বাবাকে খুন, ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে আত্মসমর্পণ মেয়ের

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ০৮ ১৩:১৭:২৩
বাবাকে খুন, ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে আত্মসমর্পণ মেয়ের

সত্য নিউজ: ঢাকার সাভারে এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় বাবার হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার এক তরুণী নিজের বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হত্যার পর, জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ‘৯৯৯’-এ ফোন করে নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ওই তরুণী। ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্ত মেয়েকে আটক এবং বাবার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহতের নাম আব্দুস সাত্তার (৫৬)। তিনি নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার ভগা গ্রামের বাসিন্দা। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি মেয়েকে নিয়ে সাভার পৌর এলাকার মজিদপুরের কাঠালবাগান মহল্লায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক ইমরান হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার (৮ মে) ভোররাতে একজন নারী ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বলেন, “আমি আমার বাবাকে হত্যা করেছি। আমি আত্মসমর্পণ করতে চাই। আপনারা লাশ নিতে চলে আসুন।” ফোন পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়েটিকে (২৩) আটক করে এবং মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক তরুণী পুলিশকে জানায়, তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করতেন। ওই তরুণী আরও জানান, গত ২০২২ সালে নাটোরের সিংড়া থানায় বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছিলেন তিনি। মামলার পর আব্দুস সাত্তার দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন এবং সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হন।

ঘটনার রাতে মেয়েটি খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাবাকে অচেতন করেন। পরে ভোররাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপ মারেন, যা তার বাবার মৃত্যু নিশ্চিত করে।

সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুর কবির জানান, অভিযুক্ত তরুণীর অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

এ ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। অনেকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকেও আলোচনা করছেন।

বিশ্লেষণ ও প্রেক্ষাপট:
এই ঘটনা শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং সামাজিক কাঠামো, পারিবারিক নিরাপত্তা, এবং নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে। মেয়েটির অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তবে এটি দীর্ঘদিন ধরে চলা নির্যাতনের চরম পরিণতি। পাশাপাশি, এই ঘটনা আত্মপক্ষ সমর্থনের নামে বিচার বহির্ভূত পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়েও বিতর্ক উস্কে দিয়েছে।

পুলিশ ও প্রশাসনের করণীয়:
এই ঘটনায় পুলিশের নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে, আইনের আশ্রয় না নিয়ে নিজ হাতে বিচার নেয়া কতটা ন্যায়সঙ্গত, তা নিয়েও সমাজে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ