অনুমোদন চায়। এই গাড়িগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও মন্ত্রী-সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

যদিও সরকারি প্রটোকল ও কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে গাড়ি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অস্থায়ী মেয়াদ এবং ব্যয় সংকোচনের বর্তমান জাতীয় প্রয়োজনে এই ধরনের ব্যয়কে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচনা করে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করা হয়।

অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও ব্যয় সংযমের বিবেচনা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদ বৈঠকে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সময় একটি সীমিত দায়িত্বশীলতা বজায় রাখতে হয়। এ সময় বড় মাপের সম্পদ ব্যয় যেমন নতুন গাড়ি কেনা, জনদৃষ্টিতে নেতিবাচক বার্তা দিতে পারে। আমাদের বর্তমান আর্থিক বাস্তবতায় যেখানে উন্নয়ন ব্যয় এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে অধিক গুরুত্ব প্রয়োজন, সেখানে এ ধরনের ব্যয় যৌক্তিক নয়।”

তিনি আরও বলেন, “ব্যয় সংকোচন এবং স্বচ্ছতা রক্ষার জন্য এ ধরনের প্রস্তাব খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি। সরকার ও জনগণের মধ্যে আস্থার সেতু তৈরি করতে হলে দায়িত্বশীলতা অপরিহার্য।”

বৈঠকে আরও যেসব বিষয় আলোচনায় আসে

এদিনের বৈঠকের এজেন্ডায় মোট তিনটি প্রস্তাব ছিল। এর মধ্যে দুটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। একটি প্রস্তাব অনুমোদন লাভ করে, আর ২৫টি গাড়ি কেনার প্রস্তাবটি বাতিল করে দেওয়া হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তুত আরেকটি প্রস্তাব নির্ধারিত তালিকায় থাকলেও তা বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়নি।

বিশ্লেষকদের মতামত

নীতিনির্ধারকদের এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই সময়োপযোগী এবং জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বলে মনে করছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয় অবশ্যই অগ্রাধিকারভিত্তিক হতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার যেমন নির্বাচন আয়োজন এবং সীমিত প্রশাসনিক কার্যক্রমে নিয়োজিত, তেমনি ব্যয়ের ক্ষেত্রেও তাদের উচিত যথাসম্ভব সংযমী থাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল হক বলেন, “এই সিদ্ধান্ত সরকার ও জনগণের মধ্যে বিশ্বাস বাড়াবে। এটি দেখায়, অস্থায়ী সরকার দায়িত্বশীল আচরণ করছে এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের বিরুদ্ধে একটি অবস্থান নিয়েছে।”

নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব বাতিলের সিদ্ধান্ত শুধু অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ নয়, বরং নৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে দায়িত্বশীল আচরণের প্রতিফলন। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার একটি বার্তা দিয়েছে—রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারে সংযম, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত