ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্ট হত্যার বিচার শুরু

২০২৫ জুলাই ২৮ ১১:০৫:২২
ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্ট হত্যার বিচার শুরু
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থনের সময় সংঘটিত তিনটি পৃথক ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ১৭ জন আসামিকে সোমবার (২৮ জুলাই) হাজির করা হয়েছে। এই মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা, আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা করে মরদেহ পোড়ানো এবং লক্ষ্মীপুরে পাঁচজনকে হত্যার অভিযোগ।

রংপুরের আবু সাঈদ হত্যা মামলা

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে এবং ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তদন্তে সাবেক এসআই আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগকর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই চারজন ইতিপূর্বে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার ছিলেন, যাদের সোমবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম ও সহকারী প্রসিকিউটররা।

লক্ষ্মীপুরে পাঁচজনকে হত্যার মামলা

একই ধরনের নৃশংসতা লক্ষ্মীপুরেও সংঘটিত হয়। ১৬ জুলাই আন্দোলনের সময় সেখানে পাঁচজনকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ২৮ জুলাই তিনজন আসামিকে হাজিরের নির্দেশ দেন। তারা হলেন- লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, দিঘলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন জাবেদ এবং জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন আলম। এই মামলায় মানবতাবিরোধী অপরাধের ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা করে মরদেহ পোড়ানোর মামলা

আশুলিয়ায় সংঘটিত ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডটি আরও নৃশংস। গত ২ জুলাই ছয়জন আন্দোলনকারীকে হত্যা করে তাদের মরদেহ পোড়ানোর অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মোট ১৬ জনকে আসামি করা হয়। আদালত ইতোমধ্যে সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ আট পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। পুলিশের বিভিন্ন স্তরের সাবেক কর্মকর্তা, ডিবি এবং থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাতজনকে সোমবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এই মামলার অভিযোগপত্রে ১৭৩ পৃষ্ঠায় ঘটনার বর্ণনা, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি এবং ডিজিটাল প্রমাণ উপস্থাপন করেছে প্রসিকিউশন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক প্যানেল মামলাটি আমলে নিয়েছে।

সমন্বিত বিচারিক অগ্রগতি

এই তিনটি মামলাই সরকারবিরোধী গণআন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সহিংস প্রতিক্রিয়া, হত্যা এবং নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছে। প্রতিটি ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রম ত্বরান্বিত করছে, যাতে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হয় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ