ট্রাম্পের ‘শুল্কবাঁধ’এ বলিউডের অস্তিত্ব সংকট!

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৪ ১১:০২:১৪
ট্রাম্পের ‘শুল্কবাঁধ’এ বলিউডের অস্তিত্ব সংকট!

সত্য নিউজ: ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প এক বহুমাত্রিক সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। দেশীয় বাজারে একের পর এক বক্স অফিস ব্যর্থতা, প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের শূন্যতা এবং সর্বশেষ, যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তাবিত ১০০ শতাংশ আমদানি শুল্ক সব মিলিয়ে বলিউডের জন্য এক অস্বস্তিকর ও অনিশ্চিত সময় শুরু হয়েছে।

বিশ্ব অডিও ভিজ্যুয়াল এন্টারটেইনমেন্ট সামিটের সমাপনী দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শুল্ক পরিকল্পনার ঘোষণা ভারতীয় চলচ্চিত্র অঙ্গনে উদ্বেগের ঝড় তোলে। সাম্প্রতিক সময়ে বলিউড তার আন্তর্জাতিক বাজার বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে দৃঢ় অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। 'কাল্কি ২৮৯৮ এ.ডি' যেমন মার্কিন মাটিতে ১৮.৩ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, ‘জওয়ান’ এনেছে ১৫.২ মিলিয়ন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এই সাফল্য দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

চলচ্চিত্র নির্মাতা বিবেক অগ্নিহোত্রি সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছেন, “এই উদ্ভট সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে, ভারতের দুর্বল চলচ্চিত্র শিল্প একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাবে।” পরিবেশক অনিল ক্ষেত্রপাল আশঙ্কা করছেন, মার্কিন বাজারে প্রবেশের খরচ বাড়লে টিকিটের দাম বৃদ্ধি পাবে, যার ফলে কমে যাবে দর্শক সংখ্যা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা। পাশাপাশি ইন্দো-মার্কিন চলচ্চিত্র সহযোগিতাও চরম চাপে পড়তে পারে।

বলিউড ইতোমধ্যেই অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বড় বাজেট ও তারকা নির্ভরতা যেখানে একসময় সাফল্যের নিশ্চয়তা ছিল, বর্তমানে তা আর আগের মতো কাজ করছে না। প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা বলছেন, দর্শকদের এমন অনীহা তারা অতীতে দেখেননি। অক্ষয় কুমারের মতো সুপারস্টারের টানা আটটি ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়া—এটাই এখন বাস্তবতা।

এর বিপরীতে দর্শকের অভ্যাসে এসেছে নাটকীয় পরিবর্তন। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, ইরোস নাও দর্শকের নতুন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। করোনাকালের পর এই পরিবর্তন আরও গভীর হয়েছে। সহজলভ্যতা, আন্তর্জাতিক মানের কনটেন্ট এবং ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী উপভোগের সুযোগ প্রেক্ষাগৃহকে পিছনে ফেলেছে।

এদিকে, ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প কেবল বিনোদন জগতের একটি শাখা নয়; এটি দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এমপিএ ও ডেলয়েট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চলচ্চিত্র খাতের আয় ১.৫ ট্রিলিয়ন রুপি অতিক্রম করেছে এবং প্রায় ২.৭ লাখ মানুষ সরাসরি এবং ৭ লাখেরও বেশি মানুষ পরোক্ষভাবে এই শিল্পে কর্মরত।

তবুও মূল সংকট রয়ে গেছে দর্শক টানার ক্ষেত্রে। অভিনেতা ও প্রযোজক আমির খান দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন, যেখানে ভারতে ১৪০ কোটির জনসংখ্যার বিপরীতে মাত্র ৯ হাজার প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার স্ক্রিন। এই বিশাল ব্যবধানের ফলে দেশের জনগণের মধ্যে সিনেমা হলে গিয়ে চলচ্চিত্র উপভোগের অভ্যাস গড়ে ওঠেনি বা ধরে রাখা যায়নি।

চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ইন্দ্রনীল লাহিড়ীর মতে, মূল সমস্যা কেবল অবকাঠামোতে সীমাবদ্ধ নয় সিনেমার বিষয়বস্তু এবং নির্মাণমানেও বিপর্যয় ঘটেছে। “আজকের দর্শক আন্তর্জাতিক মানের গল্প এবং নির্মাণ চায়, যা আমাদের সিনেমা হারিয়ে ফেলেছে,” মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর মতে, এখনই সময় গল্প বলার ধরণ ও নির্মাণশৈলীতে মৌলিক পরিবর্তন আনার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বলিউড যদি টিকে থাকতে চায়, তবে বিদেশি বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় দর্শককে পুনরায় হলে ফেরানোই হবে সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি। একবিংশ শতাব্দীর দ্রুত পরিবর্তনশীল বিনোদন খাতে বলিউডের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন আত্মসমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সৃজনশীল সাহস।

সঙ্কট গভীর, তবে পথ একেবারে বন্ধ নয়। প্রশ্ন এখন একটাই বলিউড কি নিজের রূপান্তরকে সাহসের সঙ্গে গ্রহণ করতে পারবে?

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত