সচিবালয়ে অস্থিরতা চরমে:সোয়াট মোতায়েন

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৭ ১৪:২২:৩২
সচিবালয়ে অস্থিরতা চরমে:সোয়াট মোতায়েন

সরকারি চাকরি আইনে ‘নিয়ন্ত্রণমূলক ও শাস্তিমূলক’ সংশোধনী এনে জারি করা অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সচিবালয়ে সোমবার সকাল থেকে এক চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অভূতপূর্ব নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ভেতরে চলছে শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিক্ষোভ, আর বাইরে প্রধান ফটকে মোতায়েন রয়েছে স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিকস (সোয়াট) বাহিনী।সচিবালয়ে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি গণমাধ্যমকর্মীরাও দুপুর পর্যন্ত প্রবেশের অনুমতি পাননি।

কর্মচারীদের মিছিল, অবস্থান, ক্ষোভ

সকাল থেকেই সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের কর্মচারীরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মিছিল করে নতুন ভবনের নিচে অবস্থান নেন। আন্দোলনকারীদের দাবি—সম্প্রতি জারি হওয়া সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ একটি ‘কালো আইন’, যা কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার হরণ করছে।

এ অধ্যাদেশে ‘৩৭ক’ ধারা যোগ করে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে মাত্র দুটি সাত দিনের নোটিস দিয়ে কোনো কর্মচারীকে চাকরি থেকে সরিয়ে দিতে পারবে। এতে “অনানুগত্য”, “কর্মবিরতি উস্কানো”, কিংবা “দায়িত্ব পালনে বাধা” দেওয়ার মতো অভিযোগকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শাস্তির তালিকায় আছে চাকরি থেকে অপসারণ, পদাবনতি কিংবা বরখাস্ত।

বাইরের চাপ, ভেতরের সংঘাত

বেলা ১১টার দিকে বিএনপি-সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার সচিবালয়ে প্রবেশ করতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার একটা ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট পথে হাঁটছে। এমন আইন এমনকি হাসিনার আমলেও ছিল না।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “আওয়ামী লীগপন্থী আমলারা প্রশাসনের শীর্ষে বসে থেকেই সরকারকে ব্যর্থ করছে, এই আইন তার প্রমাণ।”

সচিবালয়ের বাইরে নতুন ফ্রন্ট: ‘জুলাই মঞ্চ’-এর ঘেরাও

এদিকে, সচিবালয়ের উল্টো পাশে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সামনের ফুটপাথে মধ্যরাত থেকে অবস্থান নিয়েছে ‘জুলাই মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠন। তারা ‘ফ্যাসিবাদ উৎখাতযাত্রা’ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এই মঞ্চ প্রশাসনের ৪৪ জন আমলার ছবি ও নাম প্রকাশ করে তাদের অপসারণের দাবি জানিয়েছে।

সংগঠনটির মুখপাত্র আরিফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “এটা হঠাৎ কোনো কর্মসূচি নয়। আমরা ফেব্রুয়ারি থেকেই ফ্যাসিবাদী আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকবো।”

সরকারের অবস্থান

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “সরকার প্রয়োজন বুঝে আইন করছে। এটি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যই।”

তবে আন্দোলনকারীদের নেতা মোজাহিদুল ইসলাম দাবি করেন, “আমাদের অন্ধকারে রেখে এই অধ্যাদেশ প্রস্তুত করা হয়েছে। উপদেষ্টারা আশ্বাস দিলেও শেষমেষ তারা কথা রাখেননি।”

আন্দোলন অব্যাহত, উত্তেজনা বাড়ছে

সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন জানিয়েছে, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি এবং সরকারের অনমনীয় অবস্থান আন্দোলনকে আরও বিস্তৃত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ক্ষোভ ও ভীতি নতুন করে প্রশাসনিক অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে—যার পরিণতি কোথায় গিয়ে ঠেকে, তা নির্ভর করছে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত