জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রক্তপাত: শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৩ ০৬:৫৯:০২
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রক্তপাত: শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন

সত্য নিউজ:গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ছয় মাস ২৮ দিনের দীর্ঘ তদন্ত শেষে গতকাল সোমবার সকালে তদন্ত প্রতিবেদনটি চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে জমা দেন তদন্ত সংস্থার প্রধান আনসার উদ্দিন খান পাঠান।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ওই সময়কার সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান পরিকল্পনাকারী (মাস্টারমাইন্ড), নির্দেশদাতা (হুকুমদাতা) এবং সর্বোচ্চ দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি (সুপিরিয়র কমান্ডার)। তাঁর পাশাপাশি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকেও আসামি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে তাঁদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে 'সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি'সহ একাধিক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু ও অভিযোগসমূহ

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে উপস্থাপিত তথ্যপ্রমাণাদি, কল রেকর্ড, ভিডিও ফুটেজ, অডিও ক্লিপ, আহতদের শরীর থেকে উদ্ধার হওয়া গুলি, হেলিকপ্টার ও ড্রোনের উড্ডয়ন-অবতরণ রেকর্ড, এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে—গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক হামলা চালিয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা পাঁচটি প্রধান অভিযোগের মধ্যে দুটি বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয় সংবাদ সম্মেলনে:

উসকানি ও প্ররোচনার অভিযোগ — গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকার’ বলে আখ্যায়িত করে বাহিনীগুলোকে তাদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান চালাতে প্ররোচিত করেন। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়।

সরাসরি হত্যার নির্দেশ — হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসি এবং উন্নত মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। প্রতিবেদনে তাঁর একাধিক টেলিফোন আলাপ, যেখানে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে সংযুক্ত রয়েছে।

বাকি তিনটি অভিযোগ নির্দিষ্ট হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও পরিকল্পিত সহিংসতা সংশ্লিষ্ট ঘটনায় আনা হয়েছে বলে জানায় তদন্ত সংস্থা।

গণ-অভ্যুত্থানে গণহত্যা নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধ

চিফ প্রসিকিউটর স্পষ্ট করে বলেন, “যদিও দেশজুড়ে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, লাশ পোড়ানো, শিশু-নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটেছে, তবুও আন্তর্জাতিক সংজ্ঞা অনুযায়ী এগুলো গণহত্যা নয় বরং মানবতাবিরোধী অপরাধ।”

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের দমন করতে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যা এবং ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে আহত করা হয়। আহতদের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়, হাসপাতাল থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি, ময়নাতদন্তে বাধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি শেখ হাসিনা নিজে চিকিৎসকদের রোগীদের চিকিৎসা না দিতে নির্দেশ দেন বলেও উল্লেখ রয়েছে।

তদন্ত সংস্থা আরও দাবি করেছে, অপরাধের দায় আন্দোলনকারীদের ঘাড়ে চাপাতে সরকার নিজেদের লোক দিয়ে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় আগুন লাগানোর নির্দেশ দেয়। এসব নির্দেশনার টেলিফোন রেকর্ড তদন্তকারীদের হাতে রয়েছে বলে জানানো হয়।

পূর্ববর্তী ও চলমান মামলাসমূহ

এ মামলার বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ মানবতাবিরোধী মামলার তদন্ত চলছে:

গুম-খুনের অভিযোগ — আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় নির্ধারিত ২৪ জুন।

শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড — ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম কর্মীদের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় বাড়িয়ে ১২ আগস্ট করা হয়েছে।

একইসঙ্গে, গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ঢাকার চানখাঁরপুল ও উত্তরা এলাকায় সংঘটিত অপরাধের দুটি মামলায়ও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ নেতা এবং যুবলীগ নেতাসহ অনেকেই আসামি।

পরবর্তী পদক্ষেপ ও বিচারিক প্রক্রিয়া

চিফ প্রসিকিউটর জানান, তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে যদি অপরাধ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায়, তবে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন করা হবে। এটি ট্রাইব্যুনালে দাখিলের পর বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হবে, যা আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হতে পারে।

এই মামলাগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আইনি ইতিহাসে এক অনন্য নজির স্থাপন করতে পারে। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে এই ধরনের তদন্ত এবং সম্ভাব্য বিচার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নজর কাড়বে নিঃসন্দেহে। তবে এর চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করছে প্রমাণ ও বিচারিক প্রক্রিয়ার ওপর।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত