ভারত থেকে শত শত মুসলিমকে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে বিজেপি সরকার!

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৪ ১১:৩০:১১
ভারত থেকে শত শত মুসলিমকে বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে বিজেপি সরকার!
ছবি: সংগৃহীত

বিনা প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে ভারতীয় বাঙালি মুসলিমদের, দাবি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসরত স্থানীয় বাঙালি মুসলিমদের ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বুধবার (২৩ জুলাই) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, এসব মানুষদের অনেকেই ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর প্রকৃত নাগরিক, অথচ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই তাদের জোরপূর্বক সীমান্ত পেরিয়ে পাঠানো হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের মে মাস থেকে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধের নামে স্থানীয় বাঙালি মুসলিমদের আটক ও পুশ-ইনের অভিযান জোরদার করেছে। এই প্রক্রিয়ায় নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কোনো সুযোগ না দিয়েই মানুষদের সীমান্তে পাঠানো হচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেন, "ভারতীয় মুসলিমদের নির্বিচারে বহিষ্কার করে বৈষম্যের পরিবেশ তৈরি করছে বিজেপি সরকার।" তিনি আরও বলেন, "কর্তৃপক্ষের দাবি থাকলেও, তারা আইনি প্রক্রিয়া, সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুসরণ করছে না।"

প্রতিবেদনে জুন মাসে ১৮ জন ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হয়, যাদের মধ্যে রয়েছেন বহিষ্কৃত ব্যক্তি, তাদের পরিবার এবং যেসব ব্যক্তি পরে আবার ভারতে ফিরে এসেছেন। তারা জানান, সীমান্তে পাঠানোর সময় তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে, মারধর করা হয়েছে এবং বন্দুকের ভয় দেখিয়ে জোর করে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়েছে।

আসাম রাজ্যের একজন প্রাক্তন স্কুলশিক্ষক খাইরুল ইসলাম জানান, ২৬ মে বিএসএফ সদস্যরা তার হাত বেঁধে ও মুখ চেপে বাংলাদেশে পাঠায়। তিনি বলেন, “আমি ঢুকতে না চাইলে আমাকে মারধর করা হয় এবং শূন্যে রাবার বুলেট ছোড়া হয়।” দুই সপ্তাহ পর তিনি নিজে ফের ভারতে ফিরে আসতে পেরেছেন।

এইচআরডব্লিউ আরও জানায়, ৭ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ভারত থেকে ১,৫০০ জনের বেশি মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশুকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছে। এসব প্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত আছে।

বিজেপি শাসিত আসাম, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, ওডিশা ও রাজস্থানে মূলত দরিদ্র মুসলিম শ্রমিকদের আটক করে সীমান্তরক্ষীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। আটক ব্যক্তিদের অনেকেই নিজেদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম হলেও, তাদের পুশ-ইন ঠেকাতে পারেননি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি, জম্মু-কাশ্মীরে একটি হামলার পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে এই ধরপাকড় আরও জোরালো হয়। আটক ব্যক্তিদের ফোন ও কাগজপত্র জব্দ করা হয়, ফলে তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজ্যগুলোকে অবৈধ অভিবাসী শনাক্ত করতে ৩০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয় এবং ‘হোল্ডিং সেন্টার’ তৈরির নির্দেশ দেয়। এরপরই বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি মুসলিমদের আটক শুরু হয়।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৮ মে ভারতকে পাঠানো চিঠিতে জানায়, তারা শুধুমাত্র নিশ্চিত বাংলাদেশি নাগরিকদেরই যথাযথ প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, এই ধরণের বহিষ্কার আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। তারা বলেছে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে, আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে এবং নিরাপদ আশ্রয় ও চিকিৎসা সুবিধা দিতে হবে, বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য।

সংস্থাটির মতে, ভারতের অভ্যন্তরীণ নীতিতে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যের প্রবণতা উদ্বেগজনক। পিয়ারসন বলেন, "এই পদক্ষেপ শুধু অভিবাসন রোধের চেষ্টা নয়, এটি নিপীড়িতদের আশ্রয় দেওয়ার ভারতের ঐতিহাসিক নীতির বিরুদ্ধেও যাচ্ছে।"

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ