চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার

চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিনীদের হাতে জীবনের নতুন নকশা

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ৩১ ০৯:৫৩:৩৫
চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিনীদের হাতে জীবনের নতুন নকশা
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী ওয়ার্ডে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন অনেক নারী, যাঁরা একসময় অপরাধের দায়ে আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। তবে এখন তাঁরা অপরাধের সেই অধ্যায় পেছনে ফেলে জীবনের নতুন মানে খুঁজে পেয়েছেন সুই-সুতোর সূক্ষ্ম কারিগরিতে। খুনের মামলায় ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত লাকী আক্তার এখন নিজের সেই অপরাধী হাতেই সেলাই করছেন জীবনের নতুন গল্প। তাঁর বুননে ফুটে উঠছে নান্দনিক নকশিকাঁথা, যা বিক্রি হচ্ছে বাজারে, মিলছে আয়ের সুযোগও।

লাকীর মতো একই মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হাসিনা বেগমও প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা ধরে কাঁথা সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাঁদের সঙ্গে আছেন ইয়াছমিন আক্তার, রনি বেগম ও জান্নাতুল ফেরদৌস। বিচারাধীন বন্দিদের মধ্যে রুমি আক্তার, প্রিয়াংকা, মারুফা বেগম, নুরজাহান বেগম ও মহিমা মোল্লাও এই কাজে যুক্ত। কারাগারে সুতি কাপড়ে তাঁদের নিখুঁত বুনন দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

বর্তমানে চট্টগ্রাম কারাগারে নারী বন্দির সংখ্যা ১৬৫। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই সাজাপ্রাপ্ত। কারাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, এদের মধ্যে অন্তত ১২ জন নারী বন্দি নিয়মিত নকশিকাঁথা তৈরি করেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে এই সৃজনশীল কাজ। কাপড়, সুঁই-সুতা ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করে কারা কর্তৃপক্ষ। কাঁথা বিক্রি করে যে আয় হয়, তার একটি অংশ বন্দিদের ব্যক্তিগত হিসাবে জমা রাখা হয়।

কারা জেলার মাসুদুর রহমান জুয়েল জানান, বন্দিদের তৈরি করা ৩০টি নকশিকাঁথা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বিক্রি হয়েছে এবং ক্রেতারা এসবের প্রশংসা করেছেন। কারাবিধি অনুযায়ী এই কাজের মাধ্যমে সাজা রেওয়াতের সুবিধাও পাচ্ছেন তারা।

নারী ওয়ার্ডের নিচতলায় পাঁচজন বন্দি মিলে একটি কাঁথা তৈরি করেন, যাতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। প্রতিটি কাঁথার মাপ সাত ফুট প্রস্থ ও আট ফুট দৈর্ঘ্য। মাসে তিন থেকে চারটি কাঁথা তৈরি হয়। প্রতিটি কাঁথা বিক্রি হয় ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায়। ব্যয় বাদ দিয়ে মুনাফার এক-তৃতীয়াংশ বন্দিদের জন্য বরাদ্দ থাকে।

প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বিচারাধীন বন্দি মহিমা মোল্লা জানান, কারাগারে বসেই এখন মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় করছেন। এই টাকায় ক্যান্টিন থেকে খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, “বাড়িতে থাকতে মাঝে মাঝে জামা কাপড় সেলাই করতাম। এখানে এসে নকশিকাঁথা সেলাই শিখছি। প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। সময় ভালোভাবে কাটে, আয়ও হয়—ভালোই লাগছে।”

বন্দিজীবনের একঘেয়েমি কাটিয়ে আত্মমর্যাদায় ফেরার এই প্রয়াস এখন শুধুই অর্থ উপার্জনের নয়, বরং তাঁদের জীবনের এক ইতিবাচক পালাবদল—যা হয়তো ভবিষ্যতের জন্য নতুন দরজা খুলে দেবে।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ