জাতীয় পরিচয়পত্র চাই? ধাপে ধাপে সহজ আবেদন পদ্ধতি জেনে নিন

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৯ ১১:৩৫:০৭
জাতীয় পরিচয়পত্র চাই? ধাপে ধাপে সহজ আবেদন পদ্ধতি জেনে নিন

বাংলাদেশের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) শুধু একটি কাগজ নয় বরং এটি নাগরিক অধিকার, পরিচয় এবং নানা রকম সরকারি ও বেসরকারি সেবার ক্ষেত্রে প্রবেশদ্বার। এটি ব্যাংকিং, জমি রেজিস্ট্রেশন, চাকরি আবেদন, মোবাইল সিম নিবন্ধন থেকে শুরু করে পাসপোর্ট গ্রহণ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

কারা জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য যোগ্য?

জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার জন্য কয়েকটি মৌলিক শর্ত রয়েছে। প্রথমত, আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। দ্বিতীয়ত, তার বয়স অবশ্যই ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব হতে হবে, যা নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত জন্মতারিখ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। তৃতীয়ত, তিনি পূর্বে কখনও ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত না হয়ে থাকলে তবেই নতুন করে এনআইডির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আবেদন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ: অনলাইন ফরম পূরণ

প্রথমে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট (https://services.nidw.gov.bd) এ গিয়ে “নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করুন” অপশনে ক্লিক করে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এরপর ফরম-২ নামক ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। ফরম পূরণের সময় তথ্য ভুল দেওয়া হলে ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি হতে পারে, তাই সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। ফরম পূরণ শেষে তা ডাউনলোড করে দুই পৃষ্ঠায় প্রিন্ট নিতে হবে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র: যা সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক

ফরমের সঙ্গে ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ সংযুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া পিতামাতার এনআইডি ও প্রয়োজনে তাদের মৃত্যুসনদ, বিবাহিতদের ক্ষেত্রে কাবিননামা ও স্ত্রীর/স্বামীর এনআইডি, শিক্ষাগত সনদের ফটোকপি, নাগরিকত্ব সনদ, ঠিকানার প্রমাণপত্র (যেমন বাড়িভাড়া রসিদ, বিদ্যুৎ বিল), পাসপোর্টের কপি (প্রবাসীদের ক্ষেত্রে), এবং চাকরিজীবীদের জন্য সার্ভিস বা পেনশন বহির কপি দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব কাগজ সত্যায়ন করাও বাধ্যতামূলক।

শনাক্তকারী ও যাচাইকারীর স্বাক্ষর

ফরম-২-এ শনাক্তকারী হিসেবে নিকটাত্মীয় যেমন পিতা, মাতা বা ভাই/বোনের এনআইডি নম্বর ও স্বাক্ষর দিতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিশনার বা ইউনিয়ন সদস্যের স্বাক্ষর ও সিল লাগবে যাচাইকারী হিসেবে। এটি প্রমাণ করে যে, আবেদনকারীর দেওয়া তথ্য সঠিক।

বায়োমেট্রিক ধাপ: ছবি, আঙুলের ছাপ, আইরিশ স্ক্যান

উপযুক্ত ফরম ও কাগজপত্রসহ আবেদনকারীকে উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে যেতে হবে। সেখানে ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ এবং চোখের আইরিশ স্ক্যান নেওয়া হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হলে আবেদনকারীকে একটি প্রাপ্তিস্বীকার স্লিপ দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে তিনি পরবর্তীতে এনআইডি সংগ্রহ করতে পারবেন।

এনআইডি সংগ্রহ এবং ভার্চুয়াল সেবা

আবেদন অনুমোদনের পর নির্ধারিত তারিখে বা এসএমএস পাওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা যায়। তবে অনেক সময় এনআইডি ওয়ালেট অ্যাপ বা এনআইডিডব্লিউ সাইট থেকেও ভার্চুয়াল কপি ডাউনলোড করে ব্যবহারের সুযোগ থাকে, বিশেষ করে ই-নির্ভর সেবাগুলোর জন্য।

প্রবাসীদের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়া

প্রবাসী বাংলাদেশিরাও জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে পারেন। এজন্য তারা সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ হাইকমিশন বা দূতাবাসে আবেদন করতে পারেন। তবে প্রবাসীদের জন্য কিছু অতিরিক্ত কাগজপত্র এবং আলাদা প্রক্রিয়া রয়েছে, যা হাইকমিশনের গাইডলাইন অনুযায়ী সম্পন্ন করতে হয়।

সতর্কতা ও প্রতারণা এড়ানোর পরামর্শ

জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে কোনো দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীর শরণাপন্ন না হওয়াই উত্তম। নির্বাচন কমিশনের সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। প্রতারণা ও ভুয়া এনআইডি তৈরির সঙ্গে জড়িত থাকলে আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

তথ্য সংশোধন ও হেল্পলাইন সেবা

যদি এনআইডির তথ্য ভুল হয়, তাহলে নির্ধারিত ফরম ও কাগজপত্রের ভিত্তিতে সংশোধনের সুযোগ আছে। এ সংক্রান্ত সহায়তার জন্য নির্বাচন কমিশনের ১০৫ নম্বর হেল্পলাইনে ফোন করা যায়, অথবা ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ