জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠক

ভোট হোক ডিসেম্বরেই’—২৩ দলের স্পষ্ট বার্তা ঐকমত্য কমিশনে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০৩ ০২:৫৬:১৬
ভোট হোক ডিসেম্বরেই’—২৩ দলের স্পষ্ট বার্তা ঐকমত্য কমিশনে

রাষ্ট্রীয় সংস্কারের রূপরেখা তৈরির উদ্দেশ্যে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ও তার রোডম্যাপ। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিলেও নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার সময়কাল নিয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান। কেউ চাইছে অবিলম্বে তারিখ ঘোষণা, আবার কেউ বলছে, ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার পরই নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।

সোমবার (২ জুন) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এটি ছিল দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী আলোচনা। আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, যার মাধ্যমে আগামী জুলাইয়ের মধ্যেই একটি সম্মিলিত ঐক্যমত ভিত্তিক “জুলাই সনদ” প্রণয়নের লক্ষ্য রয়েছে।

বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। আলোচনা শেষে সালাহউদ্দিন বলেন, "ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। যেসব সংস্কার দরকার, তা এক মাসের মধ্যেই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব। নির্বাচনের সময় পেছানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।" তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দলও ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন চায়।

জামায়াতে ইসলামির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের জানান, তাঁদের দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তবে তিনি বলেন, “ডিসেম্বর থেকে জুন সময়সীমা দিলেও মে–জুন আবহাওয়াগত কারণে উপযুক্ত নয়। রমজানও আছে। তাই ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা উচিত।”

অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, তাঁদের দল নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার পক্ষে। তাঁর ভাষায়, “১৬ বছর অপেক্ষা করেছি, ১০ মাস অপেক্ষা করেছি, আরও দুই মাস অপেক্ষা করে একটি ঐকমত্যভিত্তিক শাসন কাঠামোর রূপরেখা দেখতে চাই। তারপর নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হোক।”

নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা কমে যাওয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা ও কমিশন পুনর্গঠন জরুরি। আইন সংস্কার করে কমিশনের কাঠামো বদলাতে হবে।”

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “সরকার যখন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন বলছে, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ডিসেম্বরই বাস্তবসম্মত। রোডম্যাপ, বিচার সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সীমা একসঙ্গে ঘোষণা করা জরুরি।”

বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন সেলিম জানান, আলোচনায় অংশ নেওয়া প্রায় ৩২টি দলের মধ্যে ২৬টি দল বক্তব্য রেখেছে এবং তাদের মধ্যে ২৩টি দল ডিসেম্বরেই নির্বাচন চেয়েছে। একাধিক দল জানুয়ারির পরে নির্বাচন চায়নি, কারণ তখন আবহাওয়াগত ও রাজনৈতিকভাবে অনুকূলতা থাকবে না।

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা ও সংস্কার ভিত্তিক একটি সুন্দর "জুলাই সনদ" তৈরি করা একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। “আমরা যেন এই সুযোগ হাতছাড়া না করি,”—এমন মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি সমঝোতা ভিত্তিক অগ্রগতির আহ্বান জানান।

কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে গঠিত পাঁচটি সংস্কার কমিশনের (সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন) প্রস্তাব ভিত্তিতে এই আলোচনার সূচনা হয়। প্রথম পর্বে ৩৩টি দলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়, যার ভিত্তিতেই দ্বিতীয় পর্বের সংলাপ শুরু হলো।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে সময় ও কাঠামো নিয়ে দ্বিমত। তবে বাস্তবভিত্তিক, গ্রহণযোগ্য ও সম্মিলিত ঐকমত্যের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত