ঢাকা সিটি অচলের পথে? সময় বেঁধে দিলেন ইশরাকপন্থীরা

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২০ ১৮:৪৫:৩৯
ঢাকা সিটি অচলের পথে? সময় বেঁধে দিলেন ইশরাকপন্থীরা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব হস্তান্তরের দাবিতে জোরালো হচ্ছে আন্দোলন। টানা ষষ্ঠ দিনের মতো নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তার সমর্থকরা।

বিক্ষোভকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বুধবার (২১ মে) সকাল ১০টার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ইশরাককে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব হস্তান্তরের ঘোষণা না এলে 'ঢাকা অচল' কর্মসূচিতে যাবে তারা। সাবেক সচিব মশিউর রহমান মঙ্গলবার বিকেলে বিক্ষোভস্থল থেকে বলেন, “ঢাকা শহরের নাগরিকদের হয়ে আমরা এই কর্মসূচি দিয়েছি। সময়সীমা বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত। এরপর যদি সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে ঢাকার প্রতিটি সেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে।”

সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদেরও একাত্মতা

এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারী ইউনিয়ন। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে নগরবাসীর সব ধরনের নাগরিকসেবা—বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতা, ময়লা পরিবহন, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য জরুরি সেবাও বন্ধ করে দেওয়া হবে।

উপস্থিত ছিলেন স্ক্যাভেঞ্জার অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, পরিবহন চালক ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন, বিদ্যুৎ কর্মচারী সমাজকল্যাণ সমিতি এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমাজ কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দ।তারা বলেন, “আমরা ঢাকাবাসীর হয়ে কথা বলছি। যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের রায় বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে নাগরিক সেবা দেওয়ার নৈতিক ভিত্তি থাকে না।”

নগর ভবন কার্যত অচল, জনদুর্ভোগ চরমে

অবস্থান কর্মসূচির কারণে নগর ভবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। দাপ্তরিক কাজ বন্ধ, নাগরিকরা সেবা পাচ্ছেন না। গুলিস্তান, বঙ্গবাজার ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজট ও জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। অবস্থানস্থলে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে জাতীয় সংগীত ও দেশাত্মবোধক গান বাজিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।

আইনি জটিলতা ও প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব

২০২০ সালের নির্বাচনে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পর ২০২৫ সালের মার্চে একটি নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে এবং এপ্রিলের শেষ দিকে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তবে এখনও পর্যন্ত তাকে শপথ গ্রহণ করানো হয়নি। এই প্রক্রিয়াগত বিলম্বকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করছে আন্দোলনকারীরা।

অন্যদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, “মেয়রের শপথ আটকে আছে ১০টি জটিলতার কারণে। যথাযথ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে গায়ের জোরে দায়িত্ব আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।”

একইদিনে নিজের ফেসবুক পোস্টে ইশরাক হোসেন লেখেন, “এই শপথ আদায়ের লড়াই শুধুমাত্র মেয়রের চেয়ারে বসা নয়; এটি একটি দল নিরপেক্ষ প্রশাসনের ভেতরে থাকা ক্ষমতালোভীদের মুখোশ উন্মোচনের লড়াই।” তিনি আরও বলেন, “যারা নিরপেক্ষতার চেহারা ধারণ করে একটি দলের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন, তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।”

ঢাকা দক্ষিণের প্রশাসনিক অচলাবস্থা এখন রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। একদিকে আইনি জটিলতা ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার ধীরগতি, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা সংকট পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অবিলম্বে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংকট সমাধান না হলে এই অচলাবস্থা আরও দীর্ঘায়িত হবে, যার প্রভাব পড়বে সাধারণ নাগরিকদের ওপর এবং শহরের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে।

সরকার কি এই চাপের মুখে সমঝোতার পথ খুঁজবে, নাকি অবস্থান আরও কঠোর হবে—এখন নজর সেদিকেই।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত